বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত সেহরির সময়। কেয়ারটেকারকে খেতে আসার জন্য ডাকতে গেলেন বাড়ির লোকজন। দেখলেন- ঘরের দরজা খোলা। বিছনা, মেঝে ও বারান্দায় ছোপ ছোপ রক্ত। চমকে উঠলেন বাড়ির লোকজন। পড়ে গেলো হুলস্থুল। খবর দেওয়া হলো স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও পুলিশকে।
 

তারা এসেও বাড়িসহ আশপাশ স্থানে খুঁজে কোথাও মিললো না সেই কেয়ারটেকারের লাশ। তবে শেষ রাতে উধাও হওয়া সেই যুবককে ৪০ ঘণ্টার মাথায় নরসিংদী থেকে আটক করলো পুলিশ। পরে জানা গেলো- নিজেই খুনের নাটক সাজিয়ে তিনি চলে যেতে চেয়েছিলেন লোকচক্ষুর আড়ালে।
 


জানা যায়, সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলার মাথিউরা ইউনিয়নের পূর্বপাড় গ্রামের আবদুল হেকিমের বাড়িতে সাড়ে ৫ বছর ধরে কেয়ারটেকার হিসেবে আছেন তাইজুল ইসলাম ওরফে নাহিদ (৩৫)। তাঁর বাড়ি নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলার বড়ভিটাবাজার গ্রামে। ১৪ বছর আগে তিনি বিয়ানীবাজার আসেন।
 

বাড়ির মালিক আবদুল হেকিমের দুই ছেলে প্রবাসী। বাড়িতে আরও দুই ছেলে ও দুই মেয়ে থাকেন। বাড়ির দেখাশোনা করতেন তাইজুল। আবদুল হেকিমের ঘরের পাশে আধাপাকা একটি ঘরে থাকতেন তিনি। ওই ঘরের পাশে মুরগির একটি খামারও আছে। বৃহস্পতিবার দিবাগত শেষ রাতে সেহরি খাওয়ার জন্য তাইজুলকে ডাকতে যান আবদুল হেকিমের ছেলে। তখন তাইজুলের ঘরের দরজা খোলা দেখে ভেতরে প্রবেশ করে বিছানা, মেঝেসহ বারান্দায় রক্ত দেখতে পান। পরে বিষয়টি প্রতিবেশীসহ চেয়ারম্যান ও পুলিশকে জানানো হয়।
 

খবর পেয়ে শুক্রবার ভোরেই সিলেটের বিয়ানীবাজার থানার একদল পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে আলামত সংগ্রহ করে। এ সময় তাইজুলের ব্যবহৃত কাপড় ও মুঠোফোন জব্দ করা হয়। বিভিন্ন জায়গায় সন্ধান চালিয়েও তাইজুলকে পাওয়া যায়নি। এ সময় রক্তজাতীয় তরল পদার্থের কোনো গন্ধ না পাওয়ায় সন্দেহ হয় পুলিশের।
 

রবিবার (২ এপ্রিল) দুপুরে এক প্রেস ব্রিফিয়ে সিলেট জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মামুন জানান, এ ঘটনার রহস্য উদঘাটনে বিয়ানীবাজার থানার একটি গোয়েন্দা দল অনুসন্ধান কার্যক্রম শুরু করে। অবশেষে প্রাপ্ত গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে শনিবার (১ এপ্রিল) খুন হওয়ার নাটক সাজানো তাজুল ওরফে নাহিদকে নরসিংদী থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
 

পুলিশ সুপার জানান- প্রাথমিক অনুসন্ধান ও গ্রেপ্তারকৃত নাহিদকে জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা যায়, তিনি প্রায় ১৪ বছর ধরে বিয়ানীবাজারের ওই এলাকায় আছেন। কিন্তু তার প্রকৃত পরিচয় কেউ জানতেন না। তাজুলের বাড়ি নিলফামারীতে এবং সেখানে অপরাধে জড়িয়ে পড়ায় তিনি বিয়ানীবাজারে আত্মগোপনে ছিলেন। বিয়ানীবাজারের ঠিকানা দিয়েই তাজুল জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করেন।
 

পুলিশ জানায়, তাজুল কলেজ পড়া অবস্থায় বন্ধুদের সঙ্গে মারামারির সময় একজন মারা গেলে তিনি বাড়ি থেকে পালিয়ে আসেন। এরপর আর বাড়ি ফেরেননি। প্রায় তিন বছর আগে বাবার মৃত্যু হলেও ‌'বাড়িতে পুলিশ আছে' এমন খবর পেয়ে আর যাননি।
 

গ্রেফতারের পর পুলিশ জানতে পারে, নাহিদ মূলত অনলাইন জুয়ার সাথে জড়িত ছিলেন এবং এর মাধ্যমে বড় অঙ্কের টাকা তার ঋণ হয়ে যায়। এরপর তিনি কৌশলে জাতীয় পরিচয়পত্রে নিজের নাম পরিবর্তন করে স্থায়ী ঠিকানা গোপন রেখে বিয়ানীবাজারের ওই বাড়িতে কেয়ারটেকার হিসেবে থাকতে শুরু করেন এবং সেই ঠিকানা স্থায়ী ঠিকানা হিসেবে ব্যবহার করে আসছিলেন। প্রকৃতপক্ষে তার নাম তাজুল ইসলাম। তিনি নিলফামারী জেলার কিশোরগঞ্জ থানার বড়ভিটা পূর্বপাড়া গ্রামের হোসেন আলীর ছেলে।
 

এদিকে, নাহিদের নিখোঁজ হওয়ার পর পুলিশের এ নিয়ে সন্দেহ হলে তার ঘর তল্লাশি করে একটি ডায়েরি পায়। যাতে অনেক দেনা-পাওনার হিসাব লিখে রেখেছিলেন নাহিদ। তল্লাশি করে তার ঘরে একটি বালতি ও মগে রং গুলিয়ে রাখার আলামত পাওয়া যায়।
 

বিয়ানীবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. তাজুল ইসলাম (পিপিএম) রোববার বিকেলে সিলেটভিউ-কে বলেন- অভিযুক্ত তাজুলকে সোমবার আদালতে প্রেরণ করা হবে।

 


সিলেটভিউ২৪ডটকম / ডালিম /এসডি-১৯