সরকারি হাসপাতালের অবকাঠামো ও সক্ষমতার ব্যবহার নিশ্চিত করতে চায় সরকার। এর অংশ হিসেবে চিকিৎসকদের নির্দিষ্ট কর্মঘণ্টার পর হাসপাতালেই বৈকালিক সেবা কার্যক্রম শুরু করেছে। তবে এর জন্য আলাদাভাবে টাকা গুনতে হবে রোগীদের। চিকিৎসকের পদমর্যাদা অনুযায়ী ২০০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত ফি দিতে হবে জনগণকে। এছাড়া পরীক্ষা ও সার্জারির জন্য দিতে হবে আলাদা ফি।
বৃহস্পতিবার (৩০ মার্চ) মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সরকারি স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা-১ শাখার উপসচিব রোকন উদ্দিন স্বাক্ষরিত নীতিমালায় এ তথ্য জানানো হয়েছে।
ঘোষিত নীতিমালা অনুযায়ী, ‘ইনস্টিটিউশনাল প্র্যাকটিস’-এ একজন অধ্যাপকের ফি (ভিজিট) হবে ৫০০ টাকা। সহযোগী অধ্যাপক বা সিনিয়র কলসালটেন্টের ফি হবে ৪০০ টাকা। সহকারী অধ্যাপক বা জুনিয়র কনসালটেন্ট অথবা পোস্ট গ্রাজুয়েট ডিগ্রিধারীর ফি হবে ৩০০ টাকা। আর এমবিবিএস, বিডিএস ও সমমানের চিকিৎসকদের ফি হবে ২০০ টাকা। এর একটা অংশ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান, চিকিৎসকের সহযোগীরা পাবেন।
এছাড়া সকল মাইনর সার্জারির জন্য ১৮০০ এবং মেজর সর্জারি জন্য ২৫০০ টাকা চিকিৎসকের ফি নির্ধারণ করা হয়েছে।
সম্ভাব্য সেবাসমূহ
১. কনসালটেশন সেবা:
২. ডায়াগনস্টিক ও ল্যাবরেটরি সেবা;
৩. রেডিওলচিজ ও ইমেজিং সেবা
৪. সার্জিক্যাল সেবা
যে পদ্ধতিতে হবে রোস্টার:
মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল বা বিশেষায়িত হাসপাতালে অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক, সহকারী অধ্যাপক পদমর্যাদার চিকিৎসকরা সপ্তাহে ২দিন করে সেবা দেবেন। এছড়া রোস্টারের বাইরে একজন এনেস্থেশিয়ওলজিস্ট দায়িত্ব পালন করবেন। ল্যাবরেটরি সাপ্তাহিক ছুটি ছাড়া প্রতিদিন বিকাল ৩টা হতে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত চালু থাকবে।
এছাড়াও চিকিৎসকের প্রাপ্যতা, হাসপাতালের শয্যা সংখ্যা, রোগী নিবন্ধনের হার, শয্যা সক্ষমতা ইত্যাদি বিবেচনা সাপেক্ষে হাসপাতালের পরিচালক মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষের সাথে পরামর্শক্রমে ডিউটি রোস্টার নির্ধারণ করবেন।
জেনারেল বা জেলা সদর হাসপাতাল এবং উপজেলা পর্যায়ের হাসপাতালে সপ্তাহে দুইদিন সিনিয়র কনসালটেন্ট (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে), জুনিয়র কনসালটেন্ট ২ দিন এবং জেনারেল প্রাকটিশনার ২ দিন করে দায়িত্ব পালন করবেন। চাহিদা অনুযায়ী অ্যানেস্থিওলজিস্ট থাকবে। ল্যাবরেটরি বিকেল ৩টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত চালু থাকবে।
এছাড়া চিকিৎসকের প্রাপ্যতা, হাসপাতালের শয্যা সংখ্যা, রোগী নিবন্ধনের হার, বেড অকুপেন্সি ইত্যাদি বিবেচনা সাপেক্ষে মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে এমন জেলা সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক প্রযোজ্য ক্ষেত্রে মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষের সাথে পরামর্শক্রমে ডিউটি রোস্টার নির্ধারণ করবেন।
যে প্রক্রিয়ায় চলবে সেবা:
বৈকালিক এ সেবা গ্রহণের জন্য বেলা ২টা ৩০ মিনিট থেকে ৫টা পর্যন্ত রোগীর রেজিস্ট্রেশন কার্যক্রম চলবে। তবে সার্বিক অবস্থা বিবেচনা করে হাসপাতাল প্রধান রেজিস্টেশনের সংখ্যা নির্ধারণ করবেন। বৈকালিক সার্ভিসে ব্যবহৃত রেজিস্টেশন কার্ড শুধুমাত্র বৈকালিক আউট ডোরের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হবে। যদি ভর্তিযোগ্য রোগী থাকে তবে তাকে যথাযথ প্রক্রিয়ায় হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে।
