পহেলা বৈশাখ বাঙালির সবচেয়ে বৃহত্তম সর্বজনীন উৎসব। সর্বস্তরের মানুষ হৃদয়ের টানে, বাঙালিয়ানার টানে মিলিত হয় এ উৎসবে। এদিন আনন্দঘন পরিবেশে বরণ করে নেওয়া হয় নতুন বছরকে। ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক সংগঠন শ্রুতির উদ্যোগে প্রতিবারের মত বাংলা নতুন বছরকে বরণ করে নেয়।

তপ্ত রোদের মধ্যেও রবিবার ব্লু-বার্ড স্কুল এন্ড কলেজ প্রাঙ্গণে সূর্যোদয়ের পর পরেই শুরু হয় নতুন বছরকে আহ্বান।


"নিশিদিন ভরসা রাখিস ওরে মন হবেই হবে " এই  উদাত্ত আহ্বান ধ্বনিত হয়। শতাধিক শিশু কিশোর শিল্পীরা শতকন্ঠে বাংলা নববর্ষকে স্বাগত জানায় গানে গানে।

মঙ্গল প্রদীপ প্রজ্জ্বলনে মাধ্যমে অনুষ্ঠানের মাঙ্গলিক উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদের সভাপতি মন্ডলীর সদস্য নন্দিত আবৃত্তিশিল্পী মোকাদ্দেস বাবুল, বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার ২০২২ প্রাপ্ত গুণীজন তাপস মজুমদার। এরপর অনুষ্ঠিত হয় মঙ্গলঢাকের মাধ্যমে বাংলা বছর কে বরণ।

দিনব্যাপী আয়োজনের প্রথম পর্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার দেবজিৎ সিনহা।

অতিথি হিসেবে আরো উপস্থিত ছিলেন- সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট সিলেটের সভাপতি শামসুল আলম সেলিম, সম্মিলিত নাট্য পরিষদের সভাপতি রজত কান্তি গুপ্ত প্রমুখ।

শুরুতেই স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন শ্রুতি সিলেটের সদস্যসচিব সুকান্ত গুপ্ত।

সংক্ষিপ্ত আলোচনা সভায় বক্তারা বলেন, বৈশাখের  সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল কৃষির, কারণ কৃষিকাজ ছিল ঋতুনির্ভর। এই কৃষিকাজের সুবিধার্থেই মুগল সম্রাট আকবর ১৫৮৪ খ্রিস্টাব্দের ১১ মার্চ বাংলা সন প্রবর্তন করেন এবং তা কার্যকর হয় তাঁর সিংহাসন-আরোহণের সময় থেকে (৫ নভেম্বর ১৫৫৬)। হিজরি চান্দ্রসন ও বাংলা সৌরসনকে ভিত্তি করে বাংলা সন প্রবর্তিত হয়।

নতুন সনটি প্রথমে ‘ফসলি সন’ নামে পরিচিত ছিল, পরে তা বঙ্গাব্দ নামে পরিচিত হয়।বাংলা নববর্ষ পালনের সূচনা হয় মূলত আকবরের সময় থেকেই। সে সময় বাংলার কৃষকরা চৈত্রমাসের শেষদিন পর্যন্ত জমিদার, তালুকদার এবং অন্যান্য ভূ-স্বামীর খাজনা পরিশোধ করত। পরদিন নববর্ষে ভূস্বামীরা তাদের মিষ্টিমুখ করাতেন। এ উপলক্ষে তখন মেলা এবং অন্যান্য অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হতো। ক্রমান্বয়ে পারিবারিক ও সামাজিক জীবনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে মিশে পহেলা বৈশাখ আনন্দময় ও উৎসবমুখী হয়ে ওঠে এবং বাংলা নববর্ষ শুভদিন হিসেবে পালিত হতে থাকে।

দিনব্যাপী আয়োজনের দ্বিতীয় পর্বে অনুষ্ঠিত হয় সম্মাননা প্রদান। সুমন্ত গুপ্ত পরিচালনায় এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জননন্দিত মেয়র জনাব আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। প্রদান করা হয় শ্রুতি সম্মাননা ১৪৩০ বাংলা। এবারের গুণীজনের লোকসংগীতে বাউল আবদুর রহমান।

আরো উপস্থিত ছিলেন- বাংলা একাডেমির সাহিত্য পুরস্কার ২৩ প্রাপ্ত গুণীজন সুমনকুমার দাশ। শ্রুতি সিলেটের পক্ষ থেকে বাংলা একাডেমির সাহিত্য পুরস্কার প্রাপ্ত গুণীজনদের হাতে শুভেচ্ছা স্মারক তুলে দেয়া হয়।

সাংস্কৃতিক পর্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মাসুদ রানা।

বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- গৌতম চক্রবর্তী সাধারণ সম্পাদক সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট সিলেট, সহকারী কমিশনার অনুপমা দাশ।

দিনব্যাপী আয়োজনে সমবেত সংগীত, নৃত্য,আবৃত্তি পরিবেশন করে অনুষ্ঠান আয়োজক শ্রুতি-সিলেট, জাতীয় রবীন্দ্রসংগীত সম্মিলন পরিষদ সিলেট, গীতবিতান বাংলাদেশ, দ্বৈতস্বর, নৃত্যশৈলী, ললিত মঞ্জরী, নৃত্যসুধা, সুরসপ্তক, সুরের ভূবন, নৃত্যাঞ্জলি, ছন্দনৃত্যালয়, সংগীত নিকেতন, মুক্তাক্ষর, নগরনাট, নৃত্যরথ, সংগীত মূকুল, দীপশিখা, অনির্বান শিল্পী সংগঠন, নাট্যম একক পরিবেশনায় অংশগ্রহণ করেন ঢাকা হতে আগত অতিথি শিল্পী অরুন্ধতী অনুপ্রভা, বাউল সূর্যলাল দাশ, শামীম আহমেদ, গৌতম চক্রবর্তী,প্রদীপ মল্লিক, বিপ্রেস দাশ,খোকন ফকির,ইকবাল শাই, লিংকন দাশ,পল্লবী দাশ মৌ, আশরাফুল ইসলাম অনি প্রমুখ। সিলেট আর্টস কলেজের সহযোগিতায় দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত হয় রং তুলিতে বর্ষবরণ।

এতে চিত্রশিল্পীরা নতুন বছরকে বরণ করে নেন তাদের অংকন ভাবনায়। দিনব্যাপী আয়োজনে জাতি ধর্ম নির্বিশেষে সবাই নতুন বছরকে বরণ করে নেয়। বৈশাখের তীব্র তাপদাহের মধ্যে ও সবার স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ দেখতে পাওয়া যায়। জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে দিনব্যাপী শ্রুতি বর্ষবরণ উৎসবের বিংশতম  আয়োজন সমাপ্ত হয়।

 

 


সিলেটভিউ২৪ডটকম/প্রেবি/এসডি-১৬৫০