ছবি: এনবিসি

‘দ্য গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ’ বললেই চলে। বাড়তি আর কিছু না বললেও ক্রীড়ানুরাগীদের মানসপটে ভেসে ওঠে অলিম্পিক গেমসের চিত্র। দুনিয়ার সবচেয়ে জমকালো, সবচেয়ে বড় ক্রীড়া আসরের পরেরটি বসতে যাচ্ছে সাহিত্য ও সংস্কৃতির নগরী ফ্রান্সের প্যারিসে।

আগামী ২৬ জুলাই আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন হবে প্যারিস অলিম্পিকের। অবশ্য দু’দিন আগেই ফুটবল, রাগবি, হ্যান্ডবলসহ কয়েকটি ইভেন্টের প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে যাবে।


এ হিসেবে প্যারিস অলিম্পিকের আছে বাকি ১০০ দিন।

আরেকটি অলিম্পিকের ক্ষণগণনায় সামিল হলেও বাংলাদেশের জন্য আসরটি কেবলই অংশগ্রহণের। এখন অবধি ১০টি অলিম্পিক গেমসে অংশগ্রহণ করে বাংলাদেশের পদক তালিকা শূন্য! এমনকি বেশিরভাগ আসরেই সরাসরি খেলার যোগ্যতা অর্জন করতে পারেননি লাল-সবুজের প্রতিনিধিদের কেউ। এবার সরাসরি অলিম্পিকে খেলতে পারছেন না বাংলাদেশের কোনো ক্রীড়াবিদ।

এবারের উদ্বোধনে ব্যতিক্রম>>

মূলত মূল স্টেডিয়ামকে কেন্দ্র করে অলিম্পিক, কমনওয়েলথ গেমস কিংবা এশিয়ান গেমসের মত বড় আসরগুলো কেন্দ্রিভূত হয়। যেখানে উদ্বোধনী ও সমাপনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। তবে এবার ঘটতে যাচ্ছে ব্যতিক্রম। প্যারিস অলিম্পিকে উদ্বোধন মূল স্টেডিয়ামে হবে না; অনুষ্ঠান রাখা হয়েছে স্টেডিয়ামের বাইরে সেইন নদীর তীরে। অ্যাথলেটদের জন্য নদীতে নৌকায় ঘোরার ব্যবস্থা থাকছে।

অবশ্য সমাপনীর জন্য মূল ভেন্যু, ফ্রান্সের জাতীয় স্টেডিয়াম স্তাদে দ্য ফ্রান্সকেই বাছাই করে রাখা হয়েছে।

এ ছাড়া অলিম্পিক ফুটবল হবে মেসি-নেইমারদের জন্য খ্যাতি পাওয়া ক্লাব পিএসজির স্টেডিয়াম পার্ক দ্য প্রিন্সেসে। অলিম্পিক ফুটবলের জন্য ইউরোপিয়ান ক্লাবগুলোকে ফুটবলারদের ছাড়ার আহ্বান জানিয়েছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রঁ।

এ ছাড়া টেনিস ও বক্সিংয়ের সব খেলা হবে ফ্রেঞ্চ ওপেনের ভেন্যু রোলাঁ গাঁরোয়। বিস্ময়কর হলেও সত্য—প্যারিস অলিম্পিকের সার্ফিং খেলা অনুষ্ঠিত হবে ফ্রেঞ্চ পলিনেশিয়ার দ্বীপ তাহিতিতে, যেটি প্যারিস থেকে প্রায় ১০ হাজার মাইল দূরে অবস্থিত। তাহিতি প্রশান্ত মহাসাগরের একটি দ্বীপ, যা ফ্রান্সের অধিভুক্ত অঞ্চল।

৩২ খেলার অলিম্পিক>>

প্যারিস অলিম্পিকে সবমিলিয়ে ৩২টি খেলা থাকছে। এগুলোতে ৩২৯টি পদকের ইভেন্ট রয়েছে। পদকের জন্য সরাসরি লড়াই শুরু ২৭ জুলাই, শ্যুটিং দিয়ে। আর ১১ আগস্ট মেয়েদের বাস্কেটবল দিয়ে হবে পদকের শেষ লড়াই। সব ইভেন্টে সাড়ে ১০ হাজার অ্যাথলেট লড়বেন।

এবারের অলিম্পিকে নতুন খেলা হিসেবে যুক্ত হয়েছে ব্রেকিং। এর আগে ২০১৮ যুব অলিম্পিকে এই খেলা অন্তর্ভূক্ত ছিল। এটি মূলত শারীরিক কসরত ও নাচের মিশ্রণের খেলা।

