ইতিহাস সাক্ষী, নাট্য ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনই স্বাধীনতা আন্দোলনের বীজ বপন করেছিল এবং এর মাধ্যমে স্বাধীনতা পরিপূর্ণতা লাভ করেছিল। ষাটের দশকে নাট্য ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে সৃষ্ট বিভিন্ন নাট্য ও সাংস্কৃতিক সংগঠন মহান মুক্তিযুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে ওইসময়। মঞ্চের তুখোড় নাট্যকর্মীরা অস্ত্র হাতে তুলে নিয়েছিল দেশ মাতৃকাকে রক্ষার প্রত্যয় নিয়ে। 

পাশাপাশি, মুক্তিযুদ্ধকালীন স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্রের সপ্রতিভ আর নির্ভয় কণ্ঠস্বর আমাদের আশা জাগিয়েছিল প্রবলভাবে। সে সময় সংস্কৃতিকর্মীরা মুক্তিযোদ্ধাদের দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ ও অনুপ্রাণিত করেছিল।


১৯৫২ এর ভাষা আন্দোলন, ১৯৫৪ এর যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ১৯৫৮ এর সামরিক শাসন জারি, ১৯৬২ এর শিক্ষা আন্দোলন, ১৯৬৬ এর ছয় দফা আন্দোলন, ১৯৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান, ১৯৭০ সালের নির্বাচন ও ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে জন্ম লাভ করে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। এই দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রামের সারথি ছিলো নাট্য ও সংস্কৃতিকর্মীরা। থিয়েটার বাংলা সিলেট বাঙালি জাতীয়তাবাদ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী সেইসব নাট্য ও সংস্কৃতিকর্মীদের গর্বিত উত্তরাধিকার বহন করে।
 

তৎকালীন সময়ে সাংস্কৃতিক আন্দোলন যে মানসিক ভিত তৈরি করে দিয়েছিল, তার প্রভাবেই রাজনৈতিক আন্দোলন ঘনীভূত হয় এবং স্বাধীনতা আন্দোলন সফল হয়। বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রামের ইতিহাসের দিকে নজর দিলে তা স্পষ্ট পরিলক্ষিত হয়। এরপর আমাদের সংবিধান রচনায় আমরা চার মূলনীতি দাঁড় করেছিলাম- জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা; যা আমাদের এতকালের সাংস্কৃতিক আন্দোলনের ফসল। কিন্তু এরপর মাত্র চার বছরের মাথায় স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করা হলো। যা ছিলো সদ্য জন্মলাভ করা একটি দেশের জন্য সবচেয়ে বড় বিপর্যয়। সেই অপূরণীয় বিপর্যয় কাটিয়ে উঠার জন্য এখনো লড়াই করে যাচ্ছে নাট্য ও সংস্কৃতিকর্মীরা। যদিও খুব সুক্ষ্ণভাবে নাট্য ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে দুর্বৃত্তায়ন ঢুকে গেছে। সেই দুর্বৃত্তরা সুকৌশলে আজও আমাদের গর্বিত সাংস্কৃতিক শেকড় ধরে টান দিচ্ছে সময় সুযোগে। 

থিয়েটার বাংলা সিলেট বিশ্বাস করে, সেইসব প্রেতাত্মাদের তাড়াতে হলে নতুনভাবে সেই আদি জনসম্পৃক্ত সাংস্কৃতিক আন্দোলনকে জাগিয়ে তুলতে হবে। সাংস্কৃতিক যে দুর্বৃত্তায়ন ঘটে গেছে, তা বাংলাদেশের জন্মকালীন সেই আদি সাংস্কৃতিক আন্দোলন ছাড়া দূর করা সম্ভব নয়। 
 

অতি সম্প্রতি থিয়েটার বাংলা সিলেট লক্ষ্য করেছে যে, কথাকলি সিলেট এর সিনিয়র সদস্য ও সদ্য বহিষ্কার হওয়া সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি আমিনুল ইসলাম চৌধুরী লিটন এর বিরুদ্ধে শিশু ও নারীর প্রতি যৌন হেনস্থা ও কুরুচিপূর্ণ মন্তব্যের অভিযোগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তুমুল আলোচনার জন্ম দিয়েছে এবং চারিদিকে নিন্দার ঝড় বইছে। অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগের আঙ্গুল উঠার পর থেকে থিয়েটার বাংলা সিলেট খুব গভীরভাবে তা পর্যবেক্ষণ করেছে। থিয়েটার বাংলা মনে করে, অভিযুক্ত ব্যক্তি নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করার দায়িত্ব উনার নিজের। নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করা পর্যন্ত উনি আমাদের কাছে অভিযুক্ত হিসেবেই বিবেচিত হবেন। 
 

উল্লেখ্য, গত ৮ এপ্রিল ২০২৩ খ্রি. তারিখে অভিযুক্ত ব্যক্তির একটি ভয়েস কল রেকর্ড আমাদের হাতে আসে। আমরা সেই রেকর্ড বারবার শুনেছি এবং হতবাক হয়েছি। একজন সিনিয়র নাট্যকর্মীর এমন অনৈতিক আচরণ ঘৃণ্য এবং নিন্দনীয়। থিয়েটার বাংলা এই ন্যাক্কারজনক ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছে। আমরা বিশ্বাস করি সম্মিলিত নাট্য পরিষদ সিলেট গঠনতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় অতি দ্রুততার সাথে এই ঘটনার একটি সুনির্দিষ্ট একটি সিদ্ধান্তে পৌছাবে সিলেটের সকল নাট্য ও সংস্কৃতিকর্মীদের আস্থার প্রতি সম্মান রেখে এবং কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। যদিও আরো আগে সম্মিলিত নাট্য পরিষদ সিলেট  ও সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের এই সংকট নিরসনে এগিয়ে আসা  উচিত ছিল বলে থিয়েটার বাংলা মনে করে। আমরা কঠোরভাবে জানাতে চাই যে, থিয়েটার বাংলা সিলেট কখনোই কোনো শিশু ও নারীর প্রতি যৌন হেনস্থাকারীকে প্রশ্রয় দেবে না। এই ধরনের জঘন্য কাজ অমার্জনীয় অপরাধের পর্যায়ে পড়ে। থিয়েটার বাংলা সিলেট একটি বৈষম্যহীন সুন্দর ও পরিচ্ছন্ন নাট্যাঙ্গন প্রত্যাশা করে। 

 

সিলেটভিউ২৪ডটকম/প্রেবি/পল্লব-২৬