মঙ্গলবার (২১ মার্চ) পালন করা হচ্ছে ‘আন্তর্জাতিক বন দিবস’। দিবসটি উপলক্ষে সিলেট বিভাগীয় বন বিভাগের উদ্যোগে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে। সকালে সিলেট জেলা প্রশাসকের সম্মেলনকক্ষে এ সভা অনুষ্ঠিত হবে। রাতারগুল জলাবন ১৯৭৩ সালে সংরক্ষিত ঘোষণা করে বন বিভাগ। নদী ও হাওরবেষ্টিত ৫০৪ দশমিক ৫০ একর আয়তনের এ এলাকা প্রকৃতিপ্রেমীদের কাছে অনেকটা অজানা ছিল।জানার পর রাতারগুল বন পর্যটনকেন্দ্র নয়। রাতারগুল বনকে প্রথম থেকেই সংরক্ষিত বন হিসেবে ঘোষণা করাসহ একটি মহাপরিকল্পনা করতে দাবি জানিয়ে আসছে পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো।


সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার মিঠাপানির জলাবন রাতারগুল। নৌকায় করে পর্যটকেরা এ বনের সৌন্দর্য উপভোগ করছেন। রাতারগুল জলাবনকে (সোয়াম্প ফরেস্ট) পরিকল্পিত ব্যবস্থাপনার আওতায় আনতে দুই বছর আগে সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলা প্রশাসন মহাপরিকল্পনা করার উদ্যোগ নেয়। সে সময় শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদেরও এর সঙ্গে যুক্ত করার কথা বলা হয়। কিন্তু সে পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ এখনো শুরু হয়নি।


 

পরিবেশবাদী সংগঠন ভূমিসন্তান বাংলাদেশের সমন্বয়ক আশরাফুল কবীর বলেন, রাতারগুল বন পর্যটনকেন্দ্র নয়। রাতারগুল বনকে প্রথম থেকেই সংরক্ষিত বন হিসেবে ঘোষণা করাসহ একটি মহাপরিকল্পনা করতে দাবি জানিয়ে আসছে ভূমিসন্তান বাংলাদেশসহ পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো। কিন্তু এতে বারবারই অনীহা এবং সমন্বয়হীনতা লক্ষ করা গেছে। 

 

বনে বিভিন্ন বিরল প্রজাতির প্রাণী রয়েছে। পর্যটকদের জন্য বন্য প্রাণীর ক্ষতিসাধন কিংবা স্বাভাবিক জীবন যাতে নষ্ট না হয়, সেটিই পরিবেশবাদীদের চাওয়া। এ ছাড়া বনে বাদ্যযন্ত্র ও উচ্চ শব্দের ব্যবহার বন্ধ রাখতে হবে। বনের ভেতরে প্লাস্টিক বা অন্য আবর্জনা ফেলা যাবে না।

 

পর্যটকদের জন্য বন্য প্রাণীর ক্ষতিসাধন কিংবা স্বাভাবিক জীবন যাতে নষ্ট না হয়, সেটিই পরিবেশবাদীদের চাওয়া।


সম্প্রতি রাতারগুল বন ঘুরে দেখা গেছে বনে অতিথি পাখিদের আনাগোনা। বনের অভ্যন্তরে পানি কিছুটা কম হলেও নৌকা চলাচলের পথ রয়েছে। বনের তিনটি ঘাট—চৌরঙ্গী, চৌমুহনী (রাতারগুল গ্রাম) ও মোটরঘাটে অর্ধশতাধিক করে নৌকা আছে। পর্যটকদের আনাগোনাও ছিল চোখে পড়ার মতো। রাতারগুলে পর্যটন মৌসুমে প্রতিদিন হাজার হাজার পর্যটক বেড়াতে আসেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয় লোকজন।


