হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জ উপজেলার শিবপাশার নোয়াপাড়া গ্রামের কৃষক আকছির মিয়া। চলতি বোরো মৌসুমে নিজের চার একর এবং মহাজনের কাছ থেকে আরো চার একর ইজারা এনে মোট আট একর জমিতে করেছিলেন বোরো আবাদ। এই আট একর জমিতে বোরো আবাদে জমির ইজারা, চারা, হালচাষ, জমি বুনন, সার, সেচের পানি, ধান কাটাসহ প্রতি একরে আকছির মিয়ার খরচ হয়েছে ৫০ হাজার ৭৫০ টাকা। আবাদ করা জমিতে প্রতি একরে গড়ে ধানের ফলন হয়েছে ৭০ মণেরও বেশী।

স্বপ্ন বুনেছিলেন ধানের ভাল দাম পেলে বর্ষা মৌসুমে একটু সচ্চলভাবে চলবে সংসার। তাই হাতে টাকা পয়সা না থাকায় ধান কাটার পরই বিক্রির সিদ্ধান্ত নেন তিনি। কিন্তু ধানের বাম্পার ফলন হলেও ধানের বাজার মুল্য কম থাকায় আকছির মিয়ার মুখে এখন দুঃচিন্তার ছাঁপ।


শুধু আকছির মিয়াই নন উপজেলার অধিকাংশ সাধারণ কৃষক ধানের উপযুক্ত দাম না পাওয়ায় এখন হতাশায় ভুগছেন।

“একদিকে ধানের মুল্য কম থাকা অপর দিকে সরকারের ভুর্তকি মুল্যের হারভেষ্টারে ধান কাটাতে প্রতি একরে ৭ থেকে ৮ হাজার টাকা গুনতে হিমসিম খাচ্ছেন সাধারণ কৃষকরা।”

উপজেলা কৃষি অধিদপ্তর বলছে, উপজেলায় চলতি মৌসুমে লক্ষমাত্রার চেয়ে বেশী উৎপাদন হয়েছে। ধানের দাম সরকারিভাবে ৩২ টাকা কেজি নির্ধারণ করা হয়েছে। আর হারভেষ্টার মেশিন গত বছর বিঘা প্রতি ১ হাজার ৫ শত টাকা নির্ধারণ করা হলেও ডিজেলের দাম বাড়ার পর  চলতি বছরে নতুন ফি নির্ধারণ করা হয়নি।

আকছির মিয়া জানান, ধানের ফলন ভাল হয়েছে। অনেক কষ্টে ধান কাটাও প্রায় শেষের দিকে। হাতে টাকা পয়সা না থাকায় কাটার পরই বিক্রির সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম কিন্তু বিক্রি করতে গিয়ে প্রতি মণ ধানের দাম পেয়েছি ৭৩০ টাকা থেকে ৭৫০ টাকা করে। এভাবে ধানের দাম কম হলে আমরা কৃষকরা কোথায় যাবো।
 

জেলা কৃষি অধিদপ্তর সুত্রে জানা গেছে, “চলতি বোরো মৌসুমে আজমিরীগঞ্জ উপজেলায় ১৪ হাজার ৬২৩ হেক্টর সহ জেলায় মোট ১ লাখ ২২ হাজার ৮২৫ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ মাত্রা নির্ধারণ করা হয়। এরমধ্যে আজমিরীগঞ্জ উপজেলায় ১৪ হাজার ৬২৫ হেক্টর সহ জেলায় লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করে বোরো চাষ হয়েছে ১ লাখ ২৩ হাজার ৭৩৭ হেক্টর জমিতে। 
“জেলায় ধানের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫ লাখ ২০ হাজার ৬৬৫ টন। সরকার নির্ধারিত ধানের বাজার মুল্যে যা ১ হাজার ৬ শত ৬৬ কোটি টাকার বেশী।”

কৃষক আলিমুল মিয়া বলেন, অনেক কষ্টে চার একর জমিতে বোরো আবাদ করেছিলাম। ফলনও ভাল হয়েছে কিন্তু ধান কাটাতে মেশিনে প্রতি বিঘায় ২ থেকে ২ হাজার ৫০০ টাকা খরছ হয়েছে। এখন প্রতি মণ ধান বিক্রি করত হচ্ছে ৭৩০ থেকে ৭৫০ টাকায়।

কৃষক মোহাম্মদ মিয়া বলেন, “নিজের পাঁচ বিঘা ও ইজারার ছয় বিঘা সহ মোট ১১ বিঘা জমিতে বোরো আবাদ করে ছিলাম। হাতে টাকা পয়সা না থাকায় ধান বিক্রি করবো ভাবছিলাম কিন্তু দাম কম। কি করবো বুঝতে পারছি না।”
 

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা লুৎফে আল মুঈজ বলেন, “ইতিমধ্যে উপজেলার নিচু হাওড় গুলোর ধান কাটা শেষ হয়েছে। উপজেলার ৬ হাজার ৮৫৪ হেক্টর জমির ধান কাটা সম্পন্ন হয়েছে। উপজেলা কৃষি অধিদপ্তরের মাঠকর্মীরা  নিয়মিত হাওড়গুলো পর্যবেক্ষণ করছেন। ধান ৮০ ভাগ পাঁকা সম্পন্ন হলে কেটে ফেলার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। ধানের দাম সরকার নির্ধারণ করে দিয়েছে। সরকারি ভাবে ধান বিক্রি করলে কৃষক ধানের ন্যায্যমূল্য পাবেন। উপজেলায় ৩৮ টি হারভেষ্টার মেশিন চালু রয়েছে। আমরা তাদের সঠিক মুল্যে কৃষকের ধান কাটার জন্য বলে দিয়েছি।”


 

সিলেটভিউ২৪ডটকম/মিলাদ/এসডি-১৯০৩