সিলেট মহানগরের তালতলার হাজী নুরজাহান হোটেল আবাসিক-এ ইয়েমেনি এক নাগরিকের সঙ্গে প্রতারণার অভিযোগ উঠেছে। তবে বিদেশি ওই নাগরিকের গতিবিধিও সন্দেহজনক মনে হচ্ছে পুলিশের কাছে। ইয়েমেনি নাগরিকের নাম মো. মাজেদ। তিনি প্রায় ২ মাস থেকে সিলেট ও ঢাকায় অবস্থান করছেন। তিনি একটি ব্যবসার সঙ্গে জড়িত বলে দাবি করেছেন পুলিশের কাছে। তবে মাজেদের সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যায়নি। 

পুলিশ ও সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মো. মাজেদ গত দেড় মাসের বেশি সময় ধরে সিলেট ও ঢাকায় অবস্থান করছেন। এক মাস আগে তিনি সিলেটে আসেন এবং তালতলার হাজী নুরজাহান হোটেল আবাসিক-এ একটি কক্ষ ভাড়া নিয়ে থাকতে শুরু করেন। এসময় জামিল আহমদ নামের হোটেল নুরজাহানের কর্মচারীর সঙ্গে সখ্যতা গড়ে উঠে মাজেদের। জামিল কিছুদনি সৌদি আরবে থাকার সুবাধে মাজেদের আরবি ভাষা বুঝতেন এবং তাদের মাঝে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি হয়। একপর্যায়ে ইয়েমেনি নাগরিক তার সৌদির এক ব্ন্ধুর কাছে বাংলাদেশি ৩৭ হাজার টাকা পরিমাণের রিয়াল পাঠানোর বিষয়ে জামিলের সঙ্গে পরামর্শ করেন। এসময় জামিল বলেন- ঢাকায় তাদের ট্রাভেলস রয়েছে। এই ট্রাভেলসের মাধ্যমে মাজেদের সেই বন্ধুর কাছে রিয়াল পাঠাতে পারবেন। তাকে যেন মাজেদ ৩৭ হাজার টাকা দিয়ে দেন। এ কথার পর মাজেদ ৩৭ হাজার টাকা জামিলকে দিয়ে দেন। কিন্তু পরবর্তীতে মাজেদ সৌদিতে থাকা তার বন্ধুর সঙ্গে যোগাযোগ করে জানতে পারেন- তিনি ১০ হাজার টাকা পেয়েছেন। বাকি টাকা পাননি। 


এদিকে, হাজী নুরজাহান হোটেল আবাসিক-এ ১০ দিন থেকে মাজেদ ঢাকায় চলে যান। সৌদিতে বন্ধুর কাছে পুরো টাকা পৌঁছায়নি শুনে তিনি ফের সিলেটে আসেন এবং নুরজাহান হোটেলের ম্যানেজারকে বিষয়টি জানান। এসময় ম্যানেজার হোটেলের কর্মচারী জামিলকে ডেকে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে তিনি ৩৭ হাজার টাকা নেওয়ার কথা স্বীকার করেন। তবে জামিল এসময় বলেন- মাজেদের বন্ধুর কাছে টাকা পৌঁছানোর জন্য সৌদিতে তিনি যার কাছে টাকা পাঠিয়েছিলেন সেই লোক বাকি টাকা আত্মসাত করেছেন।

এসময় হোটেল ম্যানেজার জামিলকে ইয়েমেনি নাগরিকের টাকা ফিরিয়ে দিতে নির্দেশ দেন। কিন্তু এরপর বেশ কয়েকদিন চলে গেলেও জামিল আর মাজেদকে টাকা ফেরত দেননি। টাকা না দেওয়ায় মাজেদ মঙ্গলবার (২৮ মার্চ) সিলেটে এসে ফের হোটেল ম্যানেজারের কাছে বিচারপ্রার্থী হন এবং তার পরিচিত সাবেক সৌদি প্রবাসী সুরমা মার্কেটের এক ব্যবসায়ীকে বিষয়টি অবগত করেন। সেই ব্যবসায়ী বুধবার (২৯ মার্চ) রাত ১০টার দিকে ইয়েমেনি নাগরিক মাজেদকে নিয়ে নুরজাহান হোটেলে যান এবং ম্যানেজার ও জামিলের কাছে টাকার ফেরতের বিষয়ে জানতে চান। এসময় সেখানে উত্তেজনাকর পরিস্থিত তৈরি হলে খবর পেয়ে কোতোয়ালি থানার একদল পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। 

পুলিশের উপস্থিতিতে জামিল ইয়েমেনি নাগরিক মাজেদের টাকা আগামী ৫ এপ্রিল ফিরিয়ে দিবেন বলে প্রতিশ্রুতি দেন। তবে মাজেদ আগামী ১ এপ্রিল তার দেশে ফিরে যাবেন বলে এর আগেই টাকা বুঝে পাওয়ার দাবি জানান। এ রিপোর্ট লেখা (রাত সোয়া ১১টা) পর্যন্ত পুলিশের উপস্থিতিতে হোটেলে সমঝোতা-বৈঠক চলছে। 

কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সিলেটভিউ-কে এ বিষয়ে বলেন- তালতলার হাজী নুরজাহান হোটেল আবাসিক-এ উত্তেজনার খবর পেয়ে আমাদের একটি টিম সেখানে গিয়ে বিস্তারিত জানতে পারে। তবে ইয়েমেনি সেই নাগরিকের কথায় বেশ গড়মিল রয়েছে। বাংলাদেশে তার থাকার বৈধ সব কাগজপত্র আছে কি না সন্দেহ আছে। তাছাড়া সিলেট ও ঢাকায় অবস্থান করে তিনি কী ব্যবসা করেন তাও অস্পষ্ট। তাকে আমরা থানায় লিখিত অভিযোগ দিতে পরামর্শ দিয়েছি। পাশাপাশি তার উপরও নজর রাখছি। আইনশৃঙ্খলা বিঘ্নকারী কিছু তার দ্বারা সংঘটিত হতে দেখলে তাকে আমরা আইনের আওতায় নিয়ে আসার চেষ্টা করবো। 


সিলেটভিউ২৪ডটকম / ডালিম