সুনামগঞ্জের তাহিরপুরে "তাহিরপুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের প্রধান শিক্ষক ইয়াহিয়া তালুকদারের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দূর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। সম্প্রতি বিদ্যালয়ের গর্ভনিং বডির অভিভাবক এক সদস্য মো. সামায়ূন কবির এ বিষয়ে তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, গত বছরের ৭ই সেপ্টেম্বর অত্র শিক্ষা প্রতিষ্টানের নতুন গর্ভনিং বডির কমিটি গঠিত হয়। কমিটি গঠনের পর কয়েকটি মিটিংও সম্পূর্ণ হয়। মিটিংয়ের এক পর্যায়ে প্রতিষ্টানের আয় ব্যয়, শিক্ষার্থী সংখ্যা, উপবৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থী, গরিব মেধাবী শিক্ষার্থী সংখ্যা এবং বিদ্যালয়ের ফলাফল ও বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগীতা সহ বিভিন্ন বিষয়ে জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষক এ বিষয়গুলো এড়িয়ে গিয়ে বিদ্যালয়ের গর্ভনিং বডির সদস্যর সঙ্গে চরম খারাপ আচরণ করেন।
খোঁজ নিয়ে আরও জানা যায়, বিদ্যালয়টি স্থাপিত হয় ১৯৮৮ সালে। বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী সংখ্যা প্রায় ১১শ ৫৫ জন। ১৯৯৭ সালে বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন ইয়াহিয়া তালুকদার। যোগদানের পর থেকে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে প্রতি বছর জেএসসি, এসএসসি ও এইচএসসি উর্ত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের নিকট থেকে প্রত্যায়ন পত্র বাবদ বিনা রশিদে ১শ করে নিয়ে হাজার হাজার টাকা আত্মসাৎ করছেন তিনি। প্রত্যেক বছর জানুয়ারিতে ৬ষ্ট ও একাদশ শ্রেণিতে শিক্ষার্থী ভর্তির ফরম বাবদ বিনা রশিদে ১শত ১০ টাকা করে নিয়ে নিজের পকেট ভারি করছেন। সরকারি নিয়মনীতি তোয়াক্কা না করে অত্র বিদ্যালয়ের তালিকা ভুক্ত উপবৃত্তিধারী শিক্ষার্থীদের কাছ থেকেও বেতন নিচ্ছেন তিনি। শিক্ষার্থীদের পূর্ণ ভর্তি বাবদ সেশন ফ্রি ১ হাজার করে টাকা নেওয়ার পরও বার্ষিক মিলাদ মাহফিল এবং পূজা উপলক্ষে বিনা রশিদে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অদৃশ্য শক্তির বলে অতিরিক্ত টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন তিনি। শ্রেনীকক্ষ স্বল্পতার মধ্যেও বিদ্যালয়ের একটি রুমে দীর্ঘদিন ধরে পরিবার নিয়ে বসবাস করছেন। অথচ বিদ্যালয়ের ম্যানিজিং কমিটি থেকে প্রতি মাসে বাড়ি বাড়া বাবদ ১০ হাজার টাকা করে নিচ্ছেন তিনি।
তাহিরপুর সদর ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান তোজাম্মিল হক নাসরুম জানান, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কারো তোয়াক্কা করেন না। তিনি গায়ের জুড়ে অনিয়ম দূর্নীতির মাধ্যমে বিদ্যালয়ের টাকা পয়সা আত্মসাৎ করছেন। শ্রেনী কক্ষের স্বল্পতার মধ্যেও জোর করে একটি রুম দখল করে আছেন তিনি।
বিদ্যালয়ের গর্ভনিং বডির অভিভাবক সদস্য সামায়ূন কবির বলেন, অত্র শিক্ষা প্রতিষ্টানের প্রধান শিক্ষক ইয়াহিয়া তালুকদার যোগদানের পর থেকেই অনিয়ম দূর্নীতি করে আসছেন। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি টিকিয়ে রাখা সবার দায়িত্ব ও কর্তব্য। একজন ছাত্র অভিভাবক হিসেবে অনিয়ম দূর্নীতির বিষয়টি চোখে পড়ায় আমি লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। তিনি জনসম্মুখে বিদ্যালয়ের আয় ব্যায়ের হিসাব না দিয়ে লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ করছেন অদৃশ্য শক্তির বলে। তিনি বলেন, প্রধান শিক্ষক অধ্যক্ষ না হয়েও তার অফিসের নেইম প্লেইটে অধ্যক্ষ লিখে রেখেছেন, যা প্রতারণার শামিল।
তাহিরপুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের প্রধান শিক্ষক ইয়াহিয়া তালুকদারের কাছে জানতে চাইলে তিনি অভিযোগগুলো অস্বীকার করে বলেন, বিধি সম্মত ভাবেই আমি বিদ্যালয় পরিচালনা করে আসছি। কোন অনিয়ম দূর্নীতি করছি না।
বিদ্যালয়ের রুম দখলের বিষয়ে তিনি বলেন, ম্যানিজিং কমিটির সিদ্ধান্তক্রমেই পরিবার নিয়ে একটি রুমে বসবাস করছি আমরা। এছাড়া যেহেতু এখানে একটি মেয়ে হোস্টেল আছে তাদের নিরাপত্তার বিষয়টিও আমাকে এখান থেকে দেখতে হয়।
তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুপ্রভাত চাকমার কাছে এ বিষয়ে জানতে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি রিসিভ না করায় তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
সিলেটভিউ২৪ডটকম/রাজ্জাক/পল্লব-২২