মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে ঈদুল ফিতরের টানা ছুটিতে পর্যটকদের উপচে পড়া ভিড়ে মুখরিত হয়ে উঠে উপজেলার টিলাঘেরা সবুজ চা বাগান, লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান, বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী হামিদুর রহমানের স্মৃতিসৌধ, নয়নাভিরাম মাধবপুর লেক, হামহাম জলপ্রপাত, মাগুরছড়া খাসিয়া পুঞ্জি, ডবলছড়া খাসিয়া পুঞ্জিসহ বিভিন্ন স্পটে পর্যটকদের ভিড় দেখা যায়।

লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের তথ্যসূত্রে জানা যায়, ঈদের দিন সকাল থেকে সন্ধা পর্যন্ত লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে ৩ হাজার ৩৬ জন পর্যটকদের কাছ থেকে সরকারের রাজস্ব আদায় হয়েছে ১ লাখ ৪৫ হাজার ৮ শত ৬৯ টাকা। ঈদে ২য় দিনে সকাল থেকে সন্ধা পর্যন্ত লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে ২ হাজার ৪ শত ৬১ জন পর্যটকদের আগমনে সরকারের রাজস্ব আদায় হয়েছে ১ লাখ ২৩ হাজার ৯ শত ৮৬ টাকা। ঈদে ৩য় দিনে সকাল থেকে সন্ধা পর্যন্ত লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে ৩ হাজার ৪ শত ৪৩ জন পর্যটকদের আগমনে সরকারের রাজস্ব আদায় হয়েছে ১ লাখ ৬০ হাজার ১ শত ৮৪ টাকা।
 


ঈদে ৪র্থ দিনে সকাল থেকে ৪টা পর্যন্ত লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে ২ হাজার ৪ শত ৫৬ জন পর্যটকদের আগমনে সরকারের রাজস্ব আদায় হয়েছে ১ লাখ ১৪ হাজার ৭ শত ৪৮ টাকা। ৪ দিনে ১১ হাজার ৩ শত ৯৬ জন পর্যটকদের আগমনে রাজস্ব আদায় হয়েছে মোট ৫ লাখ ৪৪ হাজার ৭শত ৮৭ টাকা। কমলগঞ্জ পুলিশ ও টুরিশ পুলিশের একটি টীম সকাল থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত প্রতিটি জায়গায় টহল দিতে দেখা যায়।
 

জীব বৈচিত্র্যে ভরপুর বন্যপ্রাণীর অভয়ারণ্য লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান, পদ্মকন্যা নয়নাভিরাম মাধবপুর লেক, ঝর্ণাধারা হামহাম জলপ্রপাত, ত্রিপুরা সীমান্তবর্তী ধলই চা বাগানে অবস্থিত মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস-ঐতিহ্যের বাহক বীরশ্রেষ্ঠ সিপাহী হামিদুর রহমান স্মৃতিসৌধ, বন্যপ্রাণির অভয়ারণ্য রাজকান্দি বন, শমসেরনগর বিমানবন্দর, প্রাচীন ঐতিহ্যের বাহক লক্ষীনারায়ণ দিঘী, ২০০ বছরের প্রাচীন ছয়চিরী দিঘী।
 

শমসেরনগর বাঘীছড়া লেক, আলিনগর পদ্মলেক, মাগুরছড়া পরিত্যক্ত গ্যাসফিল্ড, ডবলছড়া খাসিয়া পুঞ্জি, মাগুরছড়া খাসিয়া পুঞ্জি, অপরূপ শোভামণ্ডিত উঁচু নিচু পাহাড়বেস্টিত সারিবদ্ধ পদ্মছড়া চা বাগান, শিল্পকলা সমৃদ্ধ মনিপুরী, প্রকৃতির প‚জারী খাসিয়া, গারো, সাঁওতাল, মুসলিম মনিপুরী, টিপরা ও গারোসহ ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জাতিসত্তার জীবন ধারা ও সংস্কৃতিসহ প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর এই জনপদ পর্যটকদের মন ও দৃষ্টি কেড়ে নেয়। পবিত্র ঈদুল ফিতরের টানা ছুটিতে এসব আকর্ষণীয় পর্যটন স্পটগুলো পর্যটকদের ভিড়ে মুখরিত হয়ে উঠেছিল।
 

সরেজমিন ঘরে মাধবপুর লেক ও লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে দেখা মিলে দূর-দূরান্ত থেকে আগত পর্যটনপ্রেমী ভ্রমণ পিয়াসুদের। এদের মধ্যে সপরিবারে ও কাপলদের ঘুরতে আসা পর্যটকদের উপস্থিতি ছিল উল্লেখযোগ্য। ঈদের দিন বৃহস্পতিবার, শুক্রবার, শনিবার ও রবিবার পর্যটকদের উপস্থিতি ছিল অন্যান্য বছরের তুলনায় বেশি। রোদের গরম উপেক্ষা করেও পর্যটকরা ছুটে এসেছেন জীব বৈচিত্রের অপরূপ সমাহার ঘুড়ে দেখতে।
 

ঈদের ছুটিতে লাউয়াছড়ায় জাতীয় উদ্যানে ঘুরতে আসা রাজশাহী থেকে কাইয়ুম, ঢাকা থেকে আসমা বেগম, জানান, লাউয়াছড়ার বন একটি সমৃদ্ধ বন। প্রাকৃতিক অপরূপ সৌন্দর্য আর জীব বৈচিত্রের ভরপুর এই বনটি যে কেউ দেখলে মন জুড়িয়ে যাবে। বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী হামিদুর রহমানের স্মৃতিসৌধ, মাধবপুর লেকে ও লাউয়াছড়া ঘুরতে আসা কলেজের ছাত্রী জাহানারা বলেন, এখানে এসে খুবই ভালো লাগছে। আব্বু আম্মুর সঙ্গে ঘুরতে এসেছি। বানরের লাফালাফি দেখেছি। তাছাড়া হামিদুর রহমানের স্মৃতিসৌধ ও লেকের পানি কি বলবো সব মিলিয়ে অসাধারণ লাগছে। মন চাচ্ছে না যেতে। যেকোন ছুটিতে আবার আসবো।
 

লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান সহ-ব্যবস্থাপনা কমিটির কোষাধ্যক্ষ জনক দেববর্মা জানান, এবারে ঈদে পর্যটকের উপচেপড়া ভিড় ছিল। সামাল দিতে তাদের হিমসিম খেতে হচ্ছে। ঈদের দিন থেকে ৪র্থ দিন পর্যন্ত ১১ হাজার ৩ শত ৯৬ জন পর্যটকদের আগমনে ৫ লাখ ৪৪ হাজার ৭শত ৮৭ টাকা লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে সরকারের রাজস্ব আদায় হয়েছে।
 

বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের লাউয়াছড়া রেঞ্জ কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম জানান, এ ঈদের অন্যান্য সময়ের তুলনায় পর্যটকের সমাগম বেশি। ঈদে পর্যটকদের উপস্থিতি সব সময়েই বেশি হয়ে থাকে।
 

ওসি সাইফুল ইসলাম বলেন, ঈদের আগের দিন থেকেই ঈদের আজ পর্যন্ত সকল পর্যটন এরিয়ায় পুলিশের টল জোরদার করা হচ্ছে। নিরবিঘ্নে পর্যটকরা যেন ঘুড়তে পারে সে জন্য পুলিশের একটি টীম নিরাপত্তার জন্য পর্যবেক্ষনে সব সময় ছিল।


 

সিলেটভিউ২৪ডটকম /জয়নাল/ নাজাত/এসডি-১৬৫৯