গ্রীষ্মকালীন জনপ্রিয় সুস্বাদু ফল তরমুজ। যার বৈজ্ঞানিক নাম সাইট্রুলাস ল্যানাটাস। পশ্চিম আফ্রিকা তরমুজের জন্মভূমি হিসেবে বিখ্যাত। বর্তমানে সারা পৃথিবীতে এর দেখা মিলে। ওয়াটারমেলন নামটাও আফ্রিকানদের দেওয়া। এমন নামকরণের কারণ হলো অভিযাত্রীরা একে পানির বিকল্প উৎস হিসেবে ব্যবহার করতো। এর বহিরাবরণ খুবই পুরু ও ভিতরে সুমিষ্ট পানি সমৃদ্ধ (এন্ডোস্পার্ম) হওয়ায় অভিযাত্রীরা একে পানির আধার হিসেবে সাথে রাখত পিপাসা মেটানোর জন্য। গরমকালে শরীরের পানির ঘাটতি মেটানোর সবচেয়ে ভাল উপায় হল তরমুজ খাওয়া। তরমুজে পানির পরিমাণ ৯২ ভাগ। তাই শরীরকে ঠাণ্ডা রাখতে ও পানিশূন্যতা কমাতে তরমুজ অতুলনীয়। তবে শুধু পানির ঘাটতি মেটানো নয়, এ ছাড়াও তরমুজে রয়েছে নানা গুণ।

গবেষণায় দেখা গেছে, তরমুজে থাকা অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট স্ট্রোকের মতো ঝুঁকি কমায় আর উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। তরমুজে ফ্যাটের পরিমাণ একেবারেই কম, এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পানি।


গবেষণায় আরও পাওয়া গেছে, তরমুজে থাকা উপাদান লাইকোপেন মানবদেহের কয়েক ধরনের ক্যানসারের বিরুদ্ধে খুব ভালো কাজ করে। তরমুজে আছে অসাধারণ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা। বিশেষ করে তরমুজে আছে যৌনশক্তি বৃদ্ধির অকল্পনীয় খাদ্যগুণ। এজন্য তরমুজকে বলা হয় প্রাকৃতিক ভায়াগ্রা। কেউ কেউ সহজলভ্য এই ফলটিকে ‘গরিবের ভায়াগ্রা’ মনে করেন। আসুন জেনে নিই তরমুজের কিছু গুণাগুণ-

ক্যানসার প্রতিরোধক
তরমুজে আছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা শরীরের জন্য খুবই উপকারী। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ তরমুজ খেলে অক্সিডেটিভ স্ট্রেসজনিত অসুস্থতা কমে যায়। এছাড়াও নিয়মিত তরমুজ খেলে প্রোস্টেট ক্যানসার, কোলন ক্যানসার, ফুসফুসের ক্যানসার ও ব্রেস্ট ক্যানসারের ঝুঁকি কমে যায়।

কিডনির জন্য উপকারী
তরমুজ কিডনির জন্য উপকারী একটি ফল। এটি কিডনি ও মুত্রথলিকে বর্জ্যমুক্ত করে। কিডনিতে পাথর হলে চিকিৎসকরা ডাবের জল, তরমুজ খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন।

রোগ প্রতিরোধ শক্তি বাড়ায়
ভিটামিন সি সমৃদ্ধ এই ফলটি শরীরের প্রতিরোধ শক্তি বাড়িয়ে তুলতে সাহায্য করে। এ ছাড়াও শরীরে ক্ষত নিরাময়ের জন্য প্রোটিনযুক্ত কোষ কোলাজেনের পরিমাণও বাড়িয়ে তোলে। তরমুজে থাকা বিটা-ক্যরোটিন ত্বকের জেল্লা ধরে রাখতে এবং অকালে চুলের ঝরে পড়া রুখতে সাহায্য করে।

ওজন কমাতে সাহায্য করে
অনেকে মনে করেন তরমুজে শর্করার পরিমাণ বেশি। তাই ওজন ঝরানোর ক্ষেত্রে তা বিশেষ ফলদায়ক না-ও হতে পারে। কিন্তু পুষ্টিবিদরা বলছেন, ১০০ গ্রাম তরমুজে ক্যালোরির পরিমাণ মাত্র ৩০ এবং শর্করার মাত্রা ৬.২ গ্রাম। যাতে ওজন বেড়ে যাওয়ার ভয় নেই বললেই চলে। এ ছাড়াও তরমুজে ফাইবার এবং জলের পরিমাণ বেশি হওয়ায়, বার বার খাবার খাওয়ার প্রবণতা কমিয়ে আনতে পারে।

চোখের জন্য ভাল
তরমুজে থাকা লাইকোপিন নামক যৌগটি, চোখের স্বাস্থ্যের জন্যও ভাল। বয়সজনিত ‘ম্যাকুলার ডিজনারেশন’-এর কারণে চোখে যে ধরনের সমস্যা হয়, তা প্রতিরোধ করতে পারে এই লাইকোপিন।

দাঁত এবং মাড়ির যত্নে
তরমুজে থাকা ভিটামিন সি, দাঁত ও মাড়ির স্বাস্থ্য ভাল রাখে। মাড়ির টিস্যুতে ব্যাক্টেরিয়ার আক্রমণ রোধ করতে পারে এই ফল। সেই কারণেই মাড়ি থেকে রক্ত পড়া বা মাড়ি আলগা হয়ে কম বয়সে দাঁত পড়ে যাওয়ার মতো সমস্যাও আটকে দিতে পারে সহজেই।

