সিলেটে আওয়ামী লীগের এক প্রভাবশালী নেতা ও তার সহযোগিরা এক গৃহবধূকে গণধর্ষণ করেছেন। এ ঘটনার আগে তার স্বামীকে পিটিয়ে হত্যা ও ধর্ষণের পরে তাদের শিশুসন্তানকে খুন করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
গণধর্ষণের ঘটনায় একটি মামলা দায়ের করেছেন নির্যাতনের শিকার নারী। পরে এক আসামিকে পুলিশ গ্রেফতার করলেও মূল হোতা আওয়ামী লীগ নেতা এখনো ধরা-ছোঁয়ার বাইরে।
মামলা সূত্রে জানা যায়, সিলেট জেলার দক্ষিণ সুরমা উপজেলার লালাবাজার এলাকার ভালকি গ্রামের মো. তেরা মিয়ার বিবাহিত মেয়ে মোছা. ফাতেমা আক্তার ডলিকে একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে দেখার পর থেকে দীর্ঘদিন ধরে রাস্তাঘাটে উত্যক্ত করতেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা শামীম ইকবাল। স্বামী ছেড়ে তাকে বিয়ে করার জন্য ডলিকে বার বার চাপ দিচ্ছিলেন শামীম। এক পর্যায়ে ডলির স্বামী উস্তার আলী এ বিষয়ে প্রতিবাদ করলে শামীম তার উপর ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন। পরে নিরাপত্তার স্বার্থে উস্তার আলী দক্ষিণ সুরমা থানায় গিয়ে আওয়ামী লীগ নেতা শামীমের বিরুদ্ধে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। এতে শামীম আরও ক্ষিপ্ত হন এবং ২০২২ সালের ৮ নভেম্বর রাতে নিজের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে বাড়ি ফেরার পথে শামীম তার বাহিনী নিয়ে ডলির স্বামীর উপর হামলা করে বেধড়ক মারধর করে রাস্তায় ফেলে রেখে চলে যান। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করলে ১১ নভেম্বর চিকিৎসাধীন অবস্থায় উস্তার আলী মৃত্যুবরণ করেন। এ ঘটনায় ডলি থানায় মামলা করতে গেলে শামীম ইকবাল প্রভাবশালী নেতা হওয়ায় তার বিরুদ্ধে মামলা নেয়নি পুলিশ।
এদিকে, স্বামীকে খুনের পরও ডলির পিছু ছাড়েননি শামীম ইকবাল। ২০২৩ সালের ১৬ মার্চ ছেলেকে স্কুলে নিয়ে যাওয়ার পথে মা ও সন্তানকে অপহরণ করেন ওই আওয়ামী লীগ নেতা। গাড়িতে তুলে তাদের চোখ বেঁধে অজ্ঞাত একটি বাসায় নিয়ে গিয়ে শামীম ও তার সহযোগিরা ডলিকে ধর্ষণ করেন। এভাবে ৫ দিন ডলির উপর অমানবিক নির্যাতন চালনোর পর ২১ মার্চ দক্ষিণ সুরমা থানার পাশে রাস্তায় ফেলে যান তারা। তবে এসময় তার শিশুসন্তানকে জিম্মি করে রাখে অপহরণকারীরা।
গুরুতর আহত ডলিকে পথচারীরা উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে ভর্তি করেন ও চিকিৎসা শেষে বাড়ি ফিরে ২৮ মার্চ থানায় গিয়ে ধর্ষণ মামলা করেন তিনি। পরবর্তীতে পুলিশ তাকে জানায়- তার শিশুসন্তানকে মেরে ফেলা হয়েছে। ধর্ষণ মামলা দায়েরের পর শামীমের এক সহযোগিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তবে শামীম পলাতক রয়েছেন।
এদিকে, শামীম এখনো গ্রেফতার না হওয়ায় নিজের প্রাণনাশের ভয়ে আছেন গণধর্ষণের শিকার ফাতেমা আক্তার ডলি। তিনি সাংবাদিকদের জানান- আমার স্বামী-সন্তানকে খুন করেও ক্ষান্ত হয়নি শামীম। মামলা তুলে নিতে বার বার আমাকে চাপ দিচ্ছে। সে বলছে- আমি মামলা তুলে না নিলে আমাকেও মেরে ফেলবে। যে কোনো সময় আমার উপর হামলা হতে পারে। আমি প্রাণ সংশয়ে আছি।