সিলেট বইমেলার উদ্বোধন হলো রোববার বিকেলে। এরপরই বইপ্রেমী ও সাধারণ দর্শকদের ভিড় ছিল লক্ষ্যণীয়। পাঠকেরা স্টল ঘুরে পছন্দের বই কিনেছেন। জটলা বেঁধে লেখকেরা জমিয়েছেন আড্ডা। উপচে পড়া ভিড় আর সাংস্কৃতিক আয়োজনে মুখর ছিল বইমেলার প্রথম দিন।

 


নগরের চৌহাট্টা এলাকার সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বেলা সাড়ে চারটায় প্রথম আলো বন্ধুসভা সিলেটের উদ্যোগে ও সিটি করপোরেশনের সহযোগিতায় অষ্টমবারের মতো আয়োজিত বইমেলা শুরু হয় জাতীয় সংগীতের মধ্য দিয়ে।

পরে মেলার উদ্বোধন করেন সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। এ সময় প্রধান আলোচকের বক্তব্য দেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কবি শামীম রেজা। এ পর্ব স ালন করেন প্রথম আলো সিলেটের নিজস্ব প্রতিবেদক সুমনকুমার দাশ।

উদ্বোধনী পর্বে অতিথি হিসেবে মে  ছিলেন গল্পকার জামান মাহবুব, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট সিলেটের সভাপতি আমিনুল ইসলাম চৌধুরী, উদীচী সিলেটের সভাপতি এনায়েত হোসেন মানিক, ছড়াকার বিধূভূষণ ভট্টাচার্য, নাট্যব্যক্তিত্ব নিরঞ্জন দে ও শামসুল বাসিত শেরো, সিলেট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সাবেক পরিচালক মুকির হোসেন চৌধুরী, আইনজীবী বিজয় কৃষ্ণ বিশ্বাস, সাংবাদিক মঈন উদ্দিন, সম্মিলিত নাট্য পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি উজ্জ্বল দাস, এসিড সন্ত্রাস নিমূর্ল কমিটির সাধারণ সম্পাদক জুরেজ আব্দুল্লাহ, সিলেট সদর উপজেলা মাধ্যমিক কর্মকর্তা অভিজিৎ চন্দ্র পাল, কবি প্রণবকান্তি দেব ও আয়েশা মুন্নী।

 

উদ্বোধকের বক্তৃতায় মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, পাঠাভ্যাস বাড়াতে প্রথম আলো বন্ধুসভার আয়োজিত বইমেলা গত আট বছর ধরে সিলেটে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। আগামীতে আরও বড় পরিসরে নগরের সুরমা নদীর পাড়ে এ বইমেলা আয়োজনের উদ্যোগ নেওয়া হবে।

অন্যদিকে প্রধান আলোচকের বক্তৃতায় শামীম রেজা পাঠক তৈরি করতে সিলেট নগরের পাড়া-মহল্লায় বইমেলা আয়োজনের বিষয়ে উদ্যোগী হওয়ার জন্য সিটি কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানান।

উদ্বোধনী পর্বের পর বিশিষ্ট কবি ও গবেষক মোস্তাক আহমাদ দীনকে ‘সাহিত্য সম্মাননা পদক ২০২৩’ প্রদান করা হয়। এ সময় পুরস্কৃত লেখকের হাতে সম্মাননা-স্মারক ও নগদ ১০ হাজার টাকা তুলে দেন অতিথিরা।

 

অনুভূতি প্রকাশ করে মোস্তাক আহমাদ দীন বলেন, পুরস্কার একজন লেখককে দায়িত্বশীল করে। পরিকল্পিত ও অসমাপ্ত কাজগুলোর করার জন্য অনুপ্রেরণা জুগায়। এ পুরস্কারও আমাকে এদিকে ধাবিত করবে।

সাহিত্য সম্মাননা প্রদান পর্বে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সিলেট জেলা প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি আল আজাদ, ‘সিলেট মিরর’ পত্রিকার সম্পাদক আহমেদ নূর, সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সিলেটের সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জফির সেতু, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মো. বদরুল ইসলাম শোয়েব, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের কেন্দ্রীয় সদস্য শামসুল আলম সেলিম, স্কলার্সহোম মেজরটিলা কলেজের অধ্যক্ষ ফয়জুল হক ও বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) সিলেটের কোষাধ্যক্ষ ছামির মাহমুদ।

 

এরপর বিপুল শর্মার পরিচালনায় ছন্দ নৃত্যালয়ের শিল্পীদের সমবেত নৃত্য পরিবেশনার মাধ্যমে শুরু হয় সাংস্কৃতিক পর্ব। এ পর্বে সিলেটের বিভিন্ন সংগঠন ও শিল্পীরা পরিবেশনায় অংশ নেন। একক পরিবেশনায় অংশ নেন বাউল বশিরউদ্দিন সরকার, শিল্পী ইকবাল সাঁই, পল্লবী দাস, আশরাফুল ইসলাম অনি, মৌমিতা বৃষ্টি প্রমুখ।

অনুষ্ঠানের এক ফাঁকে সিলেটের বাউল বশিরউদ্দিন সরকারকে প্রথম আলো বন্ধুসভার পক্ষ হতে ৬০তম জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানানো হয়। তাঁকে ফুল দিয়ে বরণ করে নেন বাংলাদেশ বেতার সিলেটের সহকারী পরিচালক প্রদীপ চন্দ্র দাস, লেখক মিলু কাসেম, উইমেন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি স্বর্ণলতা রায়, সম্মিলিত নাট্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রজতকান্তি গুপ্ত, ইমজা সিলেটের সাধারণ সম্পাদক গোলজার আহমদ প্রমুখ।

এবারের মেলা উৎসর্গ করা হয়েছে প্রয়াত কবি ফজলুল হক ও নাট্যব্যক্তিত্ব মিসফাক আহমদ চৌধুরীকে। মেলায় ঢাকা ও সিলেটের ২০টি প্রকাশনাসংস্থা অংশ নিয়েছে। অংশগ্রহণকারী প্রকাশনাসংস্থাগুলো হচ্ছে প্রথমা, কথাপ্রকাশ, অন্বেষা প্রকাশন, উৎস প্রকাশন, অ্যাডর্ন পাবলিকেশন, বাবুই, নাগরী, বাসিয়া প্রকাশনী, ঘাস প্রকাশন, পাÐুলিপি প্রকাশন, পাপড়ি, অভ্র প্রকাশন, বুনন প্রকাশন, মাছরাঙা প্রকাশন, জসিম বুক হাউস, স্বপ্ন ’৭১, নগর, নোভা বুকস অ্যান্ড পাবলিশার্স, গাঙুড় প্রকাশন এবং শব্দকথা প্রকাশন।

 

আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মেলা চলবে। প্রতিদিন বেলা দুইটা থেকে রাত নয়টা পর্যন্ত মেলা বইপ্রেমীদের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন, লেখক আড্ডাসহ নানা কর্মসূচি মেলায় রয়েছে।

 

সিলেটভিউ২৪ডটকম/প্রেবি/এসডি-২০