প্রবাসী অধ্যুষিত উপজেলা জগন্নাথপুরে দলীয় প্রতীক ‘নৌকা’র বিরোধীতা এখন রেওয়াজে পরিণত। আগামী ২৫ মে উপ-নির্বাচনেও এই উপজেলায় আওয়ামী লীগের দুই প্রার্থী নির্বাচন যুদ্ধে নেমেছেন। আওয়ামী লীগ প্রার্থী ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি নুরুল ইসলামের বিরুদ্ধে ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহসভাপতি হারুন রাশীদ বিদ্রোহী প্রার্থী। তিনি উপজেলার চিলাউড়া হলদিপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ছিলেন।

 


হারুন স্থানীয় রাজনীতিতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য আজিজুস সামাদ আজাদ ডন অনুসারী হিসেবে পরিচিত। যদিও ডন হারুনের বাড়িতে গিয়ে তাঁকে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের অনুরোধ করলেও হারুন তাঁর অনুরোধ রাখেননি। এদিকে নুরুল ইসলামের সমর্থকেরা বলছেন, হারুনকে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের অনুরোধের ঘটনাটি ডনের ‘রাজনৈতিক কৌশল’। ডন বিদ্রোহী প্রার্থীর পাশে আছেন।

 

আওয়ামী লীগের প্রার্থী নুরুল ইসলাম বলেন, বঙ্গবন্ধুর আদর্শের কোনো কর্মী দলের সিদ্ধান্তের বাইরে যেতে পারেন না। তিনি আশাবাদী, সবাই নৌকার বিজয় সুনিশ্চিত করতে কাজ করবেন।

 

বিদ্রোহী প্রার্থী হারুন রাশীদ বলেন, ‘জীবনের শেষবেলায় চলে এসেছি। এলাকাবাসীর অনুরোধে প্রার্থী হয়েছি।’

 

আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতা-কর্মীরা বলেন, ২০০৫ সালে সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও সংসদ সদস্য আবদুস সামাদ আজাদের মৃত্যুর পর সুনামগঞ্জ-৩ আসনে দলীয় মনোনয়ন নিয়ে তাঁর ছেলে আজিজুস সামাদ এবং বর্তমান সংসদ সদস্য ও পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নানের মধ্যে রাজনৈতিক বিরোধ দেখা দেয়। ২০০৮ সাল থেকে এ আসনে দলের মনোনয়ন পান এম এ মান্নান। আজিজুস সামাদ মনোনয়নবঞ্চিত হলেও এলাকায় তাঁর একটি বলয় তৈরি হয়।

 

গত ২ নভেম্বর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে জগন্নাথপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সংসদ সদস্যের অনুসারী প্রয়াত আকমল হোসেন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ওই সময় দলের উপজেলা সাংগঠনিক সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান মুক্তাদীর আহমেদ স্বতন্ত্র প্রার্থী প্রার্থী হন। তিনিও বর্তমানে স্থানীয় রাজনীতিতে ডনের অনুসারী হিসেবে পরিচিতি।

২০২২ সালের ২৬ ডিসেম্বর আকমল হোসেন মারা যান। এরপর নির্বাচন কমিশন উপনির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে। তফসিল অনুযায়ী সোমবার ছিল মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের দিন। কিন্তু হারুন মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেননি।

 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উপজেলা আওয়ামী লীগের এক নেতা (এম এ মান্নানের এক অনুসারী) বলেন, বিদ্রোহী প্রার্থীকে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করার অনুরোধ আজিজুস সামাদের রাজনৈতিক কৌশল। তাঁর অনুসারী অনেকে বিদ্রোহী প্রার্থীর সঙ্গে আছেন।

 

জগন্নাথপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মিজানুর রশিদ ভুইয়া বললেন, বিগত পৌর নির্বাচনেও দলীয় প্রার্থী ছিলাম আমি। আমার বিরুদ্ধেও বিদ্রোহী প্রার্থী ছিল। দল কোন ব্যবস্থা নেয় নি। এসব কারণে দলীয় প্রতীকের বিরোধীতা করতে কেউ ভয় পায় না।

 

এ বিষয়ে আজিজুস সামাদ আজাদ ডন বলেন, তিনি হারুন রাশীদের বাড়িতে গিয়ে তাঁকে অনুরোধ করছিলেন মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করতে। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার না করে হারুন দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করেছেন। তিনি সবাইকে নৌকার পক্ষে কাজ করতে বলছেন।

 

গত মঙ্গলবার দুপুরে উপজেলা পরিষদের সম্মেলনকক্ষে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী পাঁচ প্রার্থীর মধ্যে প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হয়। আওয়ামী লীগের প্রার্থী নুরুল ইসলাম (নৌকা), জাতীয় পার্টি মনোনীত প্রার্থী আতাউর রহমান (লাঙ্গল), জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের প্রার্থী আবদুল কাইয়ুম কামালি (খেজুরগাছ), স্বতন্ত্র প্রার্থী হারুন রাশীদ (আনারস) ও সৈয়দ তালহা আলম (কাপ-পিরিচ) পেয়েছেন।

 

সিলেটভিউ২৪ডটকম/ মাহি