শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের দুইটি আবাসিক ছাত্রী হল বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে হল কর্তৃপক্ষ।
 

কিন্তু ছাত্রীদের অভিযোগ, হল কর্তৃপক্ষ  লিখিত কোনো নোটিশ ছাড়াই মৌখিকভাবে এই নির্দেশনা জারি করছে।


হল বন্ধ রাখার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কোনো নির্দেশনা নেই বলেও জানা গেছে।

 
তবে হল কর্তৃপক্ষের ভাষ্য, ছাত্রীদের নিরাপত্তার জন্য এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।  

হলের কর্মকর্তা ও শিক্ষার্থীরা জানান, পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে আগমী ২১ এপ্রিল থেকে ২৪ এপ্রিল পর্যন্ত প্রথম ছাত্রী হল বন্ধ থাকবে এবং বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হল আগামী ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত বন্ধ থাকবে।

কিন্তু এ বন্ধের মধ্যেও অনেক শিক্ষার্থী পড়াশোনা, টিউশনি এবং নিজেদের বাড়ি অনেক দূর হওয়ায় যাতায়াতের ভোগান্তি এড়াতে হলে থাকতে চাইছেন। কিন্তু হল কর্তৃপক্ষ জোরপূর্বক ছাত্রীদেরকে বাড়িতে যাওয়ার জন্য প্রভাব সৃষ্টি করেছেন বলে শিক্ষার্থীরা জানান।
 

বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হলের প্রভোস্ট জোবেদা কনক খান এ ব্যাপারে বেশি জোর করছেন বলে ছাত্রীদের অভিযোগ।

হল খোলা রাখার ব্যাপারে ছাত্রীরা লিখিত ভাবে আবেদন করলেও তা তিনি প্রত্যাখান করেছেন বলেও শিক্ষার্থীরা জানান।

আগামীকাল মঙ্গলবার (১৮ এপ্রিল) এর মধ্যে সকল ছাত্রীকে হল ত্যাগ করতে মৌখিকভাবে নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন ওই হলের আবাসিক ছাত্রীরা।

এছাড়া হল খোলার আপডেট নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের একটি পেইজে একজন ছাত্র  ছাত্রী হলের প্রভোস্টের উদ্ধৃতি দিয়ে লিখেছেন, ''ছাত্রীহল ও ক্যাম্পাস খোলার আপডেট! বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হল ২৮ এপ্রিল থেকে খোলা থাকবে।- প্রাধ্যক্ষ, সহযোগী অধ্যাপক জোবেদা কনক।" 

 
এদিকে হল খোলা রাখার জন্য সিরাজুন্নেসা হলের প্রভোস্ট বরাবর ১৯ ছাত্রীর স্বাক্ষর সম্বলিত একটি লিখিত আবেদন পত্রও জমা দিয়েছেন ছাত্রীরা।

তারা জানান, তা প্রত্যাখান করেছেন বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হলের প্রভোস্ট।

ছাত্রীদের ভাষ্য, বেশ কয়েকদিন ধরেই ছাত্রীদের রুমে রুমে গিয়ে হল ত্যাগ ও বন্ধ রাখার বিষয়ে তাগিদ দিচ্ছেন হলের কর্মচারীরা। দ্রুত সময়ের মধ্যে হল ছেড়ে চলে যেতে বলা হচ্ছে। তবে এ ব্যাপারে কোনো ধরণের লিখিত নোটিশ দেয় নি হল কর্তৃপক্ষ।
 

ছাত্রীদের অভিযোগ, পবিত্র রমজান ও ঈদুল ফিতর উপলক্ষে হল বন্ধ রাখার ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কোনো ধরণের নোটিশ কিংবা হলে কোনো নোটিশ না দিলেও হল প্রশাসন ‘জোরপূর্বক’ বন্ধ রাখতেছে।

কিন্তু ছাত্র হল খোলা রাখা হচ্ছে। এতে তারা বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন বলে মনে করছেন ছাত্রী হলের শিক্ষার্থীরা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ছাত্রী বলেন, ''দারিদ্রতার কারণে টিউশন করাতে হচ্ছে, ছুটিতে বাড়িতে গেলে টিউশন থেকে বেতন নাও দিতে পারে। কিন্তু টিউশন করিয়ে তো পড়াশোনার খরচ চালিয়ে যাচ্ছি। হলের প্রভোস্টকে বলার পরেও তিনি হলে থাকতে দিচ্ছেন না। বন্ধুদের মেসে থাকার জন্য বলেছেন তিনি (প্রভোস্ট)।''
 

সিরাজুন্নেসা হলের আরেক ছাত্রী বলেন, "অনেকের বাড়ি দূরে হওয়ায় ছুটিতে বাড়িতে যেতে পারে না। এছাড়া ঈদের পর সেমিস্টার ফাইনাল শুরু হবে। তাই অনেকে হলে থেকে পড়াশোনা করতে চায়। হলে থাকার ব্যাপারে আবেদন করলেও প্রভোস্ট তা মঞ্জুর করেন নি।"

এদিকে দুর্গাপূজার সময় আবাসিক হল খোলা থাকলেও পবিত্র রমজান ও ঈদুল ফিতর উপলক্ষে আবাসিক হল ‘জোরপূর্বক’ বন্ধ রাখা হচ্ছে বলেও অভিযোগ একাধিক ছাত্রীদের।

তাদের ভাষ্য, বিশ্ববিদ্যালয়ে সবার জন্য আইন সমান, অধিকারও সমান। কিন্তু ছাত্রীদের বেলায় তা সবসময় উল্টো হয়ে আসতেছে; মুখে সম অধিকার এবং নারীদের অধিকারের কথা বলা হলেও বাস্তবিক অর্থে তার উল্টোটাই হচ্ছে।
 

''নানান নিয়ম তৈরি করে তা ছাত্রীদের উপর চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে। আজ মেয়ে বলেই হল ছেড়ে দিয়ে মেসে গিয়ে উঠতে হবে!- এমনিভাবে ক্ষোভ জানিয়েছেন একাধিক ছাত্রী।

কর্তৃপক্ষ বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে সাড়া বছর হল কিভাবে খোলা রাখা যায় সেই ব্যবস্থা করার অনুরোধ জানিয়েছেন ছাত্রীরা।

এ বিষয়ে জানতে হলের প্রভোস্ট জোবেদা কনক খানকে একাধিকবার কল দিলে তিনি  রিসিভ করেন নি; পরবর্তীতে হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজ দিলেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।

তবে ওই হলের একজন সহকারী প্রভোস্টের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, 'ছাত্রীদের নিরাপত্তার দিকটি চিন্তা করে এ সিদ্ধান্ত হতে পারে। তবে সামনে তো এসএসএসি পরীক্ষা। তাই টিউশনির জন্য কয়কজন ছাত্রী হলে থাকতে চাচ্ছে। তবে কর্মচারীরা ছুটিতে যেতে চাচ্ছে।

এরপর আর কি সিদ্ধান্ত হয়েছে তা তিনি অবগত নন বলে জানিয়েছেন।

হল বন্ধের বিষয়ে জানতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার মো. ফজলুর রহমানকে কল দিলে তিনি রিসিভ করেননি।

এক্ষেত্রে ছাত্রী হলের একজন কর্মকর্তা জানান, হল বন্ধের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ থেকে কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি।


 

সিলেটভিউ২৪ডটকম/নোমান/এসডি-১০