আর্থিক ব্যবস্থাপনা :
‘ইনস্টিটিউশনাল প্র্যাকটিস’-এ একজন অধ্যাপকের ফি (ভিজিট) হবে ৫০০ টাকা। এই টাকার মধ্যে সংশ্লিষ্ট অধ্যাপক পাবেন ৪০০ টাকা। চিকিৎসা সেবায় সহযোগিতাকারী ৫০ টাকা এবং সার্ভিস চার্জ হবে ৫০ টাকা। সহযোগী অধ্যাপক বা সিনিয়র কলসালটেন্টের ফি হবে ৪০০ টাকা। এর মধ্যে সংশ্লিষ্ট সহযোগী অধ্যাপক বা সিনিয়র কলসালটেন্ট পাবেন ৩০০ টাকা, চিকিৎসা সেবায় সহযোগিতাকারী পাবেন ৫০ টাকা আর সার্ভিস চার্জ কাটা হবে ৫০ টাকা।
এছাড়া সহকারী অধ্যাপক বা জুনিয়র কনসালটেন্ট অথবা পোস্ট গ্রাজুয়েট ডিগ্রিধারীর ফি হবে ৩০০ টাকা। এরমধ্যে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক পাবেন ২০০ টাকা, চিকিৎসা সেবায় সহযোগিতাকারী পাবেন ৫০ টাকা আর সার্ভিস চার্জ কাটা হবে ৫০ টাকা। আর এমবিবিএস বা বিডিএস ও সমমানের চিকিৎসকদের ফি হবে ২০০ টাকা। এরমধ্যে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক পাবেন ১৫০ টাকা। এ ক্ষেত্রে চিকিৎসা সেবায় সহযোগিতাকারীর জন্য ২৫ টাকা এবং সার্ভিস চার্জ ২৫ টাকা ধার্য করা হয়েছে।
এছাড়া মাইনর সার্জারির ক্ষেত্রে ১ হাজার ৮০০ টাকা পাবেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক (১০০০+ ৮০০), ৪০০ টাকা পাবেন সহায়তাকারী নার্স ও অন্যরা এবং ৩০০ টাকা সার্ভিস চার্জ পাবেন। মেজর সার্জারির ক্ষেত্রে ২ হাজার ৫০০ টাকা পাবেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক (১৫০০+১০০০), ৫০০ টাকা পাবেন সহায়তাকারী নার্স ও অন্যরা এবং ৫০০টাকা সার্ভিস চার্জ পাবেন। ডায়াগনস্টিক সেবায় প্রাপ্ত অর্থ ৫০ শতাংশ চিকিৎসা সেবায় সহযোগী এবং ৫০ শতাংশ সার্ভিস চার্জ হিসেবে জমা হবে। রেডিওলজি ও ইমেজিংয়ে তা ৩০ ও ৭০ শতাংশ হারে ভাগ হবে।
যেসব বিষয় লক্ষ্য রাখা হবে
১. কনসালটেশন সার্ভিসে বিশেষ টিকেটসহ অন্যান্য আনুষাঙ্গিক খরচ সার্ভিস চার্জ এর আয় থেকে কর্তৃপক্ষের অনুমোদনক্রমে ব্যয় করতে হবে।
২. রোগী দেখার ব্যবস্থা, অপেক্ষা কক্ষ, রোগ নির্ণয়, পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও অন্যান্য যাবতীয় কাজের জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি, রাসায়নিক দ্রব্য ও জনবল ইত্যাদি যথাযথ কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করবেন। রোগীদের নিকট থেকে আদায়কৃত সেবা মূল্য/ফি এর নির্ধারিত অংশ থেকে এ সকল ব্যয় নির্বাহ করতে হবে।
৩. প্রতিষ্ঠান প্রধান প্রতিমাসে তহবিলের আয়-ব্যয়ের হিসাব রাখবেন, কর্তৃপক্ষ বরাবর মাসিক প্রতিবেদন এবং ৬ মাস পরপর ইনস্টিটিউশনাল প্র্যাকটিস মনিটরিং কমিটির নিকট সার্বিক প্রতিবেদন প্রেরণ করবেন।
৪. স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় দ্রুততম সময়ে ইনস্টিটিউশনাল প্র্যাকটিস মনিটরিং কমিটি গঠন করবে।
৫. নিয়ন্ত্রণকারী কার্যালয় (মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও বিশেষায়িত হাসপাতালের ক্ষেত্রে অধিদপ্তর, জেলা সদর জেনারেল হাসপাতালের ক্ষেত্রে বিভাগীয় পরিচালক এবং উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ক্ষেত্রে সিভিল সার্জন) তার অধস্তন স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠানসমূহে ইনস্টিটিউটশনাল প্রাকটিস-এর স্বাস্থ্য সেবা কার্যক্রম এবং আয়-ব্যয়সহ সার্বিক বিষয়াদি নিয়মিত পরিবীক্ষণ নিশ্চিত করবে।
সিলেটভিউ২৪ডটকম/ ঢাকামেইল/শাদিআচৌ-০4