পঞ্চাশ রানের মধ্যে নেই তামিম ইকবাল আর লিটন দাস। দলীয় ৮১ রানে বিদায় নিলেন নাজমুল হোসেন শান্তও। শতরানের মধ্যে তিন উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশ যেন খানিকটা নড়বড়ে। তবে এর পরের গল্পটুকু কেবলই সফলতার, সঙ্গে আফসোসেরও!

আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে আজ মাঠে নেমেছে বাংলাদেশ। সাকিব আল হাসান ও তৌহিদ হৃদয়ের দুর্দান্ত ইনিংস আর মুশফিকুর রহিমের তাণ্ডবে রান ওঠেছে ৮ উইকেটে ৩৩৮। ওয়ানডে ক্রিকেটে এটাই বাংলাদেশের সর্বোচ্চ দলীয় ইনিংস।


যেকোনো মানদণ্ডেই অবশ্যই ভালো স্কোর। ব্যাটিংয়ে সফল বাংলাদেশ। কিন্তু সাকিব আর হৃদয়ের সেঞ্চুরি মিস যে আফসোস জাগাচ্ছে!

টসে হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে তামিম ইকবাল টিকলেন কেবল ৯ বল, রান করলেন ৩। মার্ক অ্যাডায়ারের অফ স্টাম্পের বাইরের বলে ড্রাইভ করতে গিয়ে পল স্টার্লিংয়ের হাতে স্লিপে তুলে দেন ক্যাচ। লিটন দাস থিতু হয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু কার্টিস ক্যাম্পারের খানিকটা ধীরে আসা বলে বোকা বনে ব্যাক-ফুট পুশ করতে গিয়ে শর্ট কাভারে স্টার্লিংয়ের সহজ ক্যাচে পরিণত হন এই ওপেনার। ফেরার আগে ৩১ বলে দুটি চার ও একটি ছয়ে করেন ২৬ রান।

সাকিব ক্রিজে এসে শান্তর সঙ্গে জুটি জমিয়ে তুলছিলেন। এর মধ্যেই অ্যান্ড্রু ম্যাকব্রাইনের বলে বোল্ড হয়ে ফিরেন শান্ত (৩৪ বলে ২৫)।

আজই ওয়ানডে অভিষিক্ত হওয়া তৌহিদ হৃদয় এসে জুটি গড়ে তুলেন সাকিবের সঙ্গে। সাকিব ছিলেন ছনমনে, হৃদয় ঝলমলে। এ দুজনের জুটিতে রান ওঠে পাল্লা দিয়ে। তাদের ১২৫ বলে ১৩৫ রানের দারুণ জুটি ভাঙে সাকিবের বিদায়ে। চতুর্থবারের মতো নড়বড়ে নব্বইয়ে থেমে যান এই অলরাউন্ডার। ৮৯ বলে নয়টি চারে তার ৯৩ রানের ইনিংস থামে হিউমের বলে ক্যাচ দিয়ে। এর মধ্যে হ্যারি টেক্টরের এক ওভারেই সাকিব মারেন পাঁচটি চার!

বাংলাদেশের হয়ে ওয়ানডেতে নড়বড়ে নব্বইয়ে চারবার আটকে যাওয়ার রেকর্ড একার ছিল মুশফিকের। সেই রেকর্ডে ভাগ বসালেন সাকিব।

সেঞ্চুরি না পেলেও সাকিব ছুঁয়েছেন দুটি মাইলফলক। এ ম্যাচের আগে ৭ হাজার রান থেকে ২৪ রান দূরে ছিলেন সাকিব আল হাসান। ব্যাটিংয়ে এসে ইনিংসের ১৯তম ওভারে যখন ২৪ রান পূর্ণ করেন, সাকিব ৭ হাজার রানের তীরে নোঙ্গর ফেলেন। সাকিবের আগে একমাত্র বাংলাদেশি হিসেবে তামিম ইকবাল এই মাইলফলক পেরিয়ে গেছেন। ২৩৩ ওয়ানডেতে ১৪ সেঞ্চুরি ও ৫৫ ফিফটিতে তামিমের রান ৮১৪৬।

