সৌদি আরব থেকে ফিরে নিজের উপর রোমহর্ষক নৃশংস নির্যাতনের বর্ণনা দিলেন মৌলভীবাজারের কুলাউড়ার নাজমা বেগম (৩০) নামের এক নারী। নির্যাতনের বর্ণনা দিতে গিয়ে মূর্ছা যান তিনি। মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়া নাজমার শরীরের বিভিন্ন জায়গায় রয়েছে নির্যাতনের চিহ্ন। গত চারদিন আগে দেশে ফিরে এমনটাই এই প্রতিবেদককে জানান নাজমা। নাজমা কুলাউড়া পৌরসভার দক্ষিণ চাতলগাঁও গ্রামের মো. আলমের স্ত্রী।
 

নাজমা জানান, কুলাউড়া পৌরসভার জগন্নাথপুর গ্রামের সিতার মিয়া (৫৫) তাকে সৌদি আরবে পাঠানোর জন্য পরিবারকে বিভিন্ন প্রলোভন দেখান। তার পরিবার সিতার মিয়াকে বারবার নিষেধ করলেও পরিবারকে বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে তিনি ম্যানেজ করে ফেলেন। ফলে তার পরিবার তাকে সৌদি পাঠাতে সম্মত হয়।


তিনি জানান, ২০২২ সালের ৪ আগস্ট ঢাকার ফকিরাপুলে অবস্থিত ইস্টার্ন ট্রাভেলসের মাধ্যমে তাকে সৌদি আরব পাঠান সিতার মিয়া। পরিবারে সুখ ফেরাতে ৫ আগস্ট তিনি সেখানে পৌঁছলে তাকে একটি বাসায় গৃহপরিচারিকার কাজে দেওয়ার কথা বলে তার উপর বিভিন্নভাবে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা হয়। পরিবারের সাথে তার তিনমাস যোগাযোগও বিচ্ছিন্ন ছিল। একপর্যায়ে বিষয়টি তিনি তার পরিবারের কাছে জানান। পরে তার মা রাবেয়া বেগম সিতার মিয়াকে দ্রুত নাজমাকে দেশে ফিরিয়ে আনার অনুরোধ করেন।

রাবেয়া বেগম সিতার মিয়াসহ পরিবারের লোকজনকে নিয়ে ঢাকায় ওই ট্রাভেলসে যোগাযোগ করলে তারা নাজমাকে দেশে ফিরিয়ে আনার কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় নাজমার পরিবার ঢাকা থেকে হতাশ হয়ে বাড়িতে ফেরেন। বাড়িতে এসে নাজমার মা রাবেয়া বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানান এবং সিতার মিয়া ও তার স্ত্রী ছকিনা বেগমকে অভিযুক্ত করে থানায় একটি অভিযোগ দেন।

পরে উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসন নাজমাকে ফিরিয়ে আনতে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। একপর্যায়ে সরকারের সহযোগিতায় গত ২ ফেব্রুয়ারি নাজমা দেশে ফিরেন।

নাজমা বলেন, সৌদিতে তাকে গৃহকর্মীর কাজ দেওয়ার কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু সেখানে যাওয়ার পর নির্যাতনের মুখে পড়তে হয় তাকে। আরবিরা বিভিন্ন কুপ্রস্তাব দিলে তা না রাখলে তার উপর চালানো হত পাশবিক নির্যাতন।
তিনি বলেন, সেখানে অসংখ্য বাঙালি মেয়েরা এমন নির্যাতনের শিকার। তারাও দেশে ফিরতে চান বলে জানান নাজমা।
তিনি আরও বলেন, বিদেশে যাওয়া নিয়ে তার জামাই মো. আলম তার উপর মনঃক্ষুণ্ণ। এ জন্য তাকে সৌদি থেকে ফিরিয়ে আনতে তার জামাই কোনো সহযোগিতা করেননি।

নাজমার মা রাবেয়া বেগম বলেন, সৌদি থেকে তার মেয়ে নির্যাতনের কথা জানালে সিতার মিয়ার সাথে যোগাযোগ তিনি করেন। সেখানে কোনো সুরাহা না পাওয়ায় মেয়েকে ফিরে পেতে উপজেলা ও পুলিশ প্রশাসনের শরণাপন্ন হন। প্রশাসনের তৎপরতায় দ্রুত তার মেয়ে দেশে ফেরেন।

তিনি ইউএনও এবং ওসির প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করে বলেন, তাদের সহযোগিতায় মেয়ে নাজমাকে ফিরে পেয়েছি। 
তবে সিতার মিয়ার দাবি, নাজমাকে সৌদি আরবে যাওয়ার জন্য তিনি শুধু ঢাকার ইস্টার্ন ট্রাভেলসের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেছেন। পরে সেই ট্রাভেলসের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র তৈরি করে প্রশিক্ষণ দিয়ে তাকে সৌদিতে পাঠানো হয়েছে। এরপর তিনি আর কিছু বলতে পারেন না।

কুলাউড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আব্দুছ ছালেক বলেন, এ বিষয়ে অভিযোগ পাওয়ার পরই নাজমাকে দেশে ফেরত আনতে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মাহমুদুর রহমান খোন্দকার বলেন, নাজমার মা রাবেয়া বেগম বিষয়টি জানানোর পর গত ২৪ জানুয়ারি জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসের সহকারী পরিচালককে বিষয়টি অবগত করি। তাকে বলা হয়, নির্যাতিত ওই নারীকে দ্রুত দেশে ফেরানোর ব্যবস্থা করার জন্য।
 


সিলেটভিউ২৪ডটকম/অনি/পল্লব-১৯