সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার চাউলধনী হাওরে স্কুলছাত্র সুমেল আহমদ শুকুর ও কৃষক ছরকুম আলী দয়াল হত্যাকান্ডে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানানো হয়েছে। একই সাথে আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী চাউলধনী হাওরের সীমানা নির্ধারণে কার্যকরি পদক্ষেপ গ্রহণ ও নিরীহ কৃষকদেরকে হয়রানি বন্ধেরও দাবি জানানো হয়।
 

শনিবার সিলেট জেলা প্রেসক্লাবে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে চাউলধনী হাওর ও কৃষক বাঁচাও আন্দোলন পরিষদের পক্ষ থেকে এ দাবি জানানো হয়।
 


সংবাদ সম্মেলনে চাউলধনী হাওর ও কৃষক বাঁচাও আন্দোলন পরিষদের সদস্য ও সুমেল আহমদ শুকুর হত্যা মামলার বাদি ইব্রাহীম আলী সিজিল লিখিত বক্তব্যে বলেন, চাউলধনী হাওরে কৃষকদের জমি ও সরকরি খাস জমির সীমানা নির্ধারণ না করে ওই হাওর লিজ দেওয়া হয় স্থানীয় দশঘর মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির নামে। জাল কাগজপত্র ও ভিক্ষুকদের সদস্য করে গঠিত ওই সমিতি চাউলধনী হাওর লিজ নিয়ে স্থানীয় ইসলামপুর গ্রামের সাইফুল আলম ও তার নেতৃত্বে গড়া বাহিনীর কাছে সাব লিজ দেয়। লিজের শর্ত ভঙ্গ করে হাওর লিজ নেয়ার কারণে বিশ্বনাথ থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়। কিন্তু অর্থের বিনিময়ে থানা পুলিশ মামলাটির ফাইনাল রিপোর্ট প্রদান করে। পরে বাদি রোশন আলী এব্যাপারে নারাজি দাখিল করলে আদালত পুনরায় বিষয়টি তদন্তের জন্য দায়িত্ব দেন পিবিআইকে।
 

সুষ্ঠুভাবে তদন্তপূর্বক মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দ্রুত আদালতের কাছে দাখিলের দাবি এলাকাবাসীর।

ইব্রাহীম আলী সিজিল বলেন, প্রায় দেড় যুগ ধরে সাইফুল বাহিনী হাওর এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করছে। সাইফুল ও তার বাহিনীর সদস্যরা ২০২১ সালে চাউলধনী হাওরে স্কুলছাত্র সুমেল আহমদ শুকুর ও কৃষক ছরকুম আলী দয়ালকে হত্যা করে।
 

তিনি বলেন, বিশ্বনাথ থানার প্রাক্তণ ওসি শামীম মুসা, সমবায় কর্মকর্তা কৃষ্ণা রাণী তালুকদার, সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা সফিকুল ইসলাম ভ‚ইয়াসহ সরকারি এসব দফতরের অসাধু কর্মকর্তাদের সহযেগিতায় সাইফুল ও তার বাহিনী বেপরোয়া হয়ে ওঠে, ঘটায় একের পর এক অপকর্ম।
 

স্থানীয় চৈতনগর গ্রামের সিজিল বলেন, সাইফুল আলম ও তার বাহিনীর হাতে রয়েছে দেশি-বিদেশি আগ্নেয়াস্ত্র। ২০২১ সালের ২৮ জানুয়ারি চাউলধনী হাওরে তাদের হামলাম প্রাণ হারান কৃষক ছরকুম আলী। একই বছরের ১ মে সাইফুল ও তার লোকজন জোরপূর্বক আমাদের জমিতে মাটি কাটা শুরু করে। এ সংবাদ পেয়ে সেখানে গেলে সাইফুলের নেতৃত্বে গুলি চালানো হয়। গুলিতে স্কুলছাত্র সুমেল আহমদ শুকুর, তার বাবা মানিক মিয়াসহ ৪ জন গুলিবিদ্ধ হন। পরে তাদেরকে হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক সুমেলকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় সাইফুল আলমসহ ৩২ জনকে আসামী করে মামলা দায়ের করা হয়। তাদের মধ্যে বিভিন্ন সময়ে আদালত থেকে জামিন পেয়ে ৩১ জন আসামী বের হয়ে আসে।

