সিলেট সদর উপজেলার ৩ নং খাদিমনগর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন আগামী বৃহস্পতিবার (১৬ মার্চ) অনুষ্ঠিত হবে। এ নির্বাচনে চশমা প্রতীক নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়ছেন বর্তমান চেয়ারম্যান মো. দিলোয়ার হোসেন। আর বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীক নিয়ে প্রথমবারের মতো চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্ধীতা করছেন মো. ইকলাল আহমদ। তারা দু'জনই জয়ের ব্যাপারে বেশ আশাবাদী। তাই এবার বেশ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে খাদিমনগর ইউনিয়ন পরিষদের এ নির্বাচন। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় জানা যাবে নির্বাচনের ফলাফল।


মো. দিলোয়ার হোসেন ২০০৬ সালে ৩নং খাদিমনগর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। ২০১১ সালে তিনি খাদিমনগর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়ে আলোড়ন সৃষ্টি করেন। মোট ৬ জন প্রার্থীর সাথে প্রতিদ্বন্ধীতা করে ১২১৬০ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। এছাড়াও ২০১৬ সালে এপ্রিল মাসে অনুষ্ঠিত খাদিমনগর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আবারো ৬ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্ধীতা করেন। সে নির্বাচনে তিনি ১১৯২৫ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্ধী প্রার্থী ছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা মার্কার প্রার্থী মো. তারা মিয়া পেয়েছিলেন প্রায় সাড়ে ৬ হাজার ভোট। খাদিমনগর ইউনিয়ন পরিষদের বিগত নির্বাচন গুলোতে নিকটতম প্রার্থীরা বর্তমান চেয়ারম্যান মো. দিলোয়া হোসেনের আশেপাশে না থাকলেও আসন্ন এ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে মাত্র দুজন প্রার্থী হওয়ায় সমস্ত হিসেব নিকাশে ব্যাতিক্রম পরিলক্ষিত হচ্ছে। উভয় প্রার্থীর মধ্যে তুমুল প্রতিদ্বন্ধীতার সম্ভাবণা রয়েছে। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকেই সর্বশক্তি নিয়ে মাঠে নামে আওয়ামী লীগ ও ষতন্ত্র প্রার্থীর নেতাকর্মীরা।


প্রতীক বরাদ্দের পর থেকে যে প্রচার প্রচারণা শুরু হয়, তা আজ মঙ্গলবার মধ্যরাত পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে। পরস্পরের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে প্রচার চালান আওয়ামী লীগ প্রার্থী মো. ইকলাল আহমদ ও ষতন্ত্র প্রার্থী দিলোয়ার হোসেন। ভোটারদের মন জয় করতে দিচ্ছেন বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি। নির্বাচনে ছিল আচরণবিধি ভঙ্গের পাল্টাপাল্টি অভিযোগও। সব মিলিয়ে খাদিম নগর ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনের প্রচারকাজে ছিল টানটান উত্তেজনা।
 
নির্বাচনকে সামনে রেখে সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। মঙ্গলবার (১৪ মার্চ) সকাল থেকে কেন্দ্রে কেন্দ্রে নির্বাচনী সরঞ্জাম পাঠিয়েছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা। খাদিমনগর ইউনিয়নে ১৩ টি ভোট কেন্দ্র রয়েছে। তার মধ্যে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর দৃষ্টিতে ধোপাগুল, খাদিমনগর ইউনিয়ন পরিষদ ও লাখাউরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্র গুলো ঝুঁকিপূর্ণ রয়েছে। অপর দিকে ষতন্ত্র প্রার্থী মো. দিলোয়ার হোসেনের দৃষ্টিতে ছালিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্স ভোট কেন্দ্রটি ঝুঁকিপূর্ণ রয়েছে। যদিও এ নিয়ে দ্বিমত রয়েছে ইসিতে। ষতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষ থেকে বিরোধিতা থাকলেও এ নির্বাচনে প্রতিটি কেন্দ্রে ব্যবহার করা হচ্ছে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম)। ইভিএম নিয়ে ভোটারদের ভীতি কাটাতে 'মক ভোট'সহ বিভিন্ন কার্যক্রমও চালিয়েছে ইসি। খাদিমনগর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে সিলেট সদর উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ সম্পাদক ও খাদিমনগর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কার্যনিবার্হী কমিটির সদস্য মো. ইকলাল আহমদকে প্রার্থী করেছে আওয়ামী লীগ। এর আগে ২০১৬ সালে খাদিম নগর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করতে তুমুল প্রচেস্টা চালিয়ে থাকলেও প্রার্থী যাচাই-বাছাইয়ের সময় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা মো. তারা মিয়াকে দলীয় মনোনয়ন দেন। ফলে তিনি নির্বাচনে থেকে সরে দাড়ান। তবে এবার তিনি নির্বাচনের সুযোগ পেয়ে জয়ের ব্যাপারে বেশ আশাবাদী। জয়লাভ করলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সহযোগিতা নিয়ে খাদিমনগর ইউনিয়নের জনগুরুত্বপূর্ণ সমস্যা সমাধানে কাজ করবেন। এলাকাবাসীও বিষয়টি বোঝেন। তাই তিনি জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী।