সাকিব আল হাসান এখন ওয়ানডে ক্রিকেটের সেই তিন ক্রিকেটারের একজন, যাদের ৭ হাজার রান ও ৩০০ উইকেট আছে। এই তালিকার অপর দুজন শ্রীলঙ্কার সনাৎ জয়াসুরিয়া ও পাকিস্তানের শাহীদ আফ্রিদি। অবশ্য এ দুজনের চেয়ে অনেক কম ম্যাচে এই কীর্তি গড়েছেন সাকিব। আফ্রিদির লেগেছিল ৩৪১ ম্যাচ, জয়াসুরিয়ার ৩৯৭। আর সাকিব মাত্র ২২৮ ম্যাচেই ছুঁয়ে ফেললেন অসাধারণ এই মাইলফলক।

সাকিব ফিরলেও হৃদয় ছুটছিলেন দুরন্ত গতিতে। অভিষেকেই সেঞ্চুরির অনন্য অর্জন যখন তার পায়ে লুটাবে বলে মনে হচ্ছিল, তখনই বোল্ড! হিউমের খানিকটা ভেতরে ঢোকা বলে ছত্রখান হয় হৃদয়ের স্টাম্প। ৮৫ বলে আটটি চার আর দুটি ছয়ে দুর্দান্ত ৯২ রানের ইনিংস আসে তার ব্যাট থেকে।

সাকিবের পর হৃদয়ও নব্বইয়ে কাটা পড়লেন। ওয়ানডে ক্রিকেটে একই ইনিংসে দুই ব্যাটসম্যানের নব্বইয়ের ঘরে আউট হয়ে যাওয়া ১১তম ঘটনা এটি।

তৌহিদ হৃদয় সেঞ্চুরি না পেলেও যা করেছেন, তা-ই বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে অনন্য! বাংলাদেশের হয়ে ওয়ানডে সংস্করণে ১৪০তম ক্রিকেটার তিনি। আর অভিষেকেই ফিফটি করা বাংলাদেশের মাত্র তৃতীয় ক্রিকেটার তিনি। শুধুমাত্র পাঁচ নম্বর পজিশনের কথা যদি বিবেচনায় নেওয়া হয়, তবে এই পজিশনে অভিষেকে ফিফটি করা বাংলাদেশের একমাত্র ব্যাটার হৃদয়।

অভিষেক ওয়ানডেতে বাংলাদেশের পক্ষে এর আগে ফিফটি করেছিলেন নাসির হোসেন ও ফরহাদ রেজা। নাসির জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ২০১১ সালে করেন ৬৩ রান, ফরহাদ রেজা একই প্রতিপক্ষের বিপক্ষে ২০০৬ সালে করেন ৫০ রান। এতো দিন নাসিরের ৬৩ রানই ছিল বাংলাদেশের হয়ে অভিষেকে ওয়ানডেতে সর্বোচ্চ রান। আজ তা পেরিয়ে গেছেন তৌহিদ হৃদয়।

সাকিবের বিদায়ে ক্রিজে আসা মুশফিকুর রহিম শুরু থেকেই তুলেন ঝড়। সাকিব যখন বিদায় নেন, দলীয় রান তখন ৩৭.২ ওভারে ২১৬। মঞ্চটা সাজানো। সেই মঞ্চে শুধু ভালো কিছুই আশা করা যায়।

মুশফিকুর রহিম এলেন এবং ঝড় তুললেন! সাজানো মঞ্চে চার-ছয়ের ফুলঝুরিতে উন্মাতাল করে তুললেন গ্যালারি। ২৬ বলে সমান তিনটি করে চার ও ছয়ে ১৬৯.২৩ স্ট্রাইক রেটে ৪৪ রান করে বিদায় নেন এই মিডল অর্ডার ব্যাটার।

ইয়াসির আলী চৌধুরী ও তাসকিন আহমেদ বিদায় নেন দ্রুত। বাংলাদেশ করে ৮ উইকেটে ৩৩৮ রান। ওয়ানডে ক্রিকেটে এটাই টাইগারদের সর্বোচ্চ দলীয় ইনিংস।

এর আগে ২০১৯ বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৮ উইকেটে ৩৩৩ রানই ছিল সর্বোচ্চ। সে ম্যাচে অজিরা করেছিল ৩৮১ রান।

সিলেটভিউ২৪ডটকম/আরআই-কে