সিলেটের ওসমানীনগরের গোয়ালাবাজার সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ইচ্ছামতো বিদ্যালয়ে যাওয়া-আসা, সরকারী বরাদ্ধকৃত অর্থ আত্মসাৎ ও শিক্ষার্থীদেরকে অশ্লিল ভাষায় গালিগালাজ, অভিবাকদের সাথে দূর-ব্যবহরসহ নানা রকম দূর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। 

এসব বিষয়ে অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন বিদ্যালয়ের অভিবাকরা। অভিযোগের অনুলিপি সিলেট বিভাগীয় কমিশিনার, জেলা প্রশাসক, দূর্নীতি দমন কমিশিন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কাছেও প্রেরণ করা হয়েছে বলে জানা গেছে।  


লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার গোয়ালাবাজার সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ওয়েছ আহমদ চৌধুরী বেশির ভাগ সময় বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থেকে রাজনৈকি কর্মকান্ডে লিপ্ত থাকেন। সরকার বিরোধী কর্মকান্ড নিয়ে বহিরাগতদের বিদ্যালয়ে এনে গভীর রাত পর্যন্ত বিদ্যালয়ের অফিস কক্ষে গোপন মিটিং করেন। এছাড়া বিদ্যালয়ের অবিভাবক ও বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতির সাথে অশালিন আচরণ করছেন প্রতিনিয়িত। বিদ্যালয়ের কোমলমতি শিক্ষার্থীদের উপর অমানবিক নির্যাতন ও অশ্লিল আচরনের পাশাপাশি বিদ্যালয়ের স্লিপে অর্থ, প্রাক প্রাথমিকের বরাদ্ধ ও ক্ষুদ্র মেরামতের অর্থ আত্মসাৎ করার করার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে। এসব বিষয়ে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি, অবিভাবক কমিটিসহ সংশ্লিষ্টরা কেউ প্রতিবাদ করলে তিনি প্রতিবাদকারীর ব্যাক্তির নানা প্রকার ক্ষতি সাধনের হুমকি দিয়েছেন প্রধান শিক্ষক ওয়েছ আহমদ চৌধুরী। অবশেষে জেলা পরিষদ সদস্য, গোয়ালাবাজার ইউনিয়নের একাধিক ইউপি সদস্যের স্বাক্ষরসহ প্রায় অর্ধশতাধিক অভিবাবকরা সম্মেলিত ভাবে সংশ্লিষ্ট উধ্ধর্তন কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত অখিযোগ দিলেও কোনো কাজ হচ্ছে না। 

বিদ্যালয়ের অভিভাবক কমিটির সভাপতি সিতার আলী বলেন,কারনে অকারনে বিদালয়ের কোমলমতি শিক্ষার্থীদের উপর শারিরিক ভাবে নির্যাতন অশালিন আচরণ করে ওই প্রধান শিক্ষক। নিজেকে শিক্ষক নেতা পরিচয় দিয়ে সপ্তাহের অধিকাংশ সময় তিনি বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থাকেন। বিদ্যালয়ের চালাকালিন সময় তিনি বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থাকলেও অনেক সময় রাতের বেলা তিনি অফিস এসে গোপন মিটিং করতে দেখা যায়।এসব বিষয়ে  অভিভাকদের পক্ষ থেকে প্রতিবাদ করায় তিনি একাধিক অভিবাবকের সাথে  দূর ব্যবহার ও নানা ধরণের হুমকি ধামকি দিয়ে ধাপট দেখাচ্ছেন। প্রধান শিক্ষকের এমন কর্মকান্ডে হতাশ হয়ে একাধিক অভিবাবকরা তাদের শিশুদের অন্যত্র ভর্তি করারও প্রস্তুতি চালিয়েছেন।  
বিদ্যালয় পরিচালনা কামিটির সভাপতি শিহাবুর রহমান জানান, ফাঁকা ভাউচার এনে আমাকে স্বাক্ষর দেয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করেন প্রধান শিক্ষক ওয়েছ আহমদ। একাধিকার বিদ্যালয়ে উন্নয়নের কথা বলে স্বাক্ষর নিয়ে অর্থ উত্তোলন করেও কোন উন্নয়ন করা হয়নি। আমি এই বিষয়ে প্রধান শিক্ষকের সাথে কথা বললে তিনি অশালিন আচরন করেছে বিষয়টি আমি  সংশ্লিষ্টদের অবগত করেছি। 

বিদ্যালয় এলাকার বাসিন্দা উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আলাউর রহমান আলা বলেন, প্রধান শিক্ষক ওয়েছ আহমদ চৌধুরী বিএনপির রাজনীতির সাথে ওৎপতভাবে জড়িত থাকার পাশাপাশি নিজেকে বাংলাদেশ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির কেন্দ্রেয়ী কমিটির সভাপতি পরিচয় দিয়ে উপজেলা শিক্ষা অফিসকে ম্যানেজ করে বিদ্যালয় পরিচালনার নামে লুটপাট ও উন্নয়ন বরাদ্ধের টাকা করছেন আত্মসাৎ।তার এসব অনৈতিক কর্মকান্ডে সুনামধন্য বিদ্যালয়ের মান-সম্মান ক্ষুন্ন হওয়াসহ শিক্ষার পরিবেশ হচ্ছে বিনষ্ট।বিগত সময়ে দূর্নীতিসহ অনিয়মের কারনে তিনি একাধিকবার সংবাদ মাধ্যমে শিরোনাম হওয়ার পাশাপাশি চাকুরী থেকে সাময়িক বরখাস্থসহ অন্য উপজেলায় স্যান্ডরিলিজ হলেও উধ্ধর্তন কর্তৃপক্ষকে ম্যানেজ করে তিনি এখনও বহাল তবিয়তে এ বিদ্যালয়ে থেকে অনিয়ম ও দূর্নীতি‘র স্বর্গ রাজ্য গড়ে তুলেছেন।

সার্বিক বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক ওয়েছ আহমদ চৌধুরীর ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করলেও তিনি রিসিভ করেননি। 

ওসমানীনগর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ভারপ্রাপ্ত দিলিপময় দাশ চৌধুরী বলেন, এ সংক্রান্ত লিখিত অভিযোগের অনুলিপি আমরা পেয়েছি। অভিযোগটি আমাদের উর্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রেরণ করা হয়েছে। ঊর্ধতন কর্তপক্ষের অনুমতি সাপেক্ষে সার্বিক বিষয় খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। 


সিলেটভিউ২৪ডটকম / রনিক / ডি.আর