এক জয়েই বদলে গেছে খেলোয়াড়দের শরীরী ভাষা। সেখানে দুর্ভাবনার বদলে আনন্দের লুকোচুরি, সবশেষ নেপাল ম্যাচে হেরে যাওয়ার ক্ষতে কিছুটা প্রলেপ দেওয়ার তৃপ্তি, সিশেলসের বিপক্ষে দ্বিতীয় ম্যাচে জয়ের ধারায় থাকার আকাঙ্ক্ষার ছাপ স্পষ্ট।

টিম অফিসিয়ালদের আচরণেও আমূল পরিবর্তন। বিশেষ করে ফিজিও ইভান রাজলগের। সিশেলসের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচের আগের দিনের অনুশীলনে কাউকে ক্যামেরা বের করে ভিডিও করতে দেখলেই চেচিয়ে উঠছিলেন। বলছিলেন, ‘অফ দ্য ক্যামেরা।’ রোববার সিলেট জেলা স্টেডিয়ামে প্রস্তুতির সময় কাউকে ভিডিও করতে বারণ করলেন না। গণমাধ্যমকর্মীদের জন্য সবকিছু অবারিত। খেলোয়াড়দের সঙ্গেও খুনসুটিতে মেতে থাকলেন রাজলগ।


অবশ্য নিজের কাজটুকু রাজলগ ঠিকই করে গেলেন দায়িত্ব নিয়েই। অনুশীলন শেষে স্টেডিয়ামের এক কোণে ড্রামের মধ্যে রাখা বরফে কোমর অব্দি গলিয়ে দাঁড়িয়ে থাকার নির্দেশনা ছিল, যেটাকে আইস-বাথ বলে। অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়া একটু কৌতুকপূর্ণ দৃষ্টিতে ফিজিও দিকে তাকিয়ে বললেন, “করতেই হবে?”

রাজলগের বিন্দুমাত্র ছাড় দিতে রাজি নন; রাশভারী কণ্ঠে বললেন, “ইয়েস।” কাজী তারিক রায়হান ও সাদউদ্দিনের মতো জামালও হাসি মুখে ড্রামের মধ্যে গলিয়ে দিলেন শরীরটা। আগে-পরে বাকিরাও নিয়ম মেনে ড্রামে ঢুকলেন।

এই মাঠেই আগামী মঙ্গলবার দ্বি-পাক্ষীক সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ ম্যাচে সিশেলসের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ। এই দুই ম্যাচের সিরিজকে কোচ হাভিয়ের কাবরেরা পাখির চোখ করেছেন আসছে জুনের সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ ও বিশ্বকাপ বাছাইয়ের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে। রোববারের প্রস্তুতিতে তাই খেলোয়াড়, সহকারীরারা যতই প্রাণবন্ত, কাবরেরা যেন উল্টো মেরুতে, পুরোটা সময় কাটালেন ভীষণ ব্যস্ততায়।


২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে লাল-সবুজের পতাকা নিয়ে দলীয় ছবি তোলা হলো। দলীয় অনুশীলন, রানিং, স্ট্রেচিং হলো আগের মতো। মাঠের এক কোণে বরাবরের মতোই গোলকিপিং কোচের সঙ্গে ঘাম ঝরালেন আনিসুর রহমান জিকো, মিতুল মার্মারা। 

এরপর দুই দলে ভাগ হয়ে খেলাও হলো কিছুক্ষণ। ফরোয়ার্ডদের উদ্দেশে স্প্যানিশ ভাষায় চিৎকার করে কাবরেরা দিতে থাকলেন নানা নির্দেশনা। বোঝা গেল, পরের ম্যাচে মতিন-সজীব-কিংসলেদের কাছে গোল চান তিনি।

সৌদি আরবের প্রস্তুতির ফাঁকে মালাবির বিপক্ষে খেলা ‘আন-আফিসিয়াল’ ম্যাচে বাংলাদেশ ড্র করেছিল ডিফেন্ডার বিশ্বনাথ ঘোষের গোলে। সিশেলসের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে দলের জয়ের নায়ক আরেক ডিফেন্ডার তারিক।

সিশেলসের বিপক্ষে অভিষেকেই সুযোগ কড়া নেড়েছিল এলিটা কিংসলের দুয়ারে। গোলের খাতায় নাম তুলে অভিষেক ম্যাচ রাঙিয়ে রাখার পাশাপাশি ফরোয়ার্ডদের ব্যর্থতা ভোলানোর, কিন্তু পারেননি তিনি। দ্বিতীয় ম্যাচে জালের দেখা পেতে মুখিয়ে আছেন তিনি। জানালেন আগামী সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ নিয়ে লক্ষ্যের কথাও।

“সত্যি বলতে আগের ম্যাচে আমি নার্ভাস ছিলাম। প্রথমবারের মত জাতীয় দলের জার্সি গায়ে চাপানো, মাঠ নেমে গোলের জন্য চাপ অনুভব করছিলাম। দুটো একসঙ্গে সামলানো সত্যিই কঠিন। তবে আমি বলব, আমাকে চাপ মুক্তভাবে খেলতে দিন, সুযোগ তৈরি করে আমিও গোল এনে দিব।”

“কোচের সঙ্গে প্রথম মিটিংয়ে আমার এই বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। আমরা এবার শুধু সাফে ভালো খেলতে চাই না, এবার শিরোপা জয়ে জন্য খেলতে চাই। আমাদের লক্ষ্য সাফ চ্যাম্পিয়ন হওয়া। জানি না ভবিষ্যতে কি হবে? তবে আমাদের চিন্তা শুধু গ্রুপ পর্ব পার করা নিয়ে নয়, আমাদের লক্ষ্য সাফ চ্যাম্পিয়ন হওয়া।”

সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ শিরোপা খুব ভালোভাবে পরিকল্পনায় থাকলেও কাবরেরার বর্তমান ভাবনা সিশেলসের বিপক্ষে দ্বিতীয় ম্যাচ নিয়ে। প্রস্তুতি শেষ করে ডাগআউটে রাখা বেঞ্চে গা এলিয়ে দিয়ে এই স্প্যানিশ কোচ মনে করিয়ে দিলেন ফুটবলীয় বাস্তবতা।

“সিশেলসের বিপক্ষে দ্বিতীয় ম্যাচে ভালো না করলেই সমালোচনা শুরু হবে। আপাতত তাই আমার ভাবনায় কেবল এই ম্যাচটি।”


সিলেটভিউ২৪ডটকম / বিডি-নি্উজ / ডি.আর