রোদ বৃষ্টির তোয়াক্কা না করেই সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ধান কাটায় ব্যস্ত নারী ও শিশুরা। ২৩ এপ্রিল থেকে টানা বৃষ্টির খবর শুনে জমিতে দ্রুত ধান কাটতে শুরু করছে তারা।
 

রবিবার সরেজমিনে ভান্ডাবিল, ছায়ার হাওরসহ উপজেলার বিভিন্ন হাওরে শ্রমিক সংকট থাকায় ধানকাটার আধুনিক যন্ত্রপাতি হারভেস্টার, রিপার ও কেচি মেশিন দিয়ে পুরোদমে ধান কাটছে। কিছু কিছু জায়গায় পরিবারের খোরাক জোগাতে বছরের একমাত্র ফসল বোরোধান আধাপাকাও কাটতে দেখা যায়। শুধু ধান কাটলেই শেষ নয়, এগুলোকে প্রক্রিয়াজাত করতে ভাল আবহাওয়ার বিকল্প নেই। লাগাতার বৃষ্টি হলে ধানের স্তূপাকৃতির মধ্যেও চারা গজাবে। অতীতে যা আমরা প্রায় বৎসরই দেখেছি।
 


শাল্লা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যানুসারে, উপজেলায় আজ পর্যন্ত ৮৫ ভাগ বোরো ফসল কর্তন করা হয়েছে। তবে এপ্রিলের মধ্যে শতভাগ শেষ হবে। উপজেলায় সর্বমোট ২১ হাজার ৬৯৪ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ করা হয়েছে। এর থেকে চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ৯৫ হাজার ২৫৩ মেট্রিক টন। যার বাজার মূল্য আনুমানিক ৩৮১ কোটি ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা হতে পারে।
 

সুখলাইন গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা ও কৃষক যোগেন্দ্র দাশ বলেন, আমি অল্প জমিনই করছি। যেগুলো করছি ঠাকুরের আশীর্বাদে সবগুলো কাটা শেষ। ধানও ভালই হয়েছে।

উজান যাত্রাপুর গ্রামের কৃষক সীতেশ তালুকদার বলেন, আমি ১৫ কেয়ার জমিন করছি। গত পরশু সব জমিন কেটে মাড়াইও দিয়েছি। এখন ধান ও খড় শুকানোর বাকী আছে।
 

শাল্লা গ্রামের মো: তফসির চৌধুরী বলেন, আমাদের হাওরে ২৫ ভাগ ধান কাটা হয়েছে। শ্রমিক সংকট ও মেশিনের ড্রাইভার না থাকায় জমির ধান কাটতে দেরি হচ্ছে।

হরিনগর গ্রামের কৃষক কৌশিক চন্দ্র বলেন, আমি ১৩ কেয়ার জমির মধ্যে ৭ কেয়ার জমি কাটছি। কাটার বেপারী পাইতেছিনা ভাই। দুই দিনের বৃষ্টিতে জমিতে পানি হওয়ায় মেশিনেও ধান কাটতাছে না। মহা সমস্যায় আছি আমি। বেপারী পাইলে আমারে কইও ভাই।

মনুয়া গ্রামের মো: বিলাস চৌধুরী বলেন, আমি ১২ কেয়ার জমির মধ্যে ৫ কেয়ার কাটছি। তবে আমাদের এখানে সম্পূর্ণ ধান কাটতে আরও ১০-১২ দিন সময় লাগবে যদি আবহাওয়া ভাল থাকে।

আঙ্গারুয়া গ্রামের কৃষক সুমন দাশ বলেন, আমি ৩৫ কেয়ার জমি করছি। আজ পর্যন্ত ২০ কেয়ার জমি কাটছি। বাকী ১৫ কেয়ার জমি কাটতে আরও সময় লাগবে। দিন খারাপে ভেজাল লাগাইছে।

এবিষয়ে শাল্লা উপজেলা কৃষকলীগের আহ্বায়ক রনজিৎ কুমার দাস বলেন, আমি উপজেলার বিভিন্ন হাওর পরিদর্শন করে দেখেছি আজ পর্যন্ত ৬৫-৭০ ভাগ ধান কর্তন হয়েছে।
 

এবিষয়ে হাওর বাঁচাও আন্দোলন কমিটি শাল্লা উপজেলার সাধারণ সম্পাদক জয়ন্ত সেন বলেন, আমি উপজেলার বিভিন্ন হাওর ঘুরে দেখেছি আজ পর্যন্ত সর্বোচ্চ ৫৫-৬০ ভাগ ধান কাটা হয়েছে। এপ্রিলের মধ্যে শতভাগ ধান কাটা শেষ হবে নি বললে প্রতিত্তোরে প্রতিবেদকে জানান, বৈরি আবহাওয়া থাকলে এপ্রিলের মধ্যে শত ভাগ ধান কাটা সম্ভব না।
 

এবিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু তালেব সিলেটভিউ'কে বলেন, শাল্লা উপজেলায় হাওরে আজ পর্যন্ত ধান কাটা হয়েছে ৮৫ ভাগ। হাওরের বাহিরে ৩৭শ হেক্টর বোরোজমি আছে। এ জমিগুলোর এখন পর্যন্ত ১৮ ভাগ ধান কর্তন করা হয়েছে।

 

সিলেটভিউ২৪ডটকম/সন্দীপন/এসডি-০১