“এই সোনার ধান ১৫শ টাকা মণ না অইলে চলার কোন গতি নাইগো স্যার। ৮০০ টাকা মণ বেঁচলে ধানের বাম্পার ফলন উঠলেও, "যেই লাউ সেই কদুয়ই থাকমু"। স্যার আপনেরা একটু সরকাররে কইয়া টইয়া ধানের দাম টাম বাড়াইন। ১হাজার ট্যাকা বাজারে লইয়া গেলে কুছতাই না, আমরাতো বৌ-বাচ্চা নিয়া চলতে অইব।” এভাবেই নিজের অভিব্যক্তি প্রকাশ করেন সুরেশ নামের এক প্রান্তিক কৃষক।
তিনি আরও বলেন, “ক্ষেতের ধান উঠাইতে ট্যাকা টোকা টাইন্যা যে লাগান খরচ অইছে হিসাব করলে অনেকতা। হুনতাছি আবার লেভিত (গোদাম) নাকি ধান টানব। অখন যদি ধান নেয় তাইলে আমরার লাগি খুব ভালা অইত ধানের দামডা ঠিকঠাক পাইলে কষ্টডা গায়ে লাগল নায়।”
স্থানীয় কৃষকদের মতে, এক বিঘা জমি ইজারা নিয়ে বীজতলা থেকে শুরু করে ফসল কেটে গোলায় তোলা পর্যন্ত প্রায় ১২-১৩ হাজার টাকা ব্যয় হয়। এর থেকে ধান উৎপাদন হয় মাত্র ১৮-২০ মণ। যার বাজার মূল্য বর্তমানে ১৫-১৬ হাজার৷ আবার এই জমির ফসল ফলাতে বিভিন্ন সংস্থা ও মহাজনের কাছ থেকে ঋণ আনতে হয়। এই ঋণ পরিশোধে বাধ্য হয়ে ধান বিক্রি করতে হয় গোলায় তোলার আগেই। তবে আমাদের কৃষিবান্ধব সরকার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যদি এই মুহুর্তে ধানের মূল্য বাড়ায় তাহলে আমরা অনেক লাভবান হতাম।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ব্রাহ্মণ বাড়িয়া ও ময়মনসিংহ থেকে আগত ধান ব্যবসায়ীরা বলেন, আমরা হাজার মণের বেশি ধারণ ক্ষমতার নৌকা নিয়ে ভাটি এলাকায় ধান ক্রয় করে আশুগঞ্জ ও ভৈরবে গিয়ে বিক্রি করি। সবকিছু ভাই বলা যায় না। স্থানীয় ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটের কারণে আমরাও কম দামে ধান কিনতে হচ্ছে। এতে কৃষকরা উপযুক্ত দাম থেকেও বঞ্চিত হয়। সরকার কৃষককে বাঁচাতে হলে ধানের মূল্য অবশ্যই বাড়াতে হবে।
এলাকার ধান ব্যবসায়ী রনজিৎ দাস বলেন, এখন ধানের ব্যবসা কঠিন হয়ে গেছে। ৮০০ টাকা মণ ধান কিনে তেমন কোন লাভ হয়নি। খরচের টাকা বাদ দিয়ে সামান্য কিছু পাই।
কৃষক আব্দুল লতিফ বলেন, ৮০০ টাকা বিক্রি করতে হয় ধান। এখন যে অবস্থা মানুষ বাঁচতে পারবে না। ধান বেশি হলে ধানের দাম কম, সরকার যদি ধানের দাম বাড়াত তাহলে গরীব বাঁচবে।
কৃষক মাহিন বলেন, বৈশাখের আগে যে চৈত্র মাস আছে এই সময়ে আমাদের কাছে কোন টাকা থাকে না৷ তখন নিরুপায় হয়ে ৫০০-৭০০ টাকা দরে ধান বিক্রি করতে হয়। এই জন্য আমরা সঠিক ধানের দাম পাইনা। সরকার ধানের দাম বাড়ালে আমরা উপকৃত হতাম।
এবিষয়ে উপজেলা খাদ্য গোদামের ওসিএলএসডি আমিনুল ইসলামকে ফোন দিলে তিনি ঢাকায় ট্রেনিংয়ে আসেন বলে জানান।
এবিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আবু তালেব বলেন, আমাদের ওসি এলএসডি ট্রেনিং থেকে আগামী কাল শুক্রবারে আসবেন। আমরা আগামী সপ্তাহে মিটিং করে গোদামে ধান কেনার উদ্বোধন করব। সরকার নির্ধারিত ধান ক্রয়ের রেট সম্ভবত ১২০০ টাকা।
সিলেটভিউ২৪ডটকম/সন্দীপন/এসডি-৭৬