এবার কারাতে ও বেসবল খেলা বাদ পড়েছে, যা টোকিও অলিম্পিকে যুক্ত ছিল।

এবার প্রাইজমানি>>

অলিম্পিকের ইতিহাস প্রায় ১৩০ বছরের। এই দীর্ঘ ইতিহাসে এই লড়াইয়ে প্রাইজমানি দেওয়ার কোনো নজির নেই। তবে এবার বিশ্ব অ্যাথলেটিকস ফেডারেশন অ্যাথলেটদের জন্য অর্থ পুরস্কারের ব্যবস্থা করেছে। তবে সব খেলায় নয়, ট্র্যাক অ্যান্ড ফিল্ডের ৪৮টি ইভেন্টের জন্য ২.৪ মিলিয়ন ডলার বরাদ্দ রেখেছে ফেডারেশন।

যেসব অ্যাথলেট স্বর্ণপদক জিতবেন, তারা প্রত্যেকে পাবেন ৫০ হাজার ডলার করে। মূলত আইওসি থেকে প্রতি চার বছরে যে অনুদান পায় বিশ্ব অ্যাথলেটিকস ফেডারেশন, সেখান থেকে এই প্রাইজমানির ব্যবস্থা করেছে তারা।

রৌপ্য ও ব্রোঞ্জ পদকজয়ীদের জন্য এবার কোনো প্রাইজমানি নেই। তবে ২০২৮ লস অ্যাঞ্জেলস অলিম্পিক থেকে তারাও প্রাইজমানি পাবেন।

ওয়ার্ল্ড অ্যাথলেটিকসের প্রেসিডেন্ট সেবাস্তিয়ান লর্ড কো প্রাইজমানি প্রদানের সিদ্ধান্তকে ‘বিশেষ মুহূর্ত’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তিনি বিবিসিকে বলেছেন, তার সংস্থাটি অ্যাথলিটদের জন্য ‘টেকসই আর্থিক ব্যবস্থা’ তৈরি করতে চায়।

এ প্রাইজমানি অলিম্পিকের চেতনাবিরোধী কিনা? এমন প্রশ্নে সেবাস্তিয়ান কো বলেন, ‘আমি মনে করি না, এটা অ্যাথলিটদের জীবন অনেকটা সহজ করে দেবে। এটা বরং খেলাটির প্রতি তাদের আগ্রহ বাড়াবে এবং আরো কিছুদিন থাকার প্রেরণা জোগাবে। অনুশীলন করার ক্ষেত্রে তাদের আর্থিক স্বাধীনতা এনে দেবে। কাজেই এখানে অলিম্পিকে নীতি ও চেতনা নিয়ে কোনো সমস্যা হবে না।’

নিরাপত্তা কঠোর>>

প্যারিস অলিম্পিকে থাকছে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ২০ হাজার সৈন্য ও ৪০ হাজার পুলিশ সদস্য নিয়োগ করতে চায় ফ্রান্স সরকার। এর বাইরে অন্যান্য দেশ থেকে ২ হাজারের মতো সৈন্য ও পুলিশ সদস্যরা নিরাপত্তায় যুক্ত থাকবেন।

নিরাপত্তা যাতে বিঘ্নিত না হয়, সেজন্য অন্তত ১০ লাখ মানুষকে তল্লাশির আওতায় রাখা হবে। বিশেষ করে গেমসের ভেন্যুর আশপাশজুড়ে থাকবে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা।

এদিকে, উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ড্রোন আক্রমণের শঙ্কায় দর্শক উপস্থিতি কমিয়ে ফেলা হয়েছে। প্যারিসের কেন্দ্রে অবস্থিত সেইন নদীতে নৌকায় চড়ে ৬ কিলোমিটারের মতো এলাকা ঘুরে বেড়াবেন অ্যাথলেটরা। প্রথমে ছয় লাখ দর্শককে নদীর তীর থেকে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান উপভোগের সুযোগ দেওয়ার কথা ছিল। তবে এখন সেই সুযোগ পাবেন তিন লাখ আমন্ত্রিত অতিথি।

বাংলাদেশের কেউ নেই সরাসরি>>

বাংলাদেশের কোনো অ্যাথলেট এবার সরাসরি অলিম্পিক কোটা পাননি। তবে চারটি ডিসিপ্লিনে ৬ জন ক্রীড়াবিদের জন্য ওয়াইল্ড কার্ডের আবেদনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ অলিম্পিক এসোসিয়েশন। আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটির (আইওসি) কাছে এই আবেদন করা হবে।

এই ৬ জন ক্রীড়াবিদ হলেন- শুটিং থেকে শায়রা আরেফিন ও রবিউল ইসলাম, গলফে সিদ্দিকুর রহমান ও জামাল হোসেন, বক্সিংয়ে মো. সেলিম আর আরচারি থেকে হাকিম আহমেদ রুবেল।

এঁরা খেলার সুযোগ যদিও পান, পদক জিততে পারবেন কিনা, সেটা বড় প্রশ্ন।
এখন অবধি বাংলাদেশের কেউ পারেননি পদকের স্বাদ দিতে। এবার কী হবে ব্যতিক্রম কিছু?

সিলেটভিউ২৪ডটকম/আরআই-কে