সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলায় একটি মসজিদে জুমার নামাজের বয়ানে জামায়াতে ইসলামীর এক নেতার ‘উসকানিমূলক’ বক্তব্যের প্রতিবাদ করায় শিবিরের কর্মীরা স্থানীয় আওয়ামী লীগের এক নেতাকে মারধর করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। শুক্রবার উপজেলার গোবিন্দগঞ্জ নতুনবাজার মসজিদে এ ঘটনা ঘটে। তবে বিষয়টি আলোচনায় আসে সোমবার উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান তার ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেওয়ার পর। এ ঘটনার দুটি ভিডিও ক্লিপও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।

গতকাল বিকালে ছাতক থানার ওসি মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘গোবিন্দগঞ্জ ফজলিয়া ফাজিল মাদরাসার অধ্যক্ষ ও নতুনবাজার জামে মসজিদের খতিব আবদুস সালাম মাদানির বক্তব্যের প্রতিবাদ করেছিলেন স্থানীয় কাউসার আহমেদ। তারপর তাকে মারধর করা হয়েছে বলে তিনি পুলিশকে মৌখিকভাবে জানিয়েছেন।’


ছাতক উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. ফয়জুর রহমান বলেন, ‘আমাকে অনেকে ফোন করে মসজিদের বয়ানে সাম্প্রদায়িক, উসকানিমূলক বক্তব্যের বিষয়ে অবগত করেছেন কাউসার। জামায়াত নেতা আবদুস সালাম মাদানির বক্তব্যের প্রতিবাদ করায় তার অনুসারীরা তার সামনেই ওই কাউসারকে পিটিয়েছে। তিনি হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন।’

সুনামগঞ্জ-২ (ছাতক-দোয়ারাবাজার) আসনের সংসদ সদস্য মুহিবুর রহমান মানিক সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি বিষয়টি জানার পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ব্যবস্থা নিতে বলেছি।’

আহত কাউসার আহমেদ গোবিন্দগঞ্জ কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এবং গোবিন্দগঞ্জ-সৈদেরগাঁও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। তিনি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিয়ে গোবিন্দগঞ্জের বাড়িতে ফিরেছেন।

গতকাল বিকালে তিনি জানান, ‘আমি অসুস্থ ছিলাম। মৌখিকভাবে থানাসহ সবাইকে বিষয়টি জানিয়েছিলাম। আমি বাড়ি ফিরেছি। নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে আছি। এখন থানায় মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছি।’

ঘটনার বর্ণনা দিয়ে আওয়ামী লীগের এই নেতা বলেন, ‘জামায়াতের কর্মপরিষদের সদস্য আবদুস সালাম মাদানি মসজিদের খতিব হিসেবে প্রতি শুক্রবার বয়ানে ধর্মীয় উসকানি, অপপ্রচার ও সাম্প্রদায়িক কথাবার্তা বলে থাকেন। গোবিন্দগঞ্জ জামায়াতের ঘাঁটি হওয়ায় তার এবং তার অনুসারীদের বিরুদ্ধে কেউ সাহস করে কথা বলে না। গত শুক্রবার আবদুস সালাম মাদানি জুমার নামাজের আগে মিম্বরে দাঁড়িয়ে বয়ান করছিলেন। তিনি আওয়ামী লীগ সরকারের সমালোচনা করতে থাকেন। একপর্যায়ে সাম্প্রদায়িক ও উসকানিমূলক কথাবার্তা বলেন।’

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে জামায়াতে ইসলামীর কর্মপরিষদের সদস্য আবদুস সালাম মাদানি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি ২৮ বছর ধরে মসজিদে বয়ান করছি। কেউ আমার দিকে চোখ তুলে কথা বলেনি। আমি গত শুক্রবার আল্লামা ইকবালের নামের হল পরিবর্তন করে সূর্য সেনের নামে নামকরণ করার উদাহরণ দেওয়ায় আমার দিকে চোখ তুলে বেয়াদবি করে কাউসার। পরে মুসল্লিরা তাকে মারধর করেছে। যারা হামলা করেছে তারা জামায়াত-শিবিরের কেউ না।’

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, আবদুস সালাম মাদানি সুনামগঞ্জ-৫ আসন থেকে জামায়াতে ইসলামীর প্রতীক দাঁড়িপাল্লা নিয়ে নির্বাচন করে পরাজিত হয়েছিলেন। তিনি বেশ কয়েকবার বিভিন্ন মামলায় কারাভোগ করেছেন। ২০১৯ সালের ২৬ এপ্রিল যৌন হয়রানির বিচার না করায় তার মাদরাসার এক ছাত্রীর হাতে লাঞ্ছিতও হয়েছিলেন। পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবেদা আফসারি তাকে ডেকে নিয়ে তিরস্কার করেছিলেন।

সিলেটভিউ২৪ডটকম/ডেস্ক