হাস্যোজ্জ্বল ক্যাম্ফার (একেবারে বায়ে)। পুরো ম্যাচে এভাবেই হেসেছেন তিনি। ছবি: সংগৃহিত

ফ্র্যাঞ্চাইজির নাম ফরচুন বরিশাল। কিন্তু এবারের বিপিএল যেন তাদের জন্য ‘দুর্ভাগ্যের’! ঢাকা পর্বে তিন ম্যাচের দুটিতে হার, আশা ছিল সিলেটে জয়ের কক্ষপথ খুঁজে পাবে তারা। কিন্তু কোথায় কী! এক কার্টিস ক্যাম্ফারের কাছেই যেন আজ হেরে গেল ফরচুন বরিশাল।

সিলেটে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের কাছে ১০ রানে হেরেছে ফরচুন বরিশাল। চট্টগ্রামের ৪ উইকেটে ১৯৩ রানের জবাবে ৭ উইকেটে ১৮৩ রানে থামে তারা।


ঢাকা পর্বে তিন ম্যাচ দুই জয় ছিল চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের। সিলেট পর্বে নিজেদের প্রথম ম্যাচেই জয় তুলে নিল শুভাগত হোমের দল। চার ম্যাচে তিন পরাজয় নিয়ে বরিশাল এখনও স্বস্তির খোঁজে হয়রান।

আজ টসে জিতে চট্টগ্রামকে ব্যাটিংয়ে পাঠিয়েছিল বরিশাল। আভিষ্কা ফার্নান্দো আর কার্টিস ক্যাম্ফারের তাণ্ডবে এবারের বিপিএলের সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহ ১৯৩ রান দাঁড় করায় চট্টগ্রাম। ফার্নান্দো ৫০ বলে ৯১ আর ক্যাম্ফার ৯ বলে ২৯ রান করে অপরাজিত থাকেন। পরে বল হাতেও বরিশালের জন্য ‘দুর্ভাগ্য’ হয়ে দেখা দেন ক্যাম্ফার। ৩ ওভারে ২০ রান খরচায় ৪টি উইকেট তো নিয়েছেনই, সঙ্গে ‘বোনাস’ হিসেবে আছে চারটি ক্যাচও! এ যেন রীতিমতো ক্যাম্ফার ‘শো’!

চট্টগ্রামের ছুঁড়ে দেওয়া বড় লক্ষ্যের পানে ছুটতে যেরকম ব্যাটিং দরকার, বরিশালের আহমেদ শেহজাদ সেরকম কিছুরই পসরা সাজিয়েছিলেন। তবে বিলাল খানের শর্ট পিচে পুল করতে গিয়ে ক্যাম্ফারের হাতে ক্যাচ তুলে শেষ হয় তার ১৭ বলে ৩৯ রানের ঝড়ো ইনিংস। পাঁচটি চার আর দুটি ছক্কা ছিল তার ইনিংসে।

পাঁচ ওভারের সমান সংখ্যক বল খেললেও দুটি চার ও একটি ছয়ে তামিম ইকবালের ৩৩ রানের ইনিংসে ছিল না ছন্দ। কার্টিস ক্যাম্ফারের স্লো বাউন্সারে লং অনে ফার্নান্দোর হাতে ক্যাচ দিয়ে শেষ হয় তার ইনিংস। টিকতে পারেননি সৌম্য সরকারও। ক্যাম্ফারের ওই ওভারেই উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন এই বাঁহাতি (১৬ বলে ১৭)।

এক ওভার পর শেষ মাহমুদউল্লাহ রিয়াদও। ঘাতক ওই ক্যাম্ফার। স্লোয়ার লেন্থের বলে উড়িয়ে মেরেছিলেন রিয়াদ, ধরা পড়েন ডিপ মিড উইকেটে দিপুর হাতে (৪ বলে ৩)। নিজের আগের ওভারেই জোড়া উইকেট শিকার করেছিলেন আইরিশ ক্রিকেটার ক্যাম্ফার। এ ওভারেও জোড়া আঘাত! রিয়াদের পর তুলে নেন ইয়ানিক ক্যারিয়াহকেও (২ বলে ৪)।

শ্লথ হয়ে পড়া রানের চাকায় গতি আনেন মেহেদি হাসান মিরাজ। মেলে ধরেন স্ট্রোকের ফুলঝুরি। কিন্তু ১৬ বলে ৩৫ করে থেমে যেতে হয় তাকেও। আল আমিনের বলে মিড উইকেটে ক্যাম্ফারের ক্যাচ হন মিরাজ। তার ইনিংসে ছিল তিনটি চার ও দুটি ছয়। পরের ওভারে বিদায় নেন ছন্দহীন মুশফিকুর রহিম (২২ বলে ২৩)।

