চতুর্থ পর্যায়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় ৩৯ হাজার ৩৬৫টি গৃহহীন ও ভূমিহীন পরিবার পেল দুই শতক জমিসহ আধাপাকা ঘর। বুধবার সকালে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হয়ে এসব ঘর হস্তান্তর করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।এর মধ্যে রয়েছে সিলেটের সীমান্তবর্তী এলাকা গোয়াইনঘাট উপজেলাও।


সিলেটের সীমান্তবর্তী এলাকা গোয়াইনঘাট উপজেলার নন্দিরগাঁও ইউনিয়নের ‘নোয়াগাঁও আশ্রয়ন প্রকল্প’টি এখন সকলের নজর কাড়ছে, যাহা দেশের আশ্রয়ন প্রকল্পের মধ্যে হতে যাচ্ছে একটি মডেল গ্রাম। এলক্ষ্যে উক্ত প্রকল্প বাস্তবায়নের শুরু থেকে এপর্যন্ত সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছে গোয়াইনঘাট উপজেলা প্রশাসন।



মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে “বাংলাদেশের একজন মানুষও ভুমিহীন বা গৃহহীন থাকবে না” প্রধানমন্ত্রীর এ নির্দেশনা বাস্তবায়নে দেশের সকল ভূমিহীন ও গৃহহীন অর্থাৎ “ক” শ্রেণীর পরিবার পুনর্বাসন কার্যক্রমের অংশ হিসেবে সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলায় ইতোমধ্যে ৮৯৫টি গৃহ নির্মাণ করা হয়েছে যার মধ্যে ‘নোয়াগাঁও আশ্রয়ণ প্রকল্পে’ একসঙ্গে নির্মিত হয়েছে ১শ’টি ঘর। এর আগে ওই উপজেলায় একসঙ্গে ১শ’টি একই এলাকায় একসঙ্গে নির্মিত হয়নি। তবে  প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ে এক-ই এলাকায় একসঙ্গে সর্বোচ্চ ৭০ টি, অন্যস্থানে একত্রে ১৫ টি ও ১৬টি ঘর রয়েছে। 
এ ছাড়াও বর্তমানে ৪র্থ পর্যায়ে এ উপজেলার বিভিন্নস্থানে আরোও ২০৬টি গৃহের নির্মাণ কাজ শেষে বুধবার (২২ মার্চ) এসব ঘর হস্তান্তর করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সব মিলিয়ে এ উপজেলায় আশ্রয়ন প্রকল্পের আওতায় প্রথম পর্যায়ে ৫শ’ টি, ২য় পর্যায়ে ৪০ টি, ৩য় পর্যায়ে ৩৫২ টি ও ৪র্থ পর্যায়ে ২০৬ টি ঘর নির্মাণ করা হয়েছে।


উপজেলা  প্রশাসন সূত্র জানায়, সীমান্তবর্তী প্রাকৃতিক সম্পদের গর্ভধারিণী এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি হিসেবে খ্যাত সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার নন্দিরগাঁও ইউনিয়নের হাওয়র বেষ্টিত এলাকার মধ্যখানে নির্মিত ‘নোয়াগাঁও আশ্রয়ন প্রকল্প’টি এখন দৃশ্যমান, অনেকদূর থেকেও সকল মানুষের নজর ও কাড়ছে এ আশ্রয়ন  প্রকল্পটি। উপজেলা প্রশাসনের তথ্যনুসারে গোয়াইনঘাট উপজেলাধীন নন্দিরগাঁও ইউনিয়নের নোয়াগাও  গ্রাম থেকে এক কিলোমিটার পূর্ব দিকে ৫ দশমিক ৩৬ একর জমির চতুর্পাশে খাল খনন পূর্বক ৩ দশমিক ২৫ একর জমি ৬-৭ ফুট উচ্চতায় ভরাট করে প্রায় ২বছর কম্পেকশন এর পর সেই জমিতে ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। ভরাটকৃত এ জমিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার হিসেবে নির্মাণ করা হয়েছে ১০০ টি ঘর।

নোওয়াগাও মৌজা-লামাপাড়া, জে.এল নং- ১৬৬, খতিয়ান নং- ১, দাগ নং- ৪৭, ৪৯ ও ৫০ এতে মোট জমির পরিমান ৫ দশমিক ৩৬ একর (দৈর্ঘ্য ৭৩০ ফুট, প্রস্থ ৩২০ ফুট), ভরাটকৃত জমির পরিমাণ ৩ দশমিক ২৫ একর (দৈর্ঘ্য ৬৩৫ ফুট, প্রস্থ ২২৫ ফুট) উক্ত জমির চতুর্পাশে খাল খনন পূর্বক জমি ভরাট করা হয়েছে। খননকৃত খালের দৈর্ঘ্য ১৪৫০ ফুট, খালের পানিধারণ ক্ষমতা, ৪ দশমিক ৮৮ মিলিয়ন গ্যালন, প্রকল্পে নির্মিত গৃহ সংখ্যা ১শ’টি (প্রতিটি গৃহে দুটি বেডরুম, একটি বারান্দা, একটি রান্নাঘর ও একটি টয়লেট রয়েছে) প্রতিটি ঘরে  নির্মাণ ব্যয় ২ লক্ষ ৫৯ হাজার ৫শ টাকা। এতে গভীর নলকূপ সংখ্যা হচ্ছে মোট ১০ টি (সাবমার্জেবল পাম্প ও ওভারহ্যাড ট্যাংকসহ), প্রতিটি ঘরে বিদ্যুৎ ব্যবস্থা, প্রতিটি গৃহে পৃথক মিটারসহ বিদ্যুৎ সংযোগ প্রদান করা হয়েছে। যোগাযোগ ব্যবস্থা সিলেট হতে গোয়াইনঘাট উপজেলাগামী পাকা সড়ক হতে প্রকল্পের সংযোগ সড়কের দূরত্ব ১কিলোমিটার যা পাকাকরণের কার্যক্রম চলমান।স্থানীয় বাজার হতে দূরত্ব ইউনিয়ন এর প্রধান বাজার “সালুটিকর বাজার” হতে দূরত্ব ৪ কিলোমিটার।


মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে ভূমিহীন ও গৃহহীন একশতটি পরিবারের প্রত্যেকে পাবেন ২ শতক জমিসহ ১টি ঘর। এই ঘরের উপকারভোগীর নামের তালিকায় যাদের নাম রয়েছে  তাদের কেউ কেউ এখনো থাকেন অন্যের জায়গায় ঘর তুলে, অনেকে আবার বসবাস করছেন খাস জমিতে। আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরগুলোর মাধ্যমে প্রকৃত গৃহহীন ও ভুমিহীন পরিবারগুলো পাবে তাদের স্বপ্নের আপন ঠিকানা। নিজের জায়গায় নিজের ঘরের সামনে দাঁড়ানোর নতুন স্বপ্ন উঁকি দিয়েছে তাদের মনে। অসহায় এ মানুষগুলো নিজেদের স্থায়ী ঠিকানা পেয়ে মহাখুশি। তারা এখন নিজদের আত্মপরিচয়ে মাথা উঁচু করে নতুন জীবনে যাত্রার স্বপ্ন দেখছেন।


সিলেটভিউ২৪ডটকম/মতিন/ইআ-০৩