কিশোরবেলার দূরন্তপনা নিয়ে একটু বকেছিলেন মা। অভিমান করে ঘরে রাখা ৩ লাখ টাকা নিয়ে বাড়ি ছেড়ে চলে যায় ১৫ বছরের ইবরাহিম ইসলাম আকাশ। ঢাকাগামী বাসে উঠে পথ ভুলে নেমে পড়ে নারায়ণগঞ্জে। কিন্তু বার বার ‘প্রতারকের’ খপ্পরে পড়ে খোয়াতে বসেছিলো পুরো ৩ লাখ টাকাই। সর্বোপরি হুমকির মুখে পড়েছিলো অবুঝ আকাশের জীবন পর্যন্ত। তবে নারায়ণগঞ্জের এক মানবতার ফেরিওয়ালা তাকে পেয়ে ফিরিয়ে দেন মা-বাবার কাছে। এমনকি নারায়ণগঞ্জের এক প্রতারকের কাছ থেকে ৮০ হাজার টাকাও উদ্ধার করেন সেই সাদা মনের মানুষ।

সিলেট বিভাগের হবিগঞ্জ জেলার মাধবপুর উপজেলার বাঘাছড়া ইউনিয়নের সাথপাড়িয়া গ্রামের মো. জিয়াউর রহমানের ছেলে ইবরাহিম ইসলাম আকাশ গত ২৮ এপ্রিল ঘরে রাখা ৩ লাখ টাকা নিয়ে বাড়ি থেকে অভিমান করে বেরিয়ে যায়। ২২ দিন পর রবিবার (২১ মে) তাকে নারায়ণগঞ্জে পেয়ে স্থানীয় এক মহানুভব ব্যক্তি তাকে বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে আসার ব্যবস্থা করেন এবং রবিবার রাতেই ইবরাহিমকে সঙ্গে তার বাড়িতে আসেন তিনি।


ইবরাহিমকে বাড়িতে ফিরিয়ে নিয়ে আসা মো. মহসিন মিয়া নারায়ণগঞ্জের তারাবর পৌরসভা এলাকার মুগরাকুলেল মকবুল হোসেনের ছেলে। 

ইবরাহিম ও তার পরিবারের বরাত দিয়ে মহসিন সোমবার (২২ মে) বিকেলে সিলেটভিউ-কে মুঠোফোনে বলেন, গত ২৮ এপ্রিল মায়ের বকুনি খেয়ে ওই কিশোর ঘরে রাখা ৩ লাখ টাকা নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে আসে। প্রথমেই সে হবিগঞ্জের চুনারুঘাটস্থ তার এক সহপাঠী ও বন্ধুর বাড়িতে গিয়ে উঠে। সেখানে কয়েকদিন অবস্থান করে ইবরাহিম। কিন্তু বন্ধুর লোভ পড়ে তার টাকার প্রতি। ইবরাহিমের সঙ্গে থাকা ৩ লাখ টাকা থেকে ১ লাখ টাকা হাতিয়েও নেয় বন্ধু। এরপরই বন্ধুর বাড়ি থেকে চলে যায় ইবরাহিম। সেদিন ঢাকায় যাওয়ার উদ্দেশে বাসে উঠে পথ ভুলে নারায়ণগঞ্জে চলে যায় সে।  বাস থেকে নেমে এক রিকশাচালকের কাছে আশ্রয় চায়। ওই রিকশাচালক নারায়ণগঞ্জের তারাবর পৌরসভার এলাকার বিশ্বরোডের একটি কলোনিতে ভাড়া থাকেন। ইবরাহিমকে তিনি আশ্রয় দেন ঠিকই, কিন্তু তারও লোভ চলে যায় ইবরাহিমের টাকার প্রতি। রিকশাচালক ইব্রাহিমকে বলেন- এত (দুই লাখ) টাকা নিজের কাছে রাখ নিরাপদ নয়। টাকাগুলো যেন তার (রিকশা চালকের) কাছে দিয়ে দেয়। 

‘প্রতারক’ রিকশাচালকের কথার ফাঁদে পা দিয়ে সহজ-সরল ইবরাহিম সব টাকা তার হাতে দিয়ে দেয়। কয়েক দিন রিকশাচালকের বাসায় অবস্থানের পর টাকার প্রয়োজন হলে ইবরাহিম টাকা চাইলে রিকশাচালক দিতে অস্বীকৃতি জানান এবং তাকে হুমকি-ধমকি পর্যন্ত দেন। এ ঘটনার পর শনিবার (২১ মে) সকালে ইবরাহিম ‘প্রতারক’ রিকশাচালকের বাসা থেকে বেরিয়ে এসে পার্শ্ববর্তী একটি রেস্টুরেন্টে বসে কান্না করছিলো। ওই সময় মহসিন তাকে দেখতে কান্নার কারণ জিজ্ঞাসা করেন এবং বিস্তাতির ঘটনা জানেন। পরে তিনি ইবরাহিমকে নিয়ে ওই ‘প্রতারক’ রিকশাচালকের বাসায় যান এবং টাকা ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য চাপ দেন। কিন্তু ৮০ হাজার টাকা ফিরিয়ে দিয়ে বাকি টাকা খরচ হয়ে গেছে বলে ক্ষমা চান ওই রিকশাচালক। তারপর ইবরাহিমের কাছ থেকে ইবরাহিমের বাবার মোবাইল ফোন নাম্বার নিয়ে কল দিয়ে সব ঘটনা খুলে বলেন এবং তার ছেলেকে (ইবরাহিম) বাড়ি ফিরিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। 

কথামতো ইবরাহিমকে নিয়ে মাধবপুর আসার জন্য শনিবার বিকালেই বাসে চড়েন মহসিন এবং রাতে তার বাড়িতে পৌঁছেন। 

ইবরাহিমকে ফিরে পেয়ে তার মা-বাবা আনন্দে কেঁদে ফেলেন এবং মহসিনের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। 

ইবরাহিমের বাবা জিয়াউর রহমান মুঠোফোনে সিলেটভিউ-কে বলেন- টাকা চলে যাক, আমার ছেলেকে যে ফিরে পেয়েছি এ জন্য সৃষ্টিকর্তার কাছে শুকরিয়া। 

এসময় তিনি মহসিনের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। 

জিয়াউর রহমান জানান- ঘর মেরামতের জন্য ৩ লাখ জমা করে রেখেছিলেন ঘরে। সেই টাকা নিয়েই বাড়ি ছেড়েছিলো তার ছেলে ইবরাহিম।


সিলেটভিউ২৪ডটকম / ডালিম