শরীরে পানির ঘাটতি পূরণ করে
তরমুজের মধ্যে প্রায় ৯২ শতাংশই পানি। পানি কম পান করে যদি পেশিতে টান ধরে বা শরীর ভিতর থেকে শুকিয়ে যায়, সে ক্ষেত্রে তরমুজ খাওয়া যেতেই পারে।

যৌনশক্তি বাড়ায়
টেক্সাস এ অ্যান্ড এম ইউনিভার্সিটির গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে, যারা যৌনশক্তির দিক থেকে দুর্বল তাদের জন্য তরমুজ প্রাকৃতিক ওষুধ হিসেবে কাজ করে। একটি তরমুজে প্রচুর পরিমাণে সিট্রোলিন নামের অ্যামাইনো এসিড থাকে যা ভায়াগ্রার বিকল্প হিসেবে কাজ করে।

সাম্প্রতিক গবেষণায় বিজ্ঞানীরা স্বীকার করেছেন তরমুজে সিট্রোলিন আছে, এটা আমাদের জানা কথা। কিন্তু এটা জানতাম না যে, সিট্রোলিনের পরিমাণ তাতে এতো বেশি থাকতে পারে। গবেষকরা ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন, মানবদেহ সিট্রোলিনকে আরজিনিনিন নামের যৌগ পদার্থে রূপান্তরিত করে। আরজিনিনিন হচ্ছে ভিন্ন মাত্রার অ্যামাইনো অ্যাসিড, যা নাইট্রিক অ্যাসিডের অগ্রদূত হিসেবে কাজ করে। আবার নাইট্রিক অ্যাসিড দেহের রক্তবাহী শিরা বা ধমনীর প্রসারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আর রক্তবাহী শিরা বা ধমনীর প্রসারণের কারণেই মানুষের বিশেষ অঙ্গটি সক্রিয় হয়। আর ভায়াগ্রাও (সিলডিনিফিল সাইট্রেট) দেহের নাইট্রিক অ্যাসিডকে সক্রিয় করার মাধ্যমে কৃত্রিম পন্থায় দেহে জৈবিক উত্তেজনা সৃষ্টি করে।তবে বিজ্ঞানীরা এখনো নিশ্চিত হতে পারেননি, জৈবিক তাড়না সৃষ্টি করতে একজন অক্ষম পুরুষকে ঠিক কত পরিমাণ তরমুজ গিলতে হবে।

মাত্র তিনটি প্রাকৃতিক উপকরণেই বেশিরভাগ যৌন সমস্যা মেটানো সম্ভব। বাজারে খুব সহজেই তা পাওয়া যায়। আবার অনেকের ঘরেও মজুত থাকে। জেনে নেই কী সেই তিনটি উপকরণ-
তরমুজ, লেবু ও বেদানা। এই তিনটি খাদ্যসামগ্রীতেই যৌন ক্ষমতা বাড়ানো সম্ভব। এমনই দাবি গবেষকদের একাংশের। এর মধ্যে প্রধান উপকরণ তরমুজ। বলা হয়, তরমুজে অ্যামিনো অ্যাসিড থাকে। এতে সারা শরীরের পাশাপাশি পুরুষদের গোপনাঙ্গের রক্ত সঞ্চালনও বাড়ে। পাশাপাশি ভিটামিন সি ও পানির পরিমাণ বেশি থাকায় শরীরিক ক্ষমতাও বৃদ্ধি পায়।

যেভাবে তৈরি করবেন প্রাকৃতিক ভায়াগ্রা
একটি তরমুজের এক তৃতীয়াংশ নেবেন। তার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে লেবুর রস ও বেদানার রস নেবেন। মিক্সারে দিয়ে একসঙ্গে মিশিয়ে জুস তৈরি করবেন। এবার তা ফ্রিজে রেখে ঠান্ডা হতে দেবেন। প্রতিদিন সকালে চা পান করার কাপে এই জুস ঢালবেন। যেন কাপের তিনভাগের এক ভাগ ভরতি হয়। খালি পেটে তা খেয়ে নেবেন। রাতে শুতে যাওয়ার আগেও একই পরিমাণ জুস পান করবেন। অল্প ক’দিনেই ফল মিলবে হাতে নাতে। এমনটাই বলছেন গবেষকরা।

তরমুজের বীজেও পুষ্টি
সাধারণত তরমুজ খেয়ে বীজ ফেলে দেয়া হয়। কিন্তু জানেন কি, তরমুজের বীজের কত গুণ? মারণ ব্যাধি থেকে আপনাকে বাঁচাতে পারে তরমুজে বীজ।

গবেষকরা বলছেন, তরমুজের বীজে এমন এক রাসায়নিক থাকে যা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে অত্যন্ত কার্যকরী। এছাড়া তরমুজের বীজে থাকা একাধিক খনিজ গর্ভবতী মহিলাদের বিশেষ উপকারী।

তরমুজের বীজে থাকা লাইসিন নামে উৎসেচক ডায়াবেটিস বা মধুমেহ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। ডায়াবেটিসে চমকে দেওয়ার মতো ফল দিতে পারে তরমুজের এই বীজ।

তরমুজের বীজে ক্যালোরির মাত্রা অত্যন্ত কম। এছাড়া তার মধ্যে রয়েছে ম্যাগনেশিয়াম, লোহা ও ফোলেট, যা গর্ভবতী মহিলাদের জন্য অত্যন্ত উপকারী।

বন্ধ্যাত্ব নারী বা পুরুষ উভয়ের ক্ষেত্রেই হতে পারে। জানেন কি? তরমুজের বীজে থাকা জিঙ্ক স্পার্ম কাউন্ট বাড়াতেও বিশেষ ভূমিকা রাখে।


সিলেটভিউ২৪ডটকম/পিডি