ফাইল ছবি

প্রসূতিদের কাছে নিরাপদ সন্তান প্রসবের আপন ঠিকানা ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র। এসব কেন্দ্র ২৪ ঘণ্টা প্রসূতি মায়েদের নিরাপদে সন্তান প্রসব এবং স্বাস্থ্যসেবার ভরসাস্থল হলেও সিলেটের ওসমানীনগরে মিলছে না প্রসূতিদের সেবা।
 

উপজেলার ৮টি ইউনিয়নেই স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র থাকলেও স্বাস্থ্য ও প্রসূতিদের সেবা না পাওয়ার অভিযোগ স্থানীয়দের।
 


এসব স্বাস্থ্যকন্দ্রে এমবিবিএস ডিগ্রিধারী মেডিকেল অফিসার, সহকারী মেডিকেল অফিসার, পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা, ফার্মাসিস্ট, স্বাস্থ্য সহকারী, স্বাস্থ্য পরিদর্শক ও একজন আয়া থাকার কথা। শিশুসহ সকল জনগোষ্ঠীর মৃত্যু ও রোগাক্রান্তের হার কমানো, নিরাপদ প্রসব, গর্ভাবস্থা এবং প্রসব জনিত মাতৃস্বাস্থ্য-এর ক্ষতি রোধ, সঠিক সময়ে সন্তান নেবার পরিকল্পনা, জন্ম নিয়ন্ত্রণসহ অন্যান্য পদ্ধতির যথাযত প্রয়োগ ও নিশ্চিতকরণের কথা থাকলেও ওসমানীনগরে এসব সেবা থেকে বঞ্চিত রয়েছেন সাধারণ মানুষ। লোকবল সংকটের অযুহাতে প্রায়ই বন্ধ থাকে  কয়েকটি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে।
 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নবসৃষ্ট উপজেলায় সরকারি উপজেলা স্বাস্থ্য কম্পেক্স নির্মামাধীন। তাই স্বাস্থ্য সেবার আশ্রয়স্থল ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র। একসময় গরিবের হাসপাতাল নামেই পরিচিতি ছিল এসব স্বাস্থ্যকেন্দ্রের। উপজেলার ৮ ইউনিয়নে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র থাকলেও পরিবেশ এবং জনবলের অযুহাতে ৬ ইউনিয়নে স্বাভাবিক প্রসব সেবা বন্ধ রয়েছে দির্ঘদিন থেকে। ২টিতে নেই পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা, বাকি ৪টি ইউনিয়নে একই পদের জনবল থাকলেও গত বছরে এসব স্বাস্থ্যকেন্দ্রে হয়নি কোন নবজাতকের জন্ম। মাত্র ২টি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে স্বাভাবিক ডেলিভারি সম্পন্ন হচ্ছে। উপজেলা হাসপাতাল না থাকায় সিলেট শহরের বেসরকারি হাসপাতালে প্রসবকালীন রোগীকে নিয়ে গেলে করাতে হয় (অস্ত্রোপচার) সিজার। সিজারিয়ান ডেলিভারিতে বিপুল পরিমান অর্থ এবং নানা বিধি সমস্যার সম্মুখিন হন গর্ভবর্তীরা।
 

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার উমরপুর ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে বিগত বছরে ১১৯ টি স্বাভাবিক প্রসব করানো হয়। আরো ২৫টি প্রসব সম্পন্ন হয় গত জানুয়ারী মাসে। গোয়ালাবাজার স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে গতবছর স্বাভাবিক প্রসব সম্পন্ন হয় ৩৪টি। চলতি বছরের প্রথম মাসে ৫টি প্রসব হয় এই কেন্দ্রে। দুইটি ইউনিয়নেই প্রসবকালীন সেবা পাওয়া গেলেও নিরাপদ প্রসবে উমরপুর ইউনিয়নের এক-তৃতীয়াংশ সেবা পাচ্ছেন গোয়ালাবাজার ইউনিয়নের গর্ভবতীরা।
 

অন্যদিকে, উপজেলার তাজপুর, দয়ামীর, উসমানপুর, বুরুঙ্গা ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রে পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা থাকলেও সুষ্ট পরিবেশের অযুহাতে গতবছর এসব স্বাস্থ্যকেন্দ্রে কোন নবজাতকের জন্ম হয়নি।
 

অভিযোগ রয়েছে, সেবা নিতে আসা গর্ভবতীকে স্বাভাবিক ডেলিভারিতে আগ্রহী না করে শহরের বিভিন্ন বেসরকারী হাসপাতালের ঠিকানা দিয়ে সেখানে চিকিৎসা করানোর পরামর্শ দেন সংশ্লিষ্ট পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকারা। এতে বেসরকারী হাসপাতাল থেকেও পাচ্ছেন কমিশন।
 

এদিকে, উপজেলার সিমান্তবর্তী এবং প্রত্যন্ত হাওর অঞ্চল পশ্চিম পৈলনপুর ও সাদিপুর ইউনিয়নে পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা পদায়ন করে স্বাভাবিক প্রসব এবং মাতৃত্বকালীন স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা অফিসের প্রতি জোর দাবি জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের বাসিন্দারা।
 

ওসমানীনগর উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মহেতুষ মজুমদার বলেন, উপজেলার দুইটি ইউনিয়নে জনবল নেই। দুইটি ইউনিয়নে প্রসবের পরিবেশ নেই। এসব বিষয়ে আমরা উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি। আশা করছি তারাতাড়ি এসব সংকট কাটিয়ে প্রসব সেবা প্রদান করা হবে। জনবল থাকলেও প্রসবকালীন সেবা না পাওয়ার অভিযোগটি এড়িয়ে যান তিনি।
 


সিলেটভিউ২৪ডটকম/রনিক/এসডি-০৭