সিজিল বলেন, সুমেল হত্যা মামলাটি সিলেটের দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন রয়েছে। এ অবস্থায় সাইফুল আলম জামিনের জন্য উচ্চ আদালত পর্যন্ত বার বার আবেদন জানালেও বিচারক তার আবেন নামঞ্জুর করেন। তবে ৩১ জন আসামী জামিন পাওয়ায় এলাকায় আতঙ্ক বিরাজ করছে। তাছাড়া সাইফুলকে জেল থেকে বের করার জন্যও চেষ্টা চালাচ্ছে তার সহযোগীরা।
 

এদিকে, বাদী পক্ষ আদালতের দেওয়া সময়মতো স্বাক্ষীর জন্য হাজির হলেও আসামী পক্ষ বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে সময় ক্ষেপন করছে। চলতি বছরের ৩০ মার্চ স্বাক্ষগ্রহণের পূর্বনির্ধারিত তারিখ থাকলে সাইফুলকে বিচারকের সামনে নেওয়া হয়নি। উল্টো পুলিশসহ সংশ্লিষ্ট অসাধু ব্যক্তিদের সহযোগিতায় তাকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বিচারকাজকে বাধাগ্রস্ত করতে সুস্থ সাইফুলকে কখনো হার্টের রোগি আবার কখনো পাগল সাজানো হচ্ছে। অপরদিকে, আসামীরা স্বাক্ষীদেরকে বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি দেখাচ্ছে।

সুজেল বলেন, হাওরের সীমানা নির্ধারণের জন্য হাওরপাড়ের কৃষকদের পক্ষ থেকে হাইকোর্টে একটি রিট করা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট সীমানা নির্ধারণের নির্দেশ দেন। কিন্তু সাইফুল বাহিনী সংশ্লিষ্ট দফতরের কিছু অসাধু ব্যক্তিকে ম্যানেজ করে সীমানা নির্ধারণকাজে বাধা সৃষ্টি করে। হওরের সীমান নির্ধারণকাজ ঠিকমতো না হওয়ায় জমির মালিকদের পক্ষ থেকে হাইকোটে আরেকটি রিক করা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট পুনরায় ডিজিটাল জরিপের মাধ্যমে সীমানা জরিপের নির্দেশ দেন। কিন্তু তাতেও এ কাজ হবে কি-না কৃষকদের মাঝে সন্দেহ রয়েছে। এমনকি প্রশাসনের একটি চক্র অর্থের বিনিময়ে কৃষকদের ভ‚মিসহ চাউলধনী হাওর সাইফুল বাহিনী ও ভূয়া মৎস্যজীবী সমিতিকে লিজ দেওয়ার অপচেষ্টা চালাচ্ছে।
 

সংবাদ সম্মেলনে সুজেল আসামীদের জামিন বাতিল করে সাইফুল আলমসহ সকল আসামীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার পাশাপাশি আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী হাওরের সীমানা নির্ধারণে কার্যকরি পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানান।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন- চাউলধনী হাওর ও কৃষক বাঁচাও আন্দোলন পরিষদের আহবায়ক আবুল কালাম, যুগ্ম আহবায়ক আরিফ উল্লাহ সিতাব, নজির উদ্দিন, সামসুদ্দীন, মাওলানা ছমির উদ্দিন, ছরকুম আলী দয়াল হত্যা মামলার বাদি মাহমদ আলী, সুমেল আহমদ শুকুরের মা খয়রুন নেছা, বোন সোমা বেগম প্রমুখ।


 


সিলেটভিউ২৪ডটকম/প্রেবি/এসডি-১৫