ভয়াবহ আগুনে পুড়েছিল পুরো বঙ্গবাজার। দীর্ঘ সময় স্থায়ী হয়েছিল এ আগুন। মার্কেটের সঙ্গে ভস্মীভূত হয়েছিল হাজারো ব্যবসায়ীর স্বপ্ন। পরবর্তী সময়ে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছেন স্বপ্নহারা এসব ব্যবসায়ীরা। কিন্তু সেভাবে জ্বলেনি আশার আলো। সব কিছু ভুলে নতুন করে ব্যবসায় ফিরতে চাইছেন তারা। তাইতো বঙ্গবাজারে বাঁশ দিয়ে ঘর বানাচ্ছেন তারা, আশা দেখছেন যেন ফিরতে পারেন ব্যবসায়।
 

গত ৪ এপ্রিল বঙ্গবাজারে ভয়াবহ আগুনের ঘটনা ঘটে, স্বপ্ন পুড়ে হাজারো ব্যবসায়ীর। ঈদের আগের এ সময়টায় ছিল তাদের ব্যবসার আসল মৌসুম। বছরের পুরো সময় তেমন বেচাকেনা না হলেও এসময় সবকিছু পুষিয়ে নেন তারা। কিন্তু গেল ঈদে ভাগ্য সহায় হয়নি ব্যবসায়ীদের।
 


ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা যায়, বঙ্গবাজারে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীর সংখ্যা ৩ হাজার ৮৪৫ জন। তারা যেন ব্যবসায় ফিরতে পারে সেজন্য বেশকিছু উদ্যোগও নিয়েছে করপোরেশন। মার্কেটের ১.৭৯ একর জায়গা পরিষ্কার করে সেখানে ইট বিছিয়ে দিয়েছে তারা, যেন ব্যবসায়ীরা চৌকি বিছিয়ে আপাতত ব্যবসা চালিয়ে নিতে পারেন। কিন্তু খোলা আকাশের নিচে চৌকি বসানো হলেও তীব্র রোদ আর তাপদাহে সেভাবে ক্রেতা পাচ্ছিলেন না ব্যবসায়ীরা। পরে চৌকির উপর বড় বড় ছাতা বসালেও মেলেনি সুফল।
 

ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে পুনর্বাসন বা মার্কেট নির্মাণের কোন অগ্রগতি না দেখে যৌথভাবে বাঁশের ঘর তুলছেন তারা। ইতোমধ্যে সামনের দিকের অংশে বেশকিছু বাঁশের ঘর তৈরি করা হয়েছে, উপরে দেওয়া হয়েছে ত্রিপল। এখন পূর্ব অংশে নতুন করে বাঁশের ঘর বানানো হচ্ছে। মূলত ৫/৬ জন ব্যবসায়ী মিলে একটি করে বড় বাঁশের ঘর বানাচ্ছেন। এর মধ্যেই নতুন করে ব্যবসা শুরুর জন্য মালামাল নিয়ে বসবেন তারা। এসব বাঁশের ঘর তৈরিতে প্রত্যেক ব্যবসায়ীর খরচ হচ্ছে প্রায় ৫-৭ হাজার টাকা।


বুধবার(১০ মে) সরেজমিনে দেখা যায়, বাজারটির পূর্ব অংশজুড়ে আলাদাভাবে এসব বাঁশের ঘর তৈরি করা হচ্ছে। পাশাপাশি উপরের অংশে ত্রিপল লাগানোর জন্য আলাদাভাবে কাঠামো করা হচ্ছে। এছাড়া রাস্তা সংলগ্ন পশ্চিম অংশে ইতোমধ্যে বাঁশ আর উপরে ত্রিপল দিয়ে ঘরের মতো তৈরি করা হয়েছে। সেখানে এরই মধ্যে ব্যবসা শুরু করেছেন ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা।
 

বঙ্গবাজারের ক্ষতিগ্রস্ত মাহিম কালেকশনের মালিক মিজানুর রহমান বলেন, আগুনে একে তো সব পুড়ে শেষ। পরে ঈদের বাজারটা ধরার জন্য বসেছিলাম। কিন্তু তীব্র রোদে খোলা আকাশের নিচে কোন কাস্টমার আসে না। সারাদিন শুধু দোকান খুলে বসে থাকাই হয়। যে কারণে আমরা ব্যবসায়ীরা মিলে এমন বাঁশের ঘর বানিয়ে নিচ্ছি। যার উপরে থাকবে শামিয়ানা। ৪/৫ জন করে ব্যবসায়ীরা একত্রিত হয়ে এসব বড় আকৃতির ঘর বানাচ্ছি। যেন এর নিচে চৌকিতে বসে আমরা ব্যবসা করতে পারি।
 

বঙ্গবাজারের আরেক পাইকারি ব্যবসায়ী সিরাজুল ইসলাম বলেন, এতদিন চৌকিতে শুধু খুচরা ব্যবসায়ীরা বসেছিল। কিন্তু খোলা আকাশের নিচে হওয়ায় ব্যবসা হচ্ছিলো না। এখন আমরা সবাই মিলে উদ্যোগ নিয়ে বাঁশের ঘর তৈরি করছি। আগে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ব্যবসায়ীরা পাইকারি মাল কিনতে আসতো। কিন্তু বাজার পুড়ে যাওয়ার পর আর তেমন আসছেন না। তাই আমরা বাঁশ দিয়ে ঘর বানিয়ে ব্যবসায় ফিরতে চাচ্ছি। 
 

তিনি বলেন, আমাদের পুনর্বাসন-মার্কেট নির্মাণ কবে হবে, তার কোন ঠিক নেই। তাই নিজেরাই এমন উদ্যোগ নিয়েছি। এছাড়া দোকানের মতো কিছু একটা থাকলে তো দেশের বিভিন্ন প্রান্তের পাইকারি ক্রেতারা আসতে পারবেন।
 

এদিকে রাস্তা সংলগ্ন পশ্চিম অংশে ইতোমধ্যে বাঁশের দোকানে ব্যবসা করছেন ৪/৫ জন ব্যবসায়ী। তাদের একজন মোনায়েম আলী বলেন, খোলা আকাশের নিচে রোদে থাকা চৌকিতে কেনাকাটা করতে কোন ক্রেতাই আসতো না। পরে আমরা কয়েকজন ব্যবসায়ী যৌথভাবে এমন বাঁশের ঘর বানিয়েছি। এখন সেখানে আমরা ৫ জন দোকান মালিক আলাদা আলাদা চৌকি বসিয়ে দোকান পরিচালনা করছি। তাও এখন দুই একজন ক্রেতা আসছে।
 

এ ব্যবসায়ী আরও বলেন, পশ্চিম দিকের অংশে আমাদের মতো কয়েকজন ব্যবসায়ী বাঁশের দোকান বানিয়েছে। এখন পূর্বদিকের পুরো অংশজুড়েই ব্যবসায়ীরা এমন বাঁশের ঘর বানানো শুরু করেছেন। মার্কেট নির্মাণ বা পুনর্বাসনের আগ পর্যন্ত এভাবেই সবাই নিজেদের ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে চেষ্টা করছেন।
 


সিলেটভিউ২৪ডটকম/ডেস্ক/এনটি


সূত্র : ঢাকা পোস্ট