সুনামগঞ্জে বোরো ধানের ফলন বাম্পার হলেও ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন কৃষকেরা। সরকারিভাবে ধান কেনায় দেরি হওয়ায় জরুরি প্রয়োজনে বাধ্য হয়েই কম মূল্যে ধান বিক্রি করছেন তাঁরা। শ্রমিকের মজুরি, মহাজনী ঋণের কারণে বাধ্য হয়েই কৃষকেরা কম মূল্যে খলাতেই ধান বিক্রি করছেন। 

 


সরকারিভাবে কৃষকদের কাছ থেকে সরাসরি ধান কেনার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয়েছে ৭ এপ্রিল। কিন্তু উদ্বোধন হলেও শুধু আনুষ্ঠানিকতার জন্য ১৮ টন ধান এবং চাল ১১৪ টন কেনা হয়েছে। 

 

জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মোহাম্মদ মইনুল ইসলাম ভূঞা বলেন, জেলার সাতটি উপজেলায় অ্যাপস-এর মাধ্যমে ও চার উপজেলায় লটারি করে কৃষক বাছাই করে ধান কেনা শুরু হবে। এসব প্রক্রিয়া করতে দেরি হচ্ছে । শিগগিরই কৃষকদের কাছ থেকে ধান কেনার কার্যক্রম পুরোদমে শুরু হবে। 

 

সুনামগঞ্জে এবার প্রায় পৌনে ৪ লাখ কৃষক ১৩ লাখ ৬০ হাজার টন ধান উৎপাদন করেছেন। ধানের এই বাম্পার ফলনেও ন্যায্য দাম না পেয়ে হতাশ কৃষক। সরকার ধানের দাম প্রতিমণ ১ হাজার ২০০ টাকা নির্ধারণ করলেও জেলার কোথাও এক হাজার টাকার বেশি ধান বিক্রি হচ্ছে না। 

 

সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার গুয়ারচুরা গ্রামের কৃষক আব্দুল মনাফ ১১ কেয়ার জমিতে বোরো ধান চাষ করেছেন। চাষাবাদের শুরুতেই চড়া সুদে টাকা ঋণ নিয়ে আবাদ করেছিলেন। এখন তাঁর সব জমির ধান কাটা-মাড়াই প্রায় শেষ। খলা থেকে ধান মেপে টাকার পরিবর্তে ধান দিচ্ছেন মহাজনী ঋণ পরিশোধ করার জন্য। 

 

কৃষক আব্দুল মনাফ বলেন, ‘সরকারিভাবে যদি ধান আগে কেনা হইতো তাহলে আমরা কিছুটা উপকৃত হইতাম। এখন শ্রমিকের মজুরি ও ঋণের টাকা পরিশোধ করতে হচ্ছে ফরিয়াদের কাছে ধান বিক্রি করে। তাও ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা মণ বিক্রি করছি।’ 

 

সদর উপজেলার ইসলামপুর গ্রামের কৃষক বাতেন মিয়া বলেন, ‘বোরো ফসলের ওপর আমরা নির্ভর। সংসারের অনেক খরচ আছে, এসব খরচ মেটাতে গিয়ে আমরা খলাতেই পাইকারের কাছে কম দামে ধান বিক্রি করতাছি।’ 

 

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক বিমল চন্দ্র সোম বলেন, ‘প্রকৃত কৃষকেরাই যাতে সরকারিভাবে গুদামে ধান বিক্রি করতে পারেন সেভাবেই আমরা তালিকা করে খাদ্য বিভাগে পাঠিয়েছি। আমরা আশা করছি কৃষকেরা ন্যায্য মূল্য পাবেন।’ 

 

চলতি বছর সুনামগঞ্জে সরকারিভাবে ১৭ হাজার ৪৮৩ টন ধান কেনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। গেল বছর ছিল ২৮ হাজার টন।

 

সিলেটভিউ২৪ডটকম/ মাহি