জন্মের পর থেকে মৃত্যু অবদি কেউ সুখ সচ্ছলতায় বাস করেন আবার কারো জীবন কাটে প্রতিনিয়ত জীবিকা নির্বাহের যুদ্ধ করে। এই জীবন জীবিকার যুদ্ধ যেন আমৃত্যু পিছু ছাড়ে না তাদের। তাদেরই একজন হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জ পৌরসভার বাসিন্দা রোশেনা বেগম (৬১)।
পৌরসভার আজিমনগর (মুন্সিহাটি) তে বাস তার। পৈতৃক নিবাস ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরে। ১৫ বছর আগে স্বামী আব্দুল হান্নান মারা গেছেন। এক মাত্র মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন ৮ বছর আগে। এখন তিনি একা। কিন্তু পেট তো চালাতে হবে। অভাবের তাড়না আর জীবনের তাগিদে পৌর শহররের বিভিন্ন এলাকায় চা-বিস্কুট ফেরি করে বিক্রি করেন তিনি।
বর্তমান সময়ে সর্বক্ষেত্রে নারীদের অংশগ্রহণ সমানভাবে থাকলে ও মফস্বল এলাকায় বিশেষ করে গ্রাম গঞ্জে তা দেখা যায়না বললেই চলে। রোশেনা আক্তার মেয়ের জামাই কিংবা সমাজের কারো ওপর নির্ভরশীল না হয়ে চা-বিস্কুট বিক্রি করেই জীবিকা নির্বাহ করছেন বিগত ছয় মাস ধরে। প্রথম দিকে অনেকই বিষয়টি ভালোভাবে না দেখলেও অনেকেই এখন উনাকে সম্মানের চোখে দেখেন।
পৌর শহরের লালমিয়া বাজার এলাকায় বিকাল বেলায় চা পানের সময় কথা হয় তার সাথে।
রোশেনা বেগম জানান, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর এলাকায় বাবার অভাবের সংসারে জন্ম তার, অভাব দেখেই বড় হয়েছেন তিনি। প্রায় ৩৫ বছর আগে আজমিরীগঞ্জ পৌরসভার আজিমনগর (মুন্সীহাটি) আব্দুল হান্নান ওরফে মনির উদ্দিনের সঙ্গে বিয়ে হয় তার। সেখানে বেশি দিন সুখ স্থায়ী হয়নি রোশেনা বেগমের। প্রায় পনের বছর আগে স্বামী মারা যাওয়ার পর একমাত্র মেয়েকে নিয়ে অনেক কষ্টে দিনপাত করেন তিনি। একসময় পেটের তাগিদ এবং মেয়ের বিয়ের কথা ভেবে সিলেটের ভোলাগঞ্জে পাথর শ্রমিকের কাজও করেন বেশ কয়েক বছর। মেয়ের বিয়ের পর আরো কিছু দিন পাথর শ্রমিকের কাজ করে ফিরে আসেন স্বামীর ভিটায়। অনেক চিন্তা ভাবনা করে পেট চালানোর তাগিদে প্রায় ছয় মাস পুর্বে আধা কেজি চিনি, ১০০ গ্রাম চাপাতা আর ৬৫০ টাকায় একটি চায়ের ছোট থার্মোস ফ্লাস্ক এবং ৫০ টি একবার ব্যবহার যোগ্য চায়ের কাপ কিনে প্রথমে শুধু চা ফেরি করে বিক্রি শুরু করেন। প্রথমে লজ্জা এবং ইতস্ততাবোধ কাজ করলেও এখন তা আর করে না। এখন সকাল ৭ টা থেকে বিকাল ৫টা এবং সন্ধ্যা থেকে রাত ৯ পর্যন্ত পৌর শহরের বিভিন্ন এলাকায় পায়ে হেটে চা-বিস্কুট ফেরি করে বিক্রি করেন তিনি।
তিনি বলেন, মেয়ের সংসারের অবস্থাও ভাল না, পেট চালাতে এই ব্যবসা শুরু করছি। কারো কাছে যাতে হাত না পাতা লাগে (কারো কাছে যেন হাত পাততে না হয়)। এখন গড়ে প্রতিদিন ১৫০ কাপের মত চা, ৩-৪ প্যাকেট পাউরুটি এবং ২-৩ প্যাকেট সিগারেট বিক্রি করতে পারি। দিন শেষে কিছু বাকিও থাকে। গড়ে প্রতিদিন সাড়ে ৩০০ টাকা লাভ থাকে। এখন মেয়ের বাচ্চাদের কিছু কিনে দিতে পারি। ঈদে নাতির জন্য ১ হাজর ৫০০ টাকা পাঠিয়েছি নতুন কাপড় কেনার জন্য। এর আগে নাতির চিকিৎসার জন্যও টাকা পাটিয়েছি।
আজমিরীগঞ্জ বাজারে মাছ ব্যবসায়ী লিটন মিয়া বলেন, বিগত কয়েক মাস যাবত উনাকে রোজ সকালে ফেরি করে এখানে চা-বিস্কুট বিক্রি করতে দেখি। কারো উপর নির্ভরশীল না হয়ে নিজেই পরিশ্রম করে জীবিকা নির্বাহ করছেন তিনি। উনার এমন সাহসী উদ্যোগকে আমরা সাধুবাদ জানাই।
এ বিষয়ে পৌর কাউন্সিলর নেকদার আলী মিয়া বলেন, উনি বিধবা ভাতার পাশাপাশি ভিজিডির সুযোগ সুবিধা পান। এছাড়াও সরকারি সব অনুদানে উনাকে অগ্রাধিকার দেয়ার চেষ্টা করি।
সিলেটভিউ২৪ডটকম/মিলাদ/এসডি-২১