বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনা ও যথাযোগ্য মর্যাদায় বর্ণাঢ্য আয়োজনের মধ্য দিয়ে জালালাবাদ ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজে (জেসিপিএসসি) ‘মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস-২০২৪’ উদ্‌যাপন করা হয়েছে।


মঙ্গলবার ( ২৬ মার্চ) সূর্যোদয়ের সাথে সাথে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে দিবসের কার্যক্রম শুরু হয়।



সকাল ৯:৫০ ঘটিকায় ব্যাডমিন্টন প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয় এবং সকাল ১০:০০ ঘটিকায় প্রতিষ্ঠানের অডিটোরিয়ামে সমবেত জাতীয় সঙ্গীত গাওয়ার মধ্য দিয়ে মূল অনুষ্ঠান শুরু হয়।


অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ লে. কর্নেল তাহিয়াত চৌধুরী, পিএসসি, উপাধ্যক্ষ সহকারী অধ্যাপক শারমীন আক্তার, শিক্ষকমণ্ডলী ও শিক্ষার্থীবৃন্দ।


প্রতিষ্ঠানের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী উল্লাস দেবনাথ ও দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী ফাইজা চৌধুরীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানের শুরুতে পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত করেন দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী মো.  হাসিব হাসান এবং দোয়া ও মোনাজাত পরিচালনা করেন সহকারী শিক্ষক মো. আতাউর রহমান।


মহামান্য রাষ্ট্রপতির বাণী পাঠ করেন একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী ফাহমিদ আল সাজিদ, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বাণী পাঠ করেন একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী তালুকদার ইলোরা রহমান এবং সম্মাননীয় সেনাপ্রধানের বাণী পাঠ করেন নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী সাকিয়ে কাউসার মাহিয়ান। শিক্ষকদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সহকারী শিক্ষক ইবনে ফয়সাল। পরে শিক্ষার্থীদের পরিবেশনায় কবিতা আবৃত্তি পরিবেশন করা হয়। এছাড়া বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলনের সংগ্রামী মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনালেখ্য নিয়ে নির্মিত প্রামাণ্যচিত্র 'অসমাপ্ত মহাকাব্য' ও বাংলাদেশের জন্মকথার কিংবদন্তি ইতিহাসভিত্তিক তথ্যচিত্র 'মুজিবনগর: বাংলাদেশের প্রথম রাজধানী' প্রদর্শন করা হয়।


মুক্তিযুদ্ধের মহানায়ক হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জাতীয় চারনেতা, বীর মুক্তিযোদ্ধা, বীরাঙ্গনাদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে অধ্যক্ষ বলেন, "২৬ মার্চ বাঙালি জাতির আত্মপরিচয়ের, গৌরবে উজ্জ্বল, ত্যাগে-বেদনায় মহিয়ান একটি দিন। নিপীড়িত, বঞ্চিত ও শোষিত মানবের মুুক্তির স্বপ্ন পূরণের মহিমায় অমর এ দিন। জাতির ঐক্য ও দেশপ্রেমের অনুভুতিতে ভাস্বর আজকের এ দিনটি। "


তিনি আরও বলেন, "আপনারা জানেন দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান নামক একটি দেশ গঠন হলেও এর ২টি ভাগ পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তান ছিলো ভৌগোলিক ও সাংস্কৃতিকভবে বিস্তর আলাদা। আমাদের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামরিক, প্রসাশনিক ও সাংস্কৃতিক সব ক্ষেত্রেই ছিলো অন্যায় শাসন আর শোষণের ভয়ার্ত এবং বিভৎস চিত্র। ১৭৫৭ থেকে ১৯৭১ প্রায় দীর্ঘ ২১৪ বছর এদেশের মানুষ ব্রিটিশ ও পাকিস্তানিদের মাধ্যমে নির্যাতিত, নিপীড়িত ও শোষিত হয়েছে। অতঃপর বঙ্গবন্ধুর বলিষ্ঠ ও দূরদর্শী নেতৃত্ব আর সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে ২৬ মার্চ ১৯৭১ এ শুরু হলো মুক্তিযুদ্ধ। দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর ১৬ ডিসেম্বরে অর্জিত হয় চূড়ান্ত বিজয়। এসব ইতিহাস আজ কবি জসিম উদ্দিনের ‘নকশী কাঁথার মাঠ’ এর মতো শিল্পিত ও জীবনঘনিষ্ঠ, সেলিনা হোসেনের ‘হাঙ্গর নদী গ্রেনেড’ এর মতো বাস্তব সত্য। আবার জহির রায়হানের ‘জীবন থেকে নেয়া’ চলচিত্রের মতো বেদনার্ত।"


শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে অধ্যক্ষ বলেন, "তোমরা মুক্তিযুদ্ধের কঠিন ও কঠোর ইতিহাস এবং নির্মোহ সত্যের কথা শুনেছ। নিজের জ্ঞান, অধ্যবসায়, শ্রমনিষ্ঠা, দেশপ্রেম ও ঐকান্তিক প্রচেষ্টা দিয়ে তোমাদের এ দেশকে সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। সেজন্য চাই জ্ঞান অর্জনের তপস্যা, সুস্থ সংস্কৃতি চর্চা, ন্যায়ের অনুশীলন ও সুনাগরিক হওয়ার প্রাণান্ত প্রচেষ্টা। আমি আশা করবো, আজকের দিনে তোমরা স্বদেশপ্রেমের নতুন দীক্ষায় দীক্ষিত হয়ে নিজেদের সুন্দর ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত করবে, দেশের তরে তোমাদের মেধা ও শ্রমকে নিয়োজিত করবে, দেশের জন্য নিবেদিত প্রাণ হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলবে।"


দিবসটি উপলক্ষ্যে ব্যাডমিন্টন, কবিতা আবৃত্তি ও রচনা প্রতিযোগিতায় বিজয়ী শিক্ষার্থীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করা হয়। অনুষ্ঠানের আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন সহকারী অধ্যাপক স্বপন কুমার বিশ্বাস, সদস্য হিসেবে ছিলেন শিক্ষকবৃন্দ এবং অনুষ্ঠানের সার্বিক তত্ত্বাবধানে ছিলেন উপাধ্যক্ষ।

 

 

সিলেটভিউ২৪ডটকম/নাজাত