সিলেটের বিশ্বনাথে পৌর মেয়র মুহিবুর রহমানের বিরুদ্ধে ‘অনিয়ম-দূর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা, নতুন বিবাধ সৃষ্টি, ভারসাম্যহীনভাবে ক্ষমতার অপব্যবহার, কাউন্সিলর ও জনগণের সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ প্রদর্শন ও গালিগালাজ, স্বজনপ্রীতি, ময়লা-আবর্জনার পরিস্কার করাসহ একাধিক ভূয়া প্রকল্প দেখিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ’র অভিযোগ এনে সংবাদ সম্মেলেন করেছেন পৌরসভার কাউন্সিলরবৃন্দ। এতে মেয়র মুহিবের অপসারণ করা জোরদাবী উঠে এসেছে।
 

বুধবার (১৭ এপ্রিল) দুপুরে পৌর শহরের একটি রেষ্টুরেন্টে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে কাউন্সিলরদের পক্ষে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন পৌরসভার প্যানেল মেয়র-১ রফিক মিয়া।
 


এসময় তার সাথে উপস্থিত ছিলেন- পৌরসভার প্যানেল মেয়র-২ সাবিনা বেগম, ২নং সংরক্ষিত ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রাসনা বেগম, ৩নং সংরক্ষিত ওয়ার্ডের কাউন্সিলর লাকী বেগম, ৭নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জহুর আলী ও ৯নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শামীম আহমদ।
 

সংবাদ সম্মেলনে কাউন্সিলররা বলেন, পৌর মেয়র মুহিবুর রহমান নিজের ক্ষমতার অপব্যবহার করে নিজের ইচ্ছে মতো যা খুশি, তা করে যাচ্ছেন। এরফলে চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে পৌর এলাকার উন্নয়ন। মেয়র মুহিবের অনিয়ম-দূর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতা চরম পর্যায়ে পৌঁছে যাওয়ার ফলে তার (মেয়র) কর্মকান্ডে অতিষ্ঠ হয়ে পৌরসভার কাউন্সিলরবৃন্দ গত ৯ এপ্রিল দুপুরে পৌরসভা কার্যালয়ের কাউন্সিলর হল রুমে প্যানেল মেয়র-১ রফিক মিয়ার সভাপতিত্বে ‘স্থানীয় সরকার (পৌরসভা) আইন ২০০৯ এর ৩৮ ধারা’ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে এক বিশেষ জরুরী সভা করে মেয়র মুহিবের বিরুদ্ধে ‘অনাস্তার প্রস্তাব’ গ্রহণ করেছেন। আর এরপর গত ১৫ এপ্রিল সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার বরাবরে ও ১৬ এপ্রিল স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব বরাবরে স্বশরীরে উপস্থিত হয়ে ‘অনাস্তার প্রস্তাব’ প্রদান করা হয়েছে। আর পৌরবাসী’সহ সরকারের সকল মহলের কাছে মেয়র মুহিবের অনিয়ম-দূর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার বিতরণ তুলে ধরতেই আজকের (বুধবার) ওই সংবাদ সম্মেলন।
 

লিখিত বক্তব্যে কাউন্সিলররা উল্লেখ করেছেন, দূর্নীতি করার সুবিধার্থে পৌর মেয়র মুহিবুর রহমান পৌরসভার কার্যালয় থেকে সকল অফিসিয়াল কাগজপত্র তার (মেয়র) বাসভবনে নিয়ে গেছেন, এমনকি পৌর কার্যালয় হতে পৌরসভার ফার্ণিচার-ল্যাপটপ তার  (মেয়র) নিজ বাসভবনে নিয়ে অফিসের সকল স্টাফ দিয়ে পৌর কার্যালয়ের পরিবর্তে বাসভবনে অফিসের কার্যক্রম চালাচ্ছেন। পৌরসভার প্রত্যেক মাসের সাধারণ সভা পৌর কার্যালয়ে না করে, তার বাসভবনে করে আসছেন। এতে জনগণ সঠিক সেবা থেকে বঞ্চিত ও হয়রানির শিকার হচ্ছেন। মুহিবুর রহমান পৌর মেয়রের দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে আজ পর্যন্ত স্থায়ী কমিটি ও টিএলসিসি’র কমিটির কোন সভা করেন নাই। এমনকি পৌরসভায় অডিটও হয়েছে তার বাসাতেই।

