চলতি বছর সিটি ও জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে টার্গেট করে দেশে বাড়ছে আগ্নেয়াস্ত্রের ঝনঝনানি। রাজনৈতিক সহিংসতা ছাড়াও পেশাদার সন্ত্রাসীরা ব্যবহার করছে এসব অস্ত্র। কেউ কেউ ভুয়া লাইসেন্স ব্যবহার করেও চালাচ্ছে আগ্নেয়াস্ত্র। এসব ভয়ংকর অস্ত্র দেশের বিভিন্ন সীমান্ত এলাকার পাশাপাশি সিলেট সীমান্ত দিয়েও ঢুকছে পার্শ্ববর্তী দুটি দেশ থেকে। খবর বাংলাদেশ প্রতিদিন’র।
সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে- অস্ত্রধারী দুর্বৃত্তদের রাজনৈতিক পরিচয়ের কারণে বিব্রত খোদ আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরাও। এসব প্রভাবশালী নিজেদের অবস্থান ধরে রাখার জন্য তাদের অনুসারীদের দিয়ে সংগ্রহ করাচ্ছেন অবৈধ অস্ত্র।
জানা গেছে, চলতি বছর জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে টার্গেট করেই পেশাদার সন্ত্রাসীরা সংগ্রহ করছে ছোট-বড় আগ্নেয়াস্ত্র। অস্ত্র ব্যবসায়ীরা নানা কায়দায় তাদের কাছে পৌঁছে দিচ্ছে অস্ত্র। বিশেষ করে সামনে জাতীয় নির্বাচন এবং সিটি করপোরেশন নির্বাচনের জন্য কিছু প্রভাবশালী তাদের মদদপুষ্ট সন্ত্রাসীদের মাধ্যমে অস্ত্র সংগ্রহ করাচ্ছেন। এসব অস্ত্রই ভাড়ায় খাটাচ্ছে অনেকেই। এসব অস্ত্র আসছে দেশের বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে। কোনোভাবেই যেন বন্ধ করা যাচ্ছে না অবৈধ অস্ত্রের প্রবেশ।
এসব আগ্নেয়াস্ত্রের মধ্যে পয়েন্ট টু-টু বোরের রিভলবার আসছে সিলেটের কানাইঘাট সীমান্ত ব্যবহার করে। এ সীমান্ত দিয়ে মাঝে-মধ্যেই আসে নাইন এমএম পিস্তলও। এখানে সক্রিয় রয়েছেন আজম ও শাহাবুদ্দীন নামের দুই অস্ত্রব্যবসায়ী।
এছাড়া সেভেন পয়েন্ট সিক্স ফাইভ ও নাইন এমএম পিস্তল বেশি ঢুকছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সীমান্ত দিয়ে এবং কুমিল্লা, যশোরের বেনাপোল ও হিলি সীমান্ত হয়ে নানা ধরনের অস্ত্র ঢুকছে দেশে।
সীমান্ত পয়েন্টগুলোর মধ্যে রয়েছে চাঁপাইনবাবগঞ্জের তেলকুপি, সোনামসজিদ ও শিবগঞ্জ পয়েন্ট। অস্ত্র ব্যবসায় সক্রিয় রয়েছেন তেলকুপির সোহেল, লম্বু সোহেল ও কামাল, শিবগঞ্জের টিপু, সোনামসজিদের আমীর ও রফিক। যশোরের বেনাপোলের বিশু মেম্বার ও আরমান রহস্যজনকভাবে সবকিছুকে ম্যানেজ করেই সক্রিয় রয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
দিনাজপুরের হিলিতে প্রশাসনের দুর্নীতিগ্রস্ত সদস্যদের ম্যানেজ করে সক্রিয় রয়েছেন রনি, জাভেদ ও শাহাবুদ্দীন। আর রাঙামাটির পার্বত্য এলাকা দিয়ে দেদার ঢুকছে ছোট-বড় অস্ত্র।
পুলিশ সদর দফতরের পরিসংখ্যান বলছে, ২০২২ সালে সারা দেশে ৫ হাজার ৮৭৯টি অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। এসব ঘটনায় মামলা হয়েছে ১ হাজার ৫৪০টি।
