সিলেটের নাম মুখে নিলেই প্রথমে চোখে ভাসে কিন ব্রিজ আর আলী আমজদের ঘড়ির ছবি। ঐতিহাসিকভাবেই সিলেটের নামের সাথে জড়িয়ে গেছে ব্রিজটি। সুরমা নদীর উপর দাঁড়িয়ে থাকা ব্রিজটি পর্যটকদের জানিয়ে দেয়- এ অঞ্চলের ইতিহাসের কথা। দেশ-বিদেশের পর্যটকদের কাছে কিন ব্রিজ সিলেটের প্রতীক হিসেবে পরিচিত।
সিলেটের সুরমা নদীর উপর তৈরি এই সেতুর আয়তন ১ হাজার ১৫০ ফুট দৈর্ঘ্য এবং ১৮ ফুট প্রস্থ। ব্রিটিশ আমলে ১৯৩৩ সালে লোহার কাঠামোয় দৃষ্টিনন্দন এই সেতুর নির্মাণকাজ শুরু হয়। আসাম প্রদেশের তৎকালীন গভর্নর মাইকেল কিনের নামে এর নামকরণ করা হয়- কিন ব্রিজ। ১৯৩৬ সালে সেতুটি চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করা হয়।
মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত এই সেতু ছিয়াশি বছর অতিক্রম করেছে। তবে অবহেলা আর অযত্নে সেতুটি হারাতে বসেছে তার ঐতিহ্য আর সৌন্দর্য্য। তার উপর ব্রিজটি দখলে রয়েছে হকারদের। ফলে সেতুটিতে দিনের বেশিরভাগ সময় যানজট লেগে থাকে, দুর্ভোগ পোহাতে হয় পথচারীদের।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পুরোপুরি একটি বাজারে পরিণত হয়ে গেছে কিন ব্রিজ। কাঁচাবাজার থেকে শুরু করে টি-শার্ট, মোবাইল সিম ও চার্জারসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সব ধরনের জিনিসই পাওয়া যাচ্ছে সেখানে। পাওয়া যাচ্ছে সবজিও। প্রতিদিনই প্রায় অর্ধশতাধিক হকার বিভিন্ন ধরনের পণ্যের পসরা সাজিয়ে সেতুর দুই পাশে বসেন।
কিন ব্রিজের পথচারী সজিব বলেন, সেতুটির সংস্কার খুবই জরুরি। সেতুটির মাঝে বড় বড় গর্ত রয়েছে। যার ফলে যান চলাচলে সমস্যা হয়। তার উপর সেতুর দুইপাশ হকাররা দখল করে রেখেছে। হকারদের কারণে ঐতিহাসিক এই ব্রিজ দিয়ে হেঁটে যাওয়াই কষ্টকর। দুইপাশ দখল করে রাখায় যানজট লেগে তাকে সব সময়। যত সময় যাচ্ছে হকারদের কারণে সমস্যা আরো বাড়ছে। হকার না থাকলে পরিবেশটাও সুন্দর থাকত, স্বাচ্ছন্দ্যে চলাফেরা করা যেত। যত দ্রুত সম্ভব এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।
আলাপকালে হকাররা জানান- এখানে বসলে বিকি ভালো হয়। তবে মাঝে-মধ্যে যানজট দীর্ঘ হলে পুলিশ তাদের উঠিয়ে দেয়। কিন্তু কিছুসময় পরেই তারা আবার ফিরে আসেন।
এদিকে, অনেক হকার যানজটের কারণ হিসেবে ব্রিজে নিজেদের বসাকে দায়ী করতে নারাজ। সেতুর সৌন্দর্য্য বজায় রেখে সুশৃঙ্খলভাবে তাদের স্থায়ীভাবে বসতে দেয়ার দাবি জানান হকাররা।
উল্লেখ্য, ২০১৯ সলের ৩ সেপ্টেম্বর কিন ব্রিজ পরিদর্শন করতে আসেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত আল রবার্ট মিলার। এ সময় তিনি ঐতিহাসিক এ ব্রিজকে পৃথিবীর অন্যতম দীর্ঘ হাঁটার সেতু বলে মন্তব্য করেন। সেতুটি সংস্কার করে টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করায় সিলেট সিটি করপোরেশনকে ধন্যবাদও জানান তিনি। পাশাপাশি সেতু রক্ষণাবেক্ষণে মার্কিন সরকারের সহায়তার আশ্বাসও দেন তিনি এসময়।
সিলেটভিউ২৪ডটকম/নাজাত/পল্লব-১৬