এ ব্যাপারে মো. দিলোয়ার হোসেন বলেন, ৩নং খাদিম নগর ইউনিয়নবাসী আমাকে মনে প্রানে ভালবাসে। ইউনিয়নবাসীর ভালবাসায় আমি অত্র ইউনিয়ন পরিষদে এক বার সদস্য ও দুইবার বিপুল ভোটের ব্যবধানে চেয়ারম্যান হিসেবে জয়লাভ করেছি। আমি সর্বদা নিজেকে ইউনিয়নবাসীর খাদিম মনে করি। এবারও মহান আল্লাহ তায়ালার হুকুমে ইউনিয়নবাসী আমাকে ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করবেন ইনশাআল্লাহ। 

৩নং খাদিমনগর ইউনিয়নের ফরিংউরা, পাঠানগাওঁ, মহালদিক, লাখাউরাসহ বেশকটি গ্রামের রফিক আহমদ, রুহুল আমিন, আনোয়ার হোসেন, তরিকুলসহ অর্ধশতাধিক সাধারণ ভোটারের সাথে আলাপ কালে জানা যায়, মো. দিলোয়ার হোসেন ষতন্ত্র প্রার্থী হলেও তিনি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির রাজনীতির সাথে অঙ্গাঅঙ্গী ভাবে জড়িত। যার কারণে পুরো ইউনিয়নজুড়ে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা অতি সুকৌশলে তার পক্ষে মাঠে কাজ করে যাচ্ছেন। এছাড়াও দিলোয়ার হোসেন অত্র ইউনিয়নে চেয়ারম্যান হিসেবে একাধিকবার দায়িত্ব পালনের কারণে ইউনিয়নের প্রতিটি গ্রামে নানা উন্নয়ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছেন। ইউনিয়নে দলমতের উর্ধ্বে তার নিজস্ব একটি ভোট ব্যাংক রয়েছে। ফলে বিজয়ের ক্ষেত্রে তার সম্ভাবনা একধাপ এগিয়ে রয়েছে। 

অপরদিকে ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি সামাজিক এবং ক্রীড়া সংগঠক হিসেবে সদর উপজেলাজুড়ে মো. ইকলাল আহমদের রয়েছে আলাদা পরিচিত। তাছাড়া সিলেট সদর উপজেলার খাদিম নগর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের রয়েছে শক্ত ভোট ব্যাংক। ইকবাল আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী হওয়ায় তার নির্বাচনী প্রচারণায় কেন্দ্রীয়, বিভাগীয় ও জেলা এবং উপজেলা পর্যায়ের নেতারা উপস্থিত হয়ে তার পক্ষে ভোট চেয়েছেন। যদি আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও দলীয় সমর্থকেরা নিজ অবস্থানে থেকে নৌকায় ভোট দেন তাহলে ইকলাল আহমদের বিজয় একেবারে উড়িয়ে দেয়া যায়না।

 

সিলেটভিউ২৪ডটকম/ নাজাত