সুনামগঞ্জের কৃষি অধ্যুষিত  জগন্নাথপুর উপজেলার হাওর গুলোতে বোরো মৌসুমে ধান কাটার ধুম পড়েছে। ইতিমধ্যে উপজেলার প্রায় সকল হাওরে বেশীর ভাগ জমির ধান পেকে গেছে। বাতাসে দুলছে সোনালী ফসল। আবহাওয়া অনকুলে থাকায় কৃষকরা মনের আনন্দে ধান কেটে মাড়াই করে গোলায় তুলছেন। কৃষাণিদের অবসর নেই তারাও ধান মইয়া (ঝেড়ে) দিচ্ছেন।

 


বুধবার থেকে উপজেলার বৃহৎ হাওর নলুয়া, মই,পিংলার হাওর সহ উপজেলার ১৫কটি হাওরে পুরোদমে ধান কাটা ও মাড়াইয়ের কাজ চলছে।  হাওরের চারিদিকে এখন ধান কাটার ধুম।  পাকা ধানের মৌ মৌ ঘ্রাণে মুখরিত নলুয়া, মই, পিংলা সহ অন্যান্য হাওর।  দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আগত শ্রমিকরা নগদ অর্থ অথবা ধানের বিনিময়ে  দলবদ্ধভাবে গৃহস্থের জমির ধান কাটছেন। তবে প্রয়োজনের তুলনায় ধান কাটার শ্রমিক খুবই কম। 

 

বুধবার সরেজমিন নলুয়ার হাওর পরিদর্শনে গেলে অনেকের সাথে আলাপ হয় অনেক কৃষক জানিয়েছেন তারা ধান কাটার শ্রমিক পাচ্ছেন না। বাধ্য হয়ে নিজেরা ধান কাটছেন। জগন্নাথপুর সদর গ্রামের কৃষক শামীম আহমদ জানান, নলুয়ার হাওরে প্রায় ১১ কেদার জমি করেছি ২/ ৩দিন ধরে জমির ধান পেকে গেছে কিন্তু ধান কাটার শ্রমিক না পেয়ে  আমরা ভাইয়েরা ধান কাটছি । এ ধরনের অভিযোগ অনেক কৃষকের। 

 

কম্বাইন্ড হারভেস্টার মেশিনের সংখ্যা কম থাকায় আশানুরূপ সুফল পাচ্ছেন না স্হানীয় কৃষক রা। হাতে গোনা ৭৫টি মেশিন দেওয়া হয়েছে ভাগ্যবান কিছু কৃষক কে। উপজেলায় প্রায় ৫০ হাজার কৃষক রয়েছেন। 

 

এবার হাওর গুলোতে হাইব্রিড জাতের হিরা-২ ধান  বিনা-২৫, ময়না টিয়া, লাল তীর,সুরভী, তীর ৪,এসিআই - ২,বঙবন্ধু ১০০,উফসী ৮৮,৮৯,৯২,৯৬, ও ২৮, ২৯  ধানের আবাদ করা হয়েছে। এ জাতের ধানের খুব ভাল  ফলন  হয়েছে।ফলে কৃষকদের মধ্যে স্বস্তির ভাব লক্ষ্য করা গেছে। 
অন্যদিকে বঙবন্ধু ১০০ জাতের ধানে চিটা হওয়ায় যারা এ ধান আবাদ করেছেন তাদের যেন মাঁথায় হাত আর চোখে- মুখে দূশ্চিন্তার বাঁঝ। 

 

জগন্নাথপুর উপজেলা কৃষি কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এবার পুরো জগন্নাথপুর উপজেলায় ২০ হাজার ৩’শ ৮৫ হেক্টর জমিতে বোরো ধান আবাদ করা হয়। চলতি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে ধান কাটার কাজ শুরু হয়। সব গুলো হাওরের ধান পেকে যাওয়ায় ২/ ৩দিন ধরে সব গুলো হাওরে ধান কাটার ধুম পড়েছে। 

 

জগন্নাথপুর উপজেলার খাদ্য ভান্ডার খ্যাত নলুয়ার হাওরে বুধবার  সরেজমিনে গেলে দেখা যায়, পুরো হাওরজুড়ে সোনালী পাকা  ধান ও আধা পাকা ধান দুলছে। জমিনে জমিনে কাজ করছেন শ্রমিক ও চাষীরা। কৃষকেরা  জানান, এবার এখন পর্যন্ত হাওরে পানি না আসায় ও কোনো রকম প্রাকৃতিক বিপর্যয় না হওয়ায় চাষীরা স্বস্তিতে ধান কাটছেন। কম্বাইন হারভেস্টার মেশিন দিয়ে প্রতি কেদার জমির ধান কর্তনে ২ হাজার টাকা করে নেওয়া  হচ্ছে। 

 

হাওরে ধান ঝাড়া ও শুকানোর কাজে ব্যস্ত কৃষানী  শায়লা আক্তার  জানান, ৯ কেদার জমি( ৩০ শতকে ১কেদার) চাষাবাদ করেন স্বামী আনর আলী।   এবার ভালো ফলন হওয়ায় পরিবারের সবাই খুশি। আশা করছেন কিছুদিনের মধ্যে পুরো জমিনের ধান কাটার কাজ শেষ হবে। 


 
নলুয়া হাওরের  রসুলপুরের বাসিন্দা কৃষক সাজন আলী বলেন, ১০ কেদার জমিতে নিজ খরচে বঙ্গবন্ধু-১০০ জাতের ধান চাষ করেছি কিন্তু সবগুলো ধানে চিটা হওয়ায়  ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছি। 

 

জগন্নাথপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কাউসার আহমেদ জানান,  এ পর্যন্ত জগন্নাথপুর উপজেলায় ২৫/ ভাগ জমির ধান কাটা হয়েছে।  এর মধ্যে হাইব্রিড জাতের ধানের ফলন খুব ভালো হয়েছে।

 

তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু-১০০ জাতের ধানে কিছুটা চিটা হয়েছে। 

 

কৃষি কর্মকর্তা  বলেন,  আমরা অন্যান্য জেলা থেকে ধান কাটার শ্রমিক আনার চেষ্টা করছি। 

 

সিলেটভিউ২৪ডটকম/ সানোয়ার/ নোমান