আব্বাস আফ্রিদি (৯ বলে ১১) ও দুনিথ ওয়ালেলাগে (৪ বলে ১০) পরাজয়ের ব্যবধানই কেবল কমিয়েছেন। ৭ উইকেট ১৮৩ রানে থামে বরিশাল।

ক্যাম্ফার ৪টি ছাড়াও চট্টগ্রামের বিলাল খান ৪ ওভারে ৩৬ রানে দুটি উইকেট নিয়েছেন।

এর আগে টসে হেরে ব্যাটিং পাওয়াটা যেন বাড়তি লাভ হয়েই দেখা দেয় চট্টগ্রামের জন্য। তাইজুল ইসলামের করা প্রথম ওভারের দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ বলে টানা তিন বাউন্ডারি হাঁকান তানজিদ হাসান তামিম! পঞ্চম বল প্যাডের ওপর ভাসিয়ে দিয়েছিলেন তাইজুল, স্লগ সুইপে ডিপ স্কয়ার লেগ দিয়ে ছক্কা মারতে যান তানজিদ। কিন্তু বাউন্ডারিতে ক্যাচ হয়ে শেষ হয় তার ৫ বলে ১২ রানের ইনিংস। নিজের দ্বিতীয় ও ইনিংসের তৃতীয় ওভারে ফের আঘাত হানেন তইজুল। বল স্পিন করে বেরিয়ে যাবে মনে করে ব্যাট চালান ইমরানউজ্জামান। কিন্তু বল ভেতরে ঢুকে স্টাম্প ছত্রখান করে দেয় তার (৮ বলে ৪)।

২১ রানে ২ উইকেট হারিয়ে বসা চট্টগ্রামকে বড় সংগ্রহের পথ দেখান আভিষ্কা ফার্নান্দো ও শাহাদাত হোসেন দিপু। তৃতীয় উইকেটে এ দুজন গড়েন ৫৫ বলে ৭০ রানের দারুণ এক জুটি। কার্যকর এ জুটি ভাঙে শাহাদাতের বিদায়ে। ক্যারিবিয়ান স্পিনার ইয়ানিক ক্যারিয়াহর গুগলিতে বিভ্রান্ত হয়ে বোল্ড হয়ে যান ২৯ বলে দুটি চার ও একটি ছয়ে ৩১ রান করা শাহাদাত।

জুটি ভাঙলেও ‘মচকাননি’ ফার্নান্দো। স্ট্রোকের ঢালি মেলে তুলোধুনো করতে থাকেন বরিশালের বোলারদের। ৪০ বলে ফিফটি করা এই লঙ্কান পরের ১০ বলে যোগ করেন আরও ৩৯ রান! এর মধ্যে ছক্কা চারটি, চার তিনটি।

শাহাদাতের আউটের পর ফার্নান্দোর সঙ্গে যোগ দেন কার্টিস ক্যাম্ফার। এসেই ব্যাটে ঝড় তুলেন এই আইরিশ ক্রিকেটার। প্রথম তিন বলেই কামরুল ইসলামকে পাঠান বাউন্ডারিতে। পরের ওভারে আব্বাস আফ্রিদিকে দুবার উড়িয়ে দেন সীমানার বাইরে। ৯ বলে দুটি ছয় ও তিনটি চারে ২৯ রান আসে ক্যাম্ফারের ব্যাট থেকে। সেঞ্চুরির সুবাস পাওয়া ফার্নান্দোকে অপরাজিত থাকতে হয় ৫০ বলে সাতটি ছয় ও পাঁচটি চারে ৯১ রানে। তাদের ১১ বলের জুটিতে রান আসে ৩৪।

বরিশালের সেরা বোলার তাইজুল। ৪ ওভারে ২৬ রান খরচায় পেয়েছেন ২টি উইকেট।

জয়-পরাজয় ছাপিয়ে রানোৎসব ছিল এ ম্যাচের অন্যতম পাওয়া। গ্যালারিতে ছড়িয়ে থাকা হাজার দুয়েক দর্শক মাতলেন চার-ছক্কার ফুলঝুরিতে। রান খরা কাটিয়ে বিপিএলে সিলেট পর্বে দ্বিতীয় দিনেই হয়ে এবারের আসরের সবচেয়ে বেশি রানের ম্যাচ।

সিলেটভিউ২৪ডটকম/আরআই-কে