বাংলাদেশে প্রথম জঙ্গি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে ময়মনসিংহে ২০১৪ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি। সেদিন ত্রিশালে প্রিজন ভ্যানে হামলা চালিয়ে জেএমবির শীর্ষ তিন নেতাকে ছিনিয়ে নেওয়া হয়। তাদের একজন মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত আসামি সালাউদ্দিন সালেহীন। যিনি ৯ বছর ধরে পলাতক আছেন। এদিকে কিছুদিন আগে ঢাকায় আদালত প্রাঙ্গণ থেকে ছিনতাই হওয়া দুই জঙ্গি আবু সিদ্দিক সোহেল ও মইনুল হাসান শামীম ‘ট্রেস আউট’ (লাপাত্তা)।
শামীমের বাড়ি সুনামগঞ্জ জেলার ছাতক উপজেলার মাধবপুরে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সূত্র জানায়, শামীমের তিনটি সাংগঠনিক নাম রয়েছে। এগুলো হলো সিফাত, সামির ও ইমরান। প্রয়োজন অনুসারে এসব নাম ব্যবহার করতেন শামীন।
কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট সূত্র জানায়, ছাতকের মাধবপুরের আব্দুল কুদ্দুসের ছেলে মইনুল হাসান শামীম। ২০১৬ সালে ছয় জঙ্গিকে গ্রেফতারে পুলিশের পক্ষ থেকে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছিল। তাদের মধ্যে শামীমের নামও ছিল। তার নামে একাধিক মামলা রয়েছে। ২০১৭ সালে শামীমকে গ্রেফতার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সূত্রে জানা গেছে, সালাউদ্দিন সালেহীন পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে আত্মগোপন করেছেন। তবে আদালতপাড়া থেকে ছিনতাই হওয়া দুই জঙ্গি কোথায় আছে তা কেউ জানে না। তারা দেশে নাকি দেশের বাইরে আছে তা নিশ্চিত হতে পারছেন না তদন্ত সংশ্লিষ্টরা।
জঙ্গি ছিনতাই ঘটনার তদন্ত সংশ্লিষ্ট সিটিটিসি কর্মকর্তাদের দাবি, শামীম ও সোহেলের অবস্থান নিশ্চিত করার চেষ্টা চলছে। তাদের ধারণা, দেশ থেকে দুজন পালাতে পারেনি। তাদেরকে কারা, কীভাবে, কয়জনের উপস্থিতিতে, কাদের নির্দেশে ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে তা নিশ্চিত হওয়া গেছে।
জানা গেছে, গত বছরের ২০ নভেম্বর দিনে-দুপুরে ফিল্মি স্টাইলে জঙ্গি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে খোদ রাজধানী ঢাকায়। ওইদিন পুরান ঢাকার সন্ত্রাস দমন ট্রাইব্যুনালে শুনানি শেষে সিএমএম আদালতের হাজতখানায় নেওয়ার পথে হামলা করে জঙ্গিরা। তারা দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যের চোখে স্প্রে করে দুই জঙ্গিকে ছিনিয়ে নেয়। ছিনিয়ে নেওয়া দুজন হলো আবু সিদ্দিক সোহেল ওরফে সাকিব ও মাইনুল হাসান শামীম।
এ দুই জঙ্গি ২০১৫ সালের ৩১ অক্টোবর রাজধানীর শাহবাগে আজিজ সুপার মার্কেটে জঙ্গিদের হাতে নিহত প্রকাশক ফয়সাল আরেফিন দীপন ও ব্লগার অভিজিত রায় হত্যা মামলার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি। এখন পর্যন্ত তদের গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। তবে সালেহীনের মতো তাদেরকে ধরিয়ে দিতেও ২০ লাখ টাকা পুরস্কার দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে পুলিশ।
পালানোর পর সেই দুই আসামিসহ অন্য আসামিদের কেন ডান্ডাবেড়ি ছাড়া আদালতে নেওয়া হলো তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। দুই পলাতক জঙ্গি গ্রেপ্তার না হওয়াটাকে ‘অশনি সংকেত’ বলছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ও নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা।
সিটিটিসির ইন্টেলিজেন্স অ্যানালাইসিস বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মাহমুদুল হাসান বলেন, আদালতপাড়া থেকে পালানো দুজনের সঙ্গে কিছু কানেকশন আমরা পেয়েছি। তবে তাদের হদিস এখনো আমরা পাইনি। তারা কোথায়, কীভাবে গেছেন, কারা তাদের সহযোগিতা করে নিয়ে গেছে সেসব ব্যাপারে আমরা তথ্য পেয়েছি। আমাদের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা চলছে।
পুলিশের অ্যান্টি টেরোরিজম ইউনিটের অ্যাডিশনাল ডিআইজি (অপারেশন) মনিরুজ্জামান বলেন, এখন পর্যন্ত তারা দেশের বাইরে চলে গেছে, সেরকম তথ্য আমাদের কাছে নেই। এ ব্যাপারে দায়ের হওয়া মামলার তদন্ত করছে সিটিটিসি। তারা এ সংক্রান্ত আরও তথ্য দিতে পারবে।
ঢাকার আদালাতপাড়া থেকে দুই জঙ্গি ছিনতাইয়ের ঘটনা তদন্ত করছে সিটিটিসির কাউন্টার টেরোরিজম ইনভেস্টিগেশন বিভাগ। এ বিভাগের উপ-কমিশনার নাজমুল হক বলেন, দুই জঙ্গিকে ছিনিয়ে নিতে একাধিক সদস্যের অংশগ্রহণ ছিল। আমরা দুজনকে গ্রেপ্তারে চেষ্টা করছি। তাদের টার্গেট ছিল দেশ ছাড়ার। তবে তাদের অবস্থান আমরা এখনো নিশ্চিত নই। তারা দেশে আছে নাকি বর্ডার ক্রস করে ফেলেছে তা জানা যায়নি।
সিলেটভিউ২৪ডটকম/আরআই-কে