(প্রতীকী ছবি)

সিলেট-ঢাকা মহাসড়কে যেন ওৎ পেতে আছে মৃত্যু। প্রায় প্রতিদিনই এ মহাসড়কের সিলেট অঞ্চলে ঘটছে দুর্ঘটনা। এসব দুর্ঘটনায় বেশিরভাগই ঘটেছে এক বা একাধিক প্রাণহানির ঘটনা। 

সংশ্লিষ্টরা বলছেন- বেপরোয়া গতি, চালকের অসাবধানতা বা অদক্ষতা এবং কোনো সময় পথচারীদের অসতর্কতায় ঘটছে এসব দুর্ঘটনা। ফলে ক্ষতি হচ্ছে জান-মালের, এ মহাসড়কে থামছে না লাশের মিছিল। 


সর্বশেষ গত ২৪ ঘন্টায় সিলেট-ঢাকা মহাসড়কের সিলেট অংশে দুর্ঘটনায় প্রাণ গেছে তিন জনের। হবিগঞ্জ লাখাই সড়কে দুই মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষে ২ জন এবং হবিগঞ্জের মাধবপুরে ট্রাকচাপায় এক পথচারীর মৃত্যু হয়েছে।

জানা গেছে, রোববার রাতে হবিগঞ্জের লাখাইয়ে দুই মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষে ২ জন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় দুমড়ে-মুচড়ে গেছে সাইকেল দুটি। 

নিহতরা হলেন- লাখাই উপজেলার ভাদিকারা গ্রামের গিয়াস উদ্দিনের ছেলে নজরুল ইসলাম তুফান (২৪) এবং একই গ্রামের সিরাজুল ইসলামের ছেলে স্বাধীন মিয়া (২৫)। 

পুলিশ জানায়, রোববার রাত সাড়ে ১০টার দিকে প্রয়োজনীয় কাজ শেষে বাড়ি ফিরছিল নজরুল ইসলাম তুফান নামে ওই যুবক। সে ইন্টারনেট সেবা দেয়া প্রতিষ্ঠান কার্নিভালে কর্মরত ছিল। পথিমধ্যে ভাদিকারা এলাকায় পৌঁছলে বিপরীত দিক থেকে আসা অপর আরেকটি মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে ঘটনাস্থলেই নজরুলের মৃত্যু হয়। 

এদিকে, আশঙ্কাজনক অবস্থায় স্বাধীন মিয়াকে উদ্ধার করে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হলে সোমবার সকালে তিনি মারা যান।

অপরদিকে, সিলেট-ঢাকা মহাসড়কের হবিগঞ্জের মাধবপুরে মৌলানা আছাদ আলী ডিগ্রি কলেজ এলাকায় সোমবার (৬ মার্চ ) সকালে দুর্ঘটনায় মিন্নত আলী (৪৫) নামে এক পথচারী নিহত হয়েছেন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সোমবার সকাল সাড়ে ৬টা দিকে মৌলানা আছাদ আলী ডিগ্রি কলেজের সামনে ঢাকা মেট্রো ট-২০-০১৮৬ নাম্বারের একটি ট্রাক পথচারী মিন্নত আলীকে ধাক্কা মেরে ব্রিজের রেলিংয়ের উপর উঠে যায়। এতে পথচারী মিন্নত আলী ঘটনাস্থলেই নিহত হন। তিনি মিন্নত আলী মাধবপুর উপজেলার আন্দিউড়া ইউনিয়নের মীরনগর গ্রামের মৃত আক্তার মিয়ার ছেলে।

সম্প্রতি রোড সেফটি ফাউন্ডেশন নামের একটি বেসরকারি সংগঠন সিলেট-ঢাকা মহাসড়কের সিলেট অংশ এবং সিলেট-তামাবিল মহাসড়কের ৭টি এলাকাকে অতি দুর্ঘটনাপ্রবণ বা ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। এছাড়া তাদের জরিপে সাধারণ দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে চারটি এলাকাকে।

অপরদিকে, হবিগঞ্জের মাধবপুর, নবীগঞ্জ ও শায়েস্তাগঞ্জ, মৌলভীবাজারের কুলাউড়া এবং সিলেট জেলার জকিগঞ্জ, ওসমানীনগর ও জৈন্তাপুরকে অতি দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকা হিসেবে এবং সিলেট জেলার জাফলং ও গোলাপগঞ্জ, হবিগঞ্জ জেলার বানিয়াচং এবং মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জকে সাধারণ দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করেছে বেসরকারি এই সংগঠন। 

সিলেট বিভাগে বেশি দুর্ঘটনা ঘটার ৭টি কারণ তুলে ধরেছে রোড সেফটি ফাউন্ডেশন। সেগুলো হচ্ছে- এলাকার সড়কের নকশা ও অবকাঠামোগত ত্রুটি, সড়কের পারিপার্শ্বিক বিরূপ অবস্থা, সড়কে অস্বাভাবিক বাঁকম রাস্তার উপরেই ধান বা অন্যান্য ফসল শুকানো, যানবাহনের উচ্চগতি নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা না থাকা এবং একই সড়কে বিভিন্ন ধরনের যানবাহনের বাধাহীন ও বেপরোয়া চলাচল। 

চালকদের সক্ষমতার অভাব বা অদক্ষতায় দুর্ঘটনা বেশি ঘটছে গবেষণায় উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া সড়কের পার্শ্ববর্তী বা সড়কঘেঁষা জনবসতি থাকলে তা দুর্ঘটনা ঘটাতে ভূমিকা রাখে বলে উল্লেখ করছে রোড সেফটি ফাউন্ডেশন।


সিলেটভিউ২৪ডটকম / নাজাত / ডালিম