গোয়াইনঘাট উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, ফতেপুর ইউনিয়নে অবস্থিত রাতারগুল জলাবন ১৯৭৩ সালে সংরক্ষিত ঘোষণা করে বন বিভাগ। নদী ও হাওরবেষ্টিত ৫০৪ দশমিক ৫০ একর আয়তনের এ এলাকা প্রকৃতিপ্রেমীদের কাছে অনেকটা অজানা ছিল।

২০১২ সালের পর থেকে এ এলাকায় অনেকে ঘুরতে আসা শুরু করেন। পরিবেশকর্মীদের আপত্তি উপেক্ষা করে বন বিভাগ ২০১৪ সালে রাতারগুল বনে ৫০ ফুট উঁচু ‘ওয়াচ টাওয়ার’ স্থাপন করা হয়। পরিবেশবাদীরা শুরু থেকে রাতারগুল বনে কোনো ইট, পাথরের কোনো স্থাপনা নির্মাণ না করার দাবি করে আসছিলেন।

 

বন বিভাগের উদ্যোগে বন ব্যবস্থাপনার জন্য স্থানীয় লোকজন নিয়ে সিএমসি কমিটি গঠন করা হয় ২০১৬ সালে। আর উপজেলা পর্যটন কমিটি রাতারগুলে আসা পর্যটকদের বিষয়ে নজর রাখে। প্রায় দুই বছর ধরে বনে ঘোরার জন্য পর্যটকদের কাছ থেকে একটি নির্ধারিত ফি রাখছে বন বিভাগ। বর্তমানে পর্যটকদের বনে প্রবেশে জনপ্রতি ৫৭ টাকা ৫০ পয়সা দিতে হয়। বনে প্রবেশে সরকারি ফি থেকে বছরে গড়ে আদায় হয় প্রায় ৮০ লাখ টাকা।

 

উপজেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, ২০২১ সালে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন বিভাগের শিক্ষকদের নিয়ে রাতারগুল বনকে নিয়ে একটি মহাপরিকল্পনা করার উদ্যোগ নেওয়া হয়। সে সময় শিক্ষকেরা বনটি পরিদর্শন করে বলেন, জলাবনখ্যাত রাতারগুলকে পরিকল্পিত ব্যবস্থাপনায় আনতে না পারলে রক্ষা করা সম্ভব নয়। কিন্তু এরপর আর বিষয়টি এগোয়নি।

 

গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও উপজেলা পর্যটন কমিটির সভাপতি তাহমিলুর রহমান বলেন, মহাপরিকল্পনা গ্রহণের উদ্যোগ নেওয়া হলেও সেটি এগোয়নি। এর মূল কারণ, বনের স্থানীয় ব্যবস্থাপনা (সিএমসি) কমিটি পুনর্গঠন না হওয়া। এ ছাড়া নীতিমালা অনুযায়ী স্থানীয়ভাবে আদায় করা রাজস্ব থেকে ৫০ শতাংশ ফেরত আসার কথা। সেগুলো পাওয়া যায়নি। ফলে সব মিলিয়ে মহাপরিকল্পনাটি এগোয়নি। সিএমসি কমিটি বন বিভাগের মাধ্যমে হয়ে থাকে। বন বিভাগ কমিটি গঠন করে না দিলে উপজেলা প্রশাসন কিংবা পর্যটন কমিটি সেটি করতে পারবে না।

 

এ বিষয়ে সিলেট বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. তৌফিকুল ইসলাম বলেন, নীতিমালা অনুযায়ী আদায় করা রাজস্বের ৫০ শতাংশ উন্নয়নমূলক কাজে ব্যয়ের বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ে প্রকল্প প্রস্তাব করে অনুমোদন আনতে হয়।বন বিভাগের পক্ষ থেকে সেগুলোর নথি সরবরাহ করা হয়েছে। মহাপরিকল্পনার বিষয়ে বন বিভাগকে কোনো কিছু জানানো হয়নি।

সিলেটভিউ২৪ডটকম / প্রথম আলো / ইআ-০৩