সমাজ বিশ্লেষকরা বলে থাকেন- ‘মননশীল সমাজ গঠনে দেশে গণগ্রন্থাগারের ভূমিকা অগ্রগণ্য।’ কিন্তু এর জন্য গণগ্রন্থাগার থাকতে হবে পাঠকদের পদচারণায় মুখর। তবে প্রযুক্তির উৎকর্ষতার এই সময়ে গণগ্রন্থাগারের প্রতি আশঙ্কাজনক হারে কমেছে মানুষের টান। প্রযুক্তি কেড়ে নিয়েছে এই ‘শুদ্ধিভবনগুলোর’ পাঠক সমাগম। আর এরই জলন্ত উদারণ ‘সিলেট বিভাগীয় সরকারি গণগ্রন্থাগার।’

‘পড়িলে বই আলোকিত হই, না পড়িলে বই অন্ধকারে রই’ স্লোগান বুকে ধরে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে সরকারি এই গণগ্রন্থাগারটি। কিন্তু সুনসান। ২০০৫ সালের ২ ডিসেম্বর সিলেট জেলা স্টেডিয়ামের পূর্বগেইটে চারতলা বিশিষ্ট দৃষ্টিনন্দন ভবনে নতুন আঙ্গিকে যাত্রা শুরু হয় এই গ্রন্থাগারের কার্যক্রম। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের অধীনে দেশের ৭১টি সরকারি গণগ্রন্থাগারের মধ্যে এটি অন্যতম। বর্তমানে এই গ্রন্থাগারের তিনটি পাঠকক্ষে আড়াই শ’ আসন রয়েছে পাঠকের জন্য। আছে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক বই নিয়ে বঙ্গবন্ধু কর্ণার ও শেখ রাসেল কর্ণার। এছাড়াও রয়েছে ইংলিশ ল্যাংগুয়েজ কর্ণার। বৃহস্পতি ও শুক্রবার ছাড়া প্রতিদিন সকাল নয়টা থেকে বিকেল চারটা পর্যন্ত পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত থাকে ‘সিলেট বিভাগীয় গণগ্রন্থাগার’। সেখানে পরিপাটিভাবে সাজানো বই, পড়ার জন্য রয়েছে মনোরম পরিবেশ; তবুও পাঠক টানতে পারছে না গণগ্রন্থাগারটি।


সংশ্লিষ্টরা জানান, বর্তমানে এ গ্রন্থাগারের সদস্য আছেন ১০৭ জন। তবে তাদের বেশিরভাগই অনিয়মিত। ৮৮ হাজার ৬২৬টি বই থাকলেও এ গ্রন্থাগারের টেবিলগুলো অনেকটাই খালি পড়ে থাকে, আসনে না পাঠক।

পাঠকের মতো জনবলেরও সংকট রয়েছে এ গ্রন্থাগারে। ২৩টি পদের মধ্যে ১৫টি পদই শূন্য বলে জানালেন গ্রন্থাগারটির প্রিন্সিপাল লাইব্রেরিয়ান ও উপ-পরিচালক দিলীপ কুমার সাহা। জানালেন- বর্তমানে ইন্টারনেট সংযোগও নেই এখানে।

তিনি বলেন- সবার হাতে স্মার্ট মোবাইলফোন ও ইন্টারনেট। তাই এখন আর কেউ বই পড়ার জন্য লাইব্রেরিতে আসতে চায় না। তারপরও গ্রন্থাগারের সদস্য সংখ্যা বাড়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।

গ্রন্থাগারটি ঘুরে দেখা যায়, মোবাইল অপারেটর কোম্পানি রবির দেওয়া ফ্রি ইন্টারনেট ব্রাউজিং কক্ষে পুরনো ধাচের তিনটি কম্পিউটারের মধ্যে দুটি সচল থাকলেও নেই ইন্টারনেট সংযোগ। 

দিলীপ কুমার সাহা বলেন, ফ্রি ইন্টারনেট ব্রাউজিং সেবার জন্য নির্দিষ্ট মেয়াদে রবির সঙ্গে চুক্তি ছিল। মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় ইন্টারনেট সংযোগটি এখন চালু নেই। তবে সংযোগটি চালু করে দিতে রবিকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।

সূত্র বলছে- ১৯৮৩ সালে জেলা পর্যায়ে পূর্ব থেকে প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ পরিষদকে জেলা সরকারি গণগ্রন্থাগার নামকরণ করে প্রতিষ্ঠিত হয় গণগ্রন্থাগার অধিদপ্তর। এই অধিদপ্তরের লক্ষ্য ছিলো- বিজ্ঞান ও আধুনিক মনস্ক আলোকিত সমাজ গঠন। কিন্তু বাস্তবে নেই পাঠক সৃষ্টির কোনো বিশেষ উদ্যোগ।

এ বিষয়ে দিলীপ কুমার সাহা জানান-, গ্রন্থাগারের পাঠক ও সদস্য বাড়ানোর চেষ্টা করছেন তারা। কুইজ প্রতিযোগিতা এবং বিভিন্ন জাতীয় দিবসে রচনা ও চিত্রাংকন প্রতিযোগিতা আয়োজন করা হচ্ছে, যাতে গ্রন্থাগারের প্রতি শিক্ষার্থীদের আগ্রহ বাড়ে।

এদিকে শিক্ষার্থীরা বলছেন- শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছুটি-ই হয় বিকেল ৪টায়। ছুটির পর যাওয়ার সুযোগ রয়েছে গণগ্রন্থাগারে। কিন্তু এ সময় তো ব্ন্ধই হয়ে যায় এটি। তাই অন্তত রাত ৮টা পর্যন্ত ‘সিলেট বিভাগীয় সরকারি গণগ্রন্থাগার’ খুলে রাখার দাবি তাদের। 

উল্লেখ্য, ৫ ফেব্রুয়ারি জাতীয় গ্রন্থাগার দিবস। এবারে দিবসটির প্রতিপাদ্য ‘স্মার্ট গ্রন্থাগার, স্মার্ট বাংলাদেশ’। জনগণকে গ্রন্থাগারমুখি করা, পাঠাভ্যাস বৃদ্ধি এবং মননশীল সমাজ গঠনে এবং জনগণের বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে লাইব্রেরির ভূমিকা দৃঢ় করতে জাতীয় এই দিবসটি পালিত হয়ে আসছে।


সিলেটভিউ২৪ডটকম / ডালিম