পৌর মেয়র মুহিবুর রহমান পৌর পরিষদের সিদ্ধান্ত ছাড়া একক ক্ষমতা বলে মাস্টাররোলে নিজের আতœীয়-স্বজনকে পৌরসভায় নিয়োগ দিয়ে জনপ্রতি ২/৩ লক্ষ টাকা করে ঘুষ নিয়েছেন। মেয়র মুহিব সরকারের রাজস্ব খ্যাত থেকে বাজেট অনুসরণ না করে বিভিন্ন নামে-বেনামে ভ‚য়া বিল-ভাউচার তৈরী করে, ডেঙ্গু মশক নিধন ও কোভিড-১৯ নামে সরকারি টাকা এবং বিশ্বনাথ পুরাণ বাজারের গরু-হাটের উন্নয়ন কাজ দেখি বিপুল পরিমাণ টাকা আতœসাৎ করেছেন। রাজস্বের টাকা দিয়ে ভ‚য়া প্রকল্প দেখিয়ে মেয়র তার নিজের বাসার উঠান ঢালাই’সহ বাসার বিভিন্ন কাজ করেছেন। এছাড়া মেয়র মুহিবুর রহমান রাজস্ব খ্যাত থেকে ময়লা-আবর্জনা পরিস্কার করার ব্যয় দেখিয়ে লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন, এমনকি পৌরসভার টাকা ‘অন্য ইউনিয়নে ও অন্য উপজেলায়’ স্বদর্পে বিতরণ করেন। অথচ পৌরসভার বর্জ্য ব্যবস্থাপনা (ল্যান্ড ফিল্ড) স্থাপনা না করেই পৌর এলাকার ময়লা-আবর্জনা শহরের প্রাণ কেন্দ্রে অবস্থিত ‘প্রবাসী চত্ত¡র, মফিজ আলী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় এন্ড করেজ ও মাদানিয়া মাদ্রাসার’ পাশে জনগূরুত্বপূর্ণ জায়গায় ও বাসিয়া নদীতে ডাম্পিং করছেন।
 

পৌর মেয়র মুহিব পৌরসভার উন্নয়নমূলক কাজের জন্য বিভিন্ন সময় দরপত্র আহবান ছাড়া, নিজের ক্ষমতার অপব্যবহার করে পরিষদের অগোচরে নিজের (মেয়রের) পছন্দের লোক দ্বারা পরিচালনা করে কাউন্সিলরগণের প্রত্যয়ন ছাড়াই লক্ষ লক্ষ টাকার বিল পরিশোদের ব্যবস্থা করে দীর্ঘদিন ধরে টাকা আত্মসাৎ করে আসছেন। এমনকি ‘বিশ্বনাথ পৌরসভা’র নামে ‘সোনালী ব্যাংক, জনতা ব্যাংক, এজেন্ট ব্যাংকিং, ব্যাংক এশিয়া’য় পরিষদের অজান্তে অনেক একাউন্ট আছে এবং উক্ত একাউন্টগুলোতে লক্ষ লক্ষ টাকাও জমা ছিল। মেয়র মুহিব নিজের একক ক্ষমতা বলে এসব একাউন্ট থেকে কিছু পৌর কর্মচারী (জগন্নাথ সাহা, সাজেদুল হক, মোতালেব হোসেন, নাজির হোসেন)’র মাধ্যমে সেই টাকাগুলো উত্তোলন করে ভ‚য়া চালানের মাধ্যমে কোন প্রকল্প না করেই লক্ষ লক্ষ টাকা আতœসাৎ করেছেন।
 

মেয়র মুহিব পৌরসভার মাসিক সভায় সাদা কাগজে কাউন্সিলরদের স্বাক্ষর করিয়ে ও মাসিক রেজুলেশনের কপি না দিয়ে নিজের ইচ্ছেমাফিক কার্যবিবরণী লিখে সেটাকে কৌশলে পৌর পরিষদের সিদ্ধান্ত বলে চালিয়ে যাচ্ছেন। পৌর পরিষদ পৌরসভার বাৎসরিক আয়-ব্যয়ের হিসাব উপস্থাপন করার জন্য মেয়র মুহিবকে অনুরোধ করলেও, আজ পর্যন্ত মেয়র তা করেননি। এতে প্রমাণ হয় মেয়র মুহিব একজন দূর্নীতি পরায়ন ও স্বজনপ্রীতি সম্পন্ন ব্যক্তি। এছাড়া জনশ্রæতি রয়েছে মেয়র পৌরসভার সকল কার্যাদেশের বিলের জন্য গড়ে ৫% করে ঘুষ গ্রহন করেন। এমনকি পৌর পরিষদের সভায় সবার সম্মুখে মেয়র সেটা নিজেও স্বীকার করেছে। এর একটি অডিও ক্লিপ ইতিপূর্বে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে।
 

মেয়র মুহিব নিজের ক্ষমতার অপব্যবহার করে পৌরসভার নকশাকার আশরাফুজ্জামান চয়নকে অতিরিক্ত দায়িত্ব দিয়ে ‘সহকারী প্রকৌশলী’ পদে এবং আয়কর কর্মকর্তা সাজেদুল হককে একাউন্টন্টেস পদে পদায়ন করে নিজের (মেয়র) বাসায় বসিয়ে নামে, বে-নামে ভ‚য়া বিল-ভাউচার বানিয়ে রাজস্ব খ্যাত থেকে টাকা উত্তোলন করে লক্ষ লক্ষ টাকা আতœসাৎ করছেন। এছাড়া মেয়র মুহিব ক্ষমতার অপব্যবহার ও দূর্নীতির মাধ্যমে নিজের ব্যক্তিগত কাজে গাড়ি ব্যবহার করে সরকারি আইন উপেক্ষা করে রাজস্ব থেকে গাড়ির তেল ক্রয়, গাড়ির ড্রাইভারের বেতন পরিশোধ, গাড়ির মেরামত ব্যয় দেখিয়ে পরোক্ষভাবে জনগণের প্রদত্ত ট্যাক্সের টাকা আতœসাৎ করছেন। বিচার সালিশের ভিডিও করে তার ফেসবুক আইডিতে ভাইরাল করে জনগণের মানহানী করে আসছেন।

 

সিলেটভিউ২৪ডটকম/প্রনঞ্জয়/এসডি-১৭০৭