গভীর শ্রদ্ধা ও ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে সিলেটের জালালাবাদ ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজে (জেসিপিএসসি) ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস ২০২৪ উদযাপন করা হয়েছে।

 


বুধবার (১৭ এপ্রিল) সকাল ১০ টায় কলেজের মিলনায়তনের অনুষ্ঠান শুরু হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন অধ্যক্ষ লে. কর্নেল তাহিয়াত জালাল চৌধুরী , উপাধ্যক্ষ, শিক্ষকমণ্ডলী, শিক্ষার্থী ও কর্মচারীবৃন্দ।
 

অনুষ্ঠানের শুরুতেই পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত করেন সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী তাওহিদুল ইসলাম শিমুল। হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ মুক্তিযুদ্ধের সকল বীরসন্তানদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে দোয়া ও মোনাজাত পরিচালনা করেন সহকারী শিক্ষক সাইফুল্লাহ  তালুকদার।
 

মুজিবনগর সরকারের পটভূমি ও শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানের ইতিহাস বিষয়ে বক্তব্য রাখেন নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী মেহজাবিন বিনতে মোশাররফ এবং স্বাধীনতা অর্জনে মুজিবনগর সরকারের ভূমিকা বিষয়ে বক্তব্য রাখেন সহকারী শিক্ষক হাবিবুর রহমান।
 

সমাপনী বক্তব্যে অধ্যক্ষ লে. কর্নেল তাহিয়াত জালাল চৌধুরী বলেন, ‘মুজিবনগর দিবস মুক্তিযুদ্ধের জন্য ইতিহাসের এক স্মরণীয় দিন। একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম দেশ হিসেবে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে সবচেয়ে বেশি কার্যকরী ও সুদূরপ্রসারী সাংবিধানিক পদক্ষেপ ছিল মুজিবনগর সরকার গঠন এবং প্রাতিষ্ঠানিকভাবে মন্ত্রীসভার শপথ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা। 
 

‘‘প্রকৃত অর্থে ৭ মার্চ ১৯৭১ সালে রেসকোর্স ময়দানে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা হয়েছিল। ৭ মার্চের ভাষণে জাতি পেয়েছে মুক্তির দিক নির্দেশনা। বাঙালি জাতিকে নির্দেশনা দিতে ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। তাঁর অনুপস্থিতিতে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি হিসেবে সৈয়দ নজরুল ইসলাম মন্ত্রীপরিষদের সদস্যদের নাম ঘোষণা করেন। বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের সময়ে বিশ্বব্যাপী প্রচার ও জনমত গঠন করার রাজনৈতিক দূরদর্শীসম্পন্ন বুদ্ধিমত্তার পরিচয় ছিল এই সরকার গঠনে।’’

 

তিনি আরও বলেন, ‘‘দেশের সংকটময় পরিস্থিতিতে একটি স্বীকৃত এবং আইনগতভাবে গ্রহণযোগ্য সরকার গঠিত না হলে পাকিস্তানিরা উদ্ভূত পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের বিচ্ছিন্নতাবাদী, চরমপন্থী প্রভৃতি নামে অভিহিত করে বিশ্বব্যাপী প্রচার-প্রচারণা চালাতে এতটুকু দ্বিধা করত না। তাতে মুক্তিযোদ্ধাদের গ্রহণযোগ্যতা অনেকটা হ্রাস পেতো। ঠিক সে সময়ে এই ধরনের পদক্ষেপ মুক্তিযোদ্ধাদের মনে আশার সঞ্চার ও সংগঠিত করে।’’

 

শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘‘স্বাধীন বাংলাদেশের সুতিকাগার হচ্ছে মেহেরপুরের বৈদ্যনাথতলা। মুজিবনগর শুধু ঐতিহাসিক স্থানই নয়, আমাদের মুক্তিযুদ্ধ এবং রাষ্ট্র গঠনের ভিত্তিভূমিও। বাংলাদেশের ইতিহাস জানতে হলে মুজিবনগর সরকার এবং এর কার্যক্রম সম্পর্কে আরও ভালোভাবে অধ্যয়ন করতে হবে। যে ত্যাগ, সাহস ও দূরদর্শিতার মাধ্যমে বাংলাদেশকে স্বাধীনতা অর্জনের পথে নিয়ে যায় মুজিবনগর সরকার, সেই গৌরবের ইতিহাস কখনো ভুলে যাওয়ার নয়। বাংলাদেশকে আরও এগিয়ে নিতে বঙ্গবন্ধু ও তাঁর আদর্শে অনুপ্রাণিত ওই সময়ের নেতাদের জীবন থেকে তোমাদের শিক্ষা নিতে হবে। তোমাদেরকে সুশিক্ষিত, সুনাগরিক ও দেশপ্রেমিক হতে হবে।’’

 

দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী অদিতি পাল চৌধুরী ও নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী রাইয়ান রশিদ শুভ এর উপস্থাপনায় অনুষ্ঠানের আহবায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন সিনিয়র শিক্ষক মোজাম্মিল হোসেন এবং সদস্য হিসেবে ছিলেন অন্যান্য শিক্ষকবৃন্দ ও অনুষ্ঠানের সার্বিক সমন্বয় করেন উপাধ্যক্ষ।

 

সিলেটভিউ২৪ডটকম/ নোমান