সারাদেশের মতো সিলেটেও বিগত কয়েক বছরে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক অভিভাবক সন্তানদের জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে মাদরাসা বেছে নিয়েছেন। বাংলাদেশ শিক্ষাতত্ত্ব ও পরিসংখ্যান ব্যুরো (ব্যানবেইস) তথ্যমতে, মূলধারার মাদ্রাসার মধ্যে আলিয়া ও কওমিতে বর্তমানে সিলেট বিভাগে ১ লাখ ৬১ হাজার ৮৩ শিক্ষার্থী মাদরাসায় অধ্যয়নরত রয়েছে।

 


খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, আলিয়া মাদরাসা ও স্কুলের পাঠ্যপুস্তক এখন একপ্রকার অভিন্ন। গত কয়েক বছর মাদরাসা শিক্ষার্থীদের একাংশ মেডিকেল, বুয়েটসহ বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের ভর্তি পরীক্ষায় সাফল্য পেয়েছেন। আবার কিছু কওমি মাদরাসার সঙ্গে বিদেশী কিছু ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের চুক্তি থাকায় সেখান থেকেও অনেকে সরাসরি এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পাচ্ছেন। আবার খরচ কম হওয়ায় দরিদ্র অনেকেই সন্তানদের লেখাপড়ার জন্য মাদরাসা শিক্ষাকেই বেছে নিচ্ছেন। ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গির পাশাপাশি এসব বিষয়ও এখন মাদরাসা শিক্ষায় শিক্ষার্থী বাড়ানোয় ভূমিকা রাখছে বলে মনে করছেন তারা।

 

এদিকে আলিয়া মাদ্রাসার পাশাপাশি শিক্ষার্থী বেড়েছে কওমি মাদরাসায়ও। দেশে কওমি মাদ্রাসার শিক্ষা কার্যক্রম বর্তমানে ছয়টি বোর্ডের অধীনে পরিচালিত হচ্ছে। এগুলোর মধ্যে বৃহত্তম হিসেবে ধরা হয় বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশকে (বেফাক)। এ বোর্ডের অধীন মাদ্রাসাগুলোয় গত তিন বছরে শিক্ষার্থী সংখ্যা বেড়েছে প্রায় এক লাখ। 

 

ধর্মীয় শিক্ষার জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি মাদ্রাসায় শিক্ষার্থী সংখ্যা বাড়ানোয় বড় ভূমিকা রাখছে বলে মনে করছেন সিলেটে অবস্থিত কওমি মাদ্রাসা বোর্ড আযাদ দ্বীনী এদারায়ে তালীম বাংলাদেশের সদর (প্রধান) শায়খ মাওলানা জিয়া উদ্দীন।

 

তিনি বলেন, ‘‌সময়ের প্রয়োজনে ধর্মীয় শিক্ষা জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। এ কারণেই দিন দিন শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়ছে। বিষয়টি মাথায় রেখে আযাদ দ্বীন এদারা চলমান শিক্ষা কার্যক্রম নতুনত্ব আনার চিন্তা করছে।’ 

 

সিলেটের বেশ কয়েকজন অভিভাবক জানিয়েছেন, করোনাজনিত দুর্বিপাক ও এর পরবর্তী সময়ে অনেকেরই আর্থিক সক্ষমতা হ্রাস পেয়েছে। অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে পড়ানোর সক্ষমতা না থাকায় সন্তানদের কওমিতে পাঠাচ্ছেন তারা। 

 

মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশিক্ষণ ও উন্নয়ন) জিয়াউল আহসান বলেন, ‘‌মাদরাসা শিক্ষায় গত কয়েক বছরে অনেক উন্নয়ন ঘটেছে। এখন স্কুলের শিক্ষার সঙ্গে পার্থক্য নেই। উন্নত সুযোগ-সুবিধাসহ অনেক মাদরাসা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এসব কারণেই শিক্ষার্থী বেড়েছে। আর আমরা মূলত আলিয়া মাদরাসা নিয়ে কাজ করি, তাই কওমি মাদ্রাসার বিষয়ে মন্তব্য করা কঠিন। অনেকেই ধর্মীয় জায়গা থেকেই সন্তানদের পড়াচ্ছেন। আবার দেখা যায় অনেক কওমি মাদরাসায় ব্যয় কম এবং থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। এ স্বল্প ব্যয়ের কারণেও হয়তো নিম্ন-আয়ের মানুষরা এখন কওমি বেছে নিচ্ছেন।’

 

দারিদ্র্য ও সাধারণ শিক্ষায় ব্যয় বৃদ্ধি মাদরাসা শিক্ষায় শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়ানোয় বড় ভূমিকা রাখছে বলে মনে করছেন শিক্ষাবিদরাও। তাদের ভাষ্যমতে, দেশে শিক্ষা খাতে বাজেট কম হওয়ায় এবং শিক্ষা ব্যয় ক্রমেই বৃদ্ধি পাওয়ায় করোনা-পরবর্তী সময়ে অনেক অভিভাবক সন্তানকে মাদরাসায় ভর্তি করাচ্ছেন। 

 

সিলেটভিউ২৪ডটকম / মাহি