র্যাব সদর দফতরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২২ সালে সারা দেশে ৬৯২টি অভিযান চালিয়ে ১ হাজার ৩৭১টি অবৈধ অস্ত্রসহ গ্রেফতার করা হয়েছে ৬০২ জনকে। এ সময় ৬৩টি ম্যাগাজিন, ৫ হাজার ৮২৪ রাউন্ড গুলি এবং ৪১ হাজার ৮৮১টি বিস্ফোরক উদ্ধার করা হয়। এসব ঘটনায় সংশ্লিষ্ট থানায় ৪৫০টি মামলা হয়েছে।
চলতি বছর শুরু থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত ৭০টি অভিযানে ১৩৮টি অস্ত্র, ৩৪টি ম্যাগাজিন ও ২২৯ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়। মামলা হয়েছে ৭৭টি। বিজিবির পরিসংখ্যান বলছে, ২০২২ সালে ৪৩টি পিস্তল, ৫টি রিভলভার, ৭৯টি আগ্নেয়াস্ত্র, ২৯টি ম্যাগাজিন এবং ৫ হাজার ৩৫৭টি গুলি উদ্ধার করা হয়। চলতি বছর ৫ মার্চ পর্যন্ত দুটি রাইফেল, ছয়টি পিস্তল, ২৭টি আগ্নেয়াস্ত্র, পাঁচটি ম্যাগাজিন এবং ১৮৯টি গুলি উদ্ধার করা হয়।
একাধিক সূত্র বলছে, জাতীয় নির্বাচনের আগে সীমান্তের ফাঁক গলে অস্ত্র ঢুকছে দেশে। এ অবস্থায় এখনই এর লাগাম টানতে চায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এরই ধারাবাহিকতায় চোরাই পথে আগ্নেয়াস্ত্র আসে এমন সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে ব্লক রেইড দেওয়ার সিদ্ধান্ত এসেছে। এরই মধ্যে শুরু হয়েছে অস্ত্র উদ্ধারে সাঁড়াশি অভিযান।
জানা গেছে, অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন দিয়েছে পুলিশের একটি গোয়েন্দা সংস্থা। বিশেষ শাখার (এসবি) তৈরি করা প্রতিবেদন বলছে, ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসে দেশে গুলির ঘটনা ১৫০ ছাড়িয়ে গেছে। প্রতিদিন গড়ে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন পাঁচজনেরও বেশি। অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার অভিযানে গুরুত্বপূর্ণ ২০ জেলার দিকে বিশেষ নজর দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উচ্চপর্যায়ের একটি সভায়। ১৯ ফেব্রুয়ারির আইনশৃঙ্খলা-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভার বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, রাজনৈতিক উত্তাপ-অস্থিরতা ছড়ানোর আগেই টানা অভিযান চালিয়ে অবৈধ অস্ত্রের লাগাম টানতে হবে। সে অনুযায়ী প্রস্তুতি নেওয়ার বিষয়েও নির্দেশনা দেওয়া হয় বাহিনীগুলোকে। নির্বাচনের আগে প্রয়োজনে সমন্বিত অভিযান চলবে।
সূত্র আরও বলছে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী সীমান্তবর্তী ৩২ জেলায় ব্লক রেইড দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। দেশের এসব সীমান্ত ভারতের সঙ্গে ৩০টি এবং মিয়ানমারের সঙ্গে রয়েছে দুটি। এই ৩২ জেলার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে সিলেট। সিলেটসহ এ জেলাগুলোতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বিভিন্ন বাহিনী রাখছে কঠোর নজরদারি।
সিলেটভিউ২৪ডটকম / ডালিম