দেশে প্রতিনিয়ত আবাদযোগ্য জমির পরিমাণ কমছে। অপরিকল্পিত নগরায়ণ, যততত্র অবকাঠামো নির্মাণ ও শিল্পায়নের কারণে কৃষিজমি হারিয়ে যাচ্ছে। প্রতি বছর ১ শতাংশ হারে কৃষি জমি কমছে। দেশে আবাদযোগ্য যতো জমি আছে, সেগুলোও পুরোটা আবাদের আওতায় আসছে না। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) এক প্রতিবেদনে ওঠে এসেছে এমন তথ্য।

বিবিএসের প্রতিবেদল বলছে, আবাদযোগ্য জমি অপচয়ে দেশের সব বিভাগের মধ্যে শীর্ষে রয়েছে সিলেট। এ বিভাগের প্রতিটি জেলাতেই বিপুল পরিমাণ জমি অনাবাদি রয়ে যাচ্ছে।


প্রতিবেদন অনুসারে, দেশে মোট ভূমি আছে ৩ কোটি ৬৪ লাখ ৬৫ হাজার একর। তন্মধ্যে চাষাবাদের আওতায় আছে ২ কোটি ৮১ হাজার একর জমি। এ ছাড়া ৬ লাখ ৭১ হাজার একর জমি আবাদের যোগ্য হলেও সেগুলো চাষের আওতায় আসেনি।

বিবিএসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশে আবাদযোগ্য জমি অপচয়ে শীর্ষ ১০ জেলা হচ্ছে বান্দরবান, সুনামগঞ্জ, ফরিদপুর, সিলেট, নেত্রকোনা, মৌলভীবাজার, চট্টগ্রাম, টাঙ্গাইল, হবিগঞ্জ ও কিশোরগঞ্জ।

সুনামগঞ্জে ৯ লাখ ২৬ হাজার একর জমি রয়েছে। তন্মদ্যে ৪৬ হাজার একর আবাদযোগ্য জমি চাষের আওতায় আসছে না।

সিলেটে মোট জমির পরিমাণ ৮ লাখ ৫৩ হাজার একর। তন্মধ্যে অনাবাদি থাকছে ৩৯ হাজার একর জমি।

মৌলভীবাজার জেলায় ৬ লাখ ৯২ হাজার একর জমি থাকলেও আবাদের বাইরে আছে ৩১ হাজার একর জমি।

এ ছাড়া হবিগঞ্জ জেলায় মোট জমি আছে ৬ লাখ ৫১ হাজার একর। তন্মধ্যে ২১ হাজার একরই অনাবাদি রয়ে যাচ্ছে।

সবমিলিয়ে সিলেট বিভাগে ৩১ লাখ ২২ হাজার একর জমির মধ্যে ১ লাখ ৩৭ হাজার একর আবাদযোগ্য জমি চাষের আওতার বাইরে থাকছে।

সংশ্লিষ্টদের মতে, সিলেট বিভাগে প্রবাসীদের সংখ্যা বেশি। প্রবাসীদের মালিকানাধীন জমি বেশিরভাগই অনাবাদি থেকে যায়। দখল হয়ে যাওয়ার ভয়ে প্রবাসীরা নিজেদের জমি অন্য কাউকে চাষাবাদের জন্য দিতে অনিচ্ছুক। এ ছাড়া সিলেট অঞ্চলে, বিশেষ করে সুনামগঞ্জ এলাকায় হাওরের বিপুল পরিমাণ জমি পানিতে তলিয়ে থাকে বলে চাষাবাদ করা সম্ভব হয় না। আবার সীমান্তবর্তী এলাকায় বর্ষা মৌসুমে ঢলের সাথে বালি, পাথর এসে জমির ক্ষতি হয়; ফলে এসব জমিতে চাষাবাদে অনাগ্রহী কৃষকরা। সিলেট অঞ্চলে ঘন ঘন বন্যাও বিপুল জমি অনাবাদি থাকার একটি কারণ।

এ ব্যাপারে হাওর এরিয়া আপলিস্টমেন্ট সোসাইটির (হাউস) নির্বাহী পরিচালক সালেহীন চৌধুরী শুভ বলেন, ‘মেঘালয়ের পাদদেশে সুনামগঞ্জ জেলা। এ জেলার পাঁচটি উপজেলা সীমান্তবর্তী। বর্ষার মৌসুমে প্রায় সময় সীমান্ত এলাকায় ধসের ঘটনা ঘটে। এতে বালি, পাথর ও পলি মাটিতে কৃষি জমি নষ্ট হচ্ছে। অথচ এসব এলাকার অনাবাদি জমিগুলো চাষাবাদের আওতায় নেয়া গেলে তা দেশের অর্থনীতিতে বিরাট ভূমিকা রাখবে। সীমান্তবর্তী এলাকায় নতুন উদ্যোক্তারা আনারস, লেবু, ফুল, ফলের চাষাবাদ করলে সফল হতে পারবেন।’

কৃষি মন্ত্রণালয়ের প্রাক্তন সচিব মো. সায়েদুল ইসলাম বলেন, ‘আবাদযোগ্য কিন্তু চাষ হচ্ছে না এমন জমি মূলত সিলেট অঞ্চলেই বেশি। সিলেট অঞ্চল আমাদের জন্য একটু চ্যালেঞ্জিং। এখানকার যারা জমির মালিক তারা অনেকেই বিদেশে থাকেন। তারা জমি নিজেরা চাষ করতে চান না। অন্য কাউকে দিয়েও চাষ করাতে চান না। তারা মনে করেন, মালিকানা নিয়ে পরে ঝামেলা হতে পারে।’

সিলেটভিউ২৪ডটকম/আরআই-কে