রাত পোহালেই অনুষ্ঠিত হবে সিলেটের প্রবাসী অধ্যুষিত বিশ্বনাথ উপজেলা পরিষদের নির্বাচন। সোমবার (৬ মে) শেষ হয়েছে নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণার কার্যক্রম। ৮ মে সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত চলবে ভোট গ্রহন। এখন অপেক্ষা কে পড়বেন বিজয়ের মালা? অবাদ-সুষ্ঠ ও শান্তিপূর্ণভাবে ভোট গ্রহন করতে ইতিমধ্যে সকল প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে নির্বাচন কমিশন। 
 

৬ষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বিশ্বনাথ উপজেলায় ৩টি পদে ‘আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও আঞ্জুমানে আল-ইসলাহ’র ১৯ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দিতা করছেন। এরমধ্যে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে ১০ জন, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৩ জন ও ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৬ জন প্রার্থী রয়েছেন। প্রার্থীদের মধ্যে আবার মধ্যে আবার রয়েছেন যুক্তরাজ্য-যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী ৮ জন প্রার্থী।
 


১ লক্ষ ৮৮ হাজার ৩৭ জন ভোটার ৭৪টি ভোটারের বিশ্বনাথ উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে ‘চেয়ারম্যান’ পদে আওয়ামী লীগের ৬ জন ও বিএনপির ৪ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দিতা করলেও বিভিন্ন এলাকার ভোটারদের কাছ থেকে প্রাপ্ত জরুপ অনুযায়ী এপদের লড়াই হবে পঞ্চমুখী। ওই লড়াই রয়েছে আওয়ামী লীগের ২ জন ও বিএনপির ৩ জন প্রার্থী। লড়াইটিকে আবার কেউ কেউ ২ দেশী প্রার্থীর সাথে ৩ প্রবাসী প্রার্থীর লড়াই হিসেবেও দেখছেন। এখন অপেক্ষার পালা যে পদটির জন্য রেকর্ড সংখ্যক প্রার্থী ভোট যুদ্ধে নেমেছেন শেষ হাসিটা কার জন্য অপেক্ষা করছে?
 

ভোট যুদ্ধের প্রচার-প্রচারণা শেষে ৮টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভা নিয়ে গঠিত বিশ্বনাথ উপজেলা পরিষদের ‘চেয়ারম্যান’ পদে জনসমর্থনে এগিয়ে থাকা পাঁচ প্রার্থীরা হলেন- ‘আনারস’ প্রতীকে উপজেলা আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক ও জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য অ্যাডভোকেট গিয়াস উদ্দিন আহমদ, ‘টেলিফোন’ প্রতীকে পৌর আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহবায়ক আলতাব হোসেন, ‘কাপ-পিরিচ’ প্রতীকে জেলা বিএনপির সাবেক সহ সভাপতি (বহিস্কৃত) প্রবাসী সুহেল আহমদ চৌধুরী, ‘কৈ মাছ’ প্রতীকে উপজেলা বিএনপির সাবেক আহবায়ক (বহিস্কৃত) প্রবাসী গৌছ খান, ‘দোয়াত-কলম’ প্রতীকে যুক্তরাজ্য বিএনপির সহ সাংগঠনিক সম্পাদক (বহিস্কৃত) প্রবাসী সেবুল মিয়া।
 

প্রচার-প্রচারণা ও জনসমর্থনের দিকে দিয়ে ‘চেয়ারম্যান’ পদের লড়াইয়ে আঞ্চলিকতার দিক দিয়ে বেশ সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছেন ‘আনারস’ প্রতীকে উপজেলা আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক ও জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য অ্যাডভোকেট গিয়াস উদ্দিন আহমদ। ইতিমধ্যে নির্বাচনী মাঠে তিনি বিশ্বনাথ উপজেলার অবহেলিত উত্তরাঞ্চলের একক প্রার্থী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছেন। আবার প্রথম বারের মতো নির্বাচনী মাঠে যুদ্ধে নেমে তরুণদের সম্বন্বয়ে চমক দেখানোর অপেক্ষায় রয়েছেন ‘দোয়াত-কলম’ প্রতীকে যুক্তরাজ্য বিএনপির সহ সাংগঠনিক সম্পাদক (বহিস্কৃত) প্রবাসী সেবুল মিয়া।


তবে নির্বাচনী ওই লড়াইয়ে শেষ পর্যন্ত ভোটাররা কোন দিকে যাচ্ছেন, বিগত নির্বাচনগুলোতে ওই পদে প্রবাসীদের নির্বাচিত করার পর কাঙ্খিত উন্নয়ন পাওয়া ও না পাওয়ার বিশ্লেষণ, আঞ্চলিকতা সেসব বিবেচনায় রেখে এবং বিভিন্ন সমীকরণ মিলিয়ে ‘চেয়ারম্যান’ পদের পঞ্চমুখী লড়াইটা ত্রিমূখী রুপও নিতে পারে। তবে হেভিওয়েট প্রার্থীদের মধ্যে কে হাসবেন বিজয়ের শেষ হাসি, এর সঠিক হিসাব-নিকাশ এখনোও নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। সরেজমিনে প্রত্যক্ষ ও ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে এমন ধারণা পাওয়া গেছে। আর এনিয়ে প্রার্থীরাও কাটাচ্ছেন নির্ঘুম রাত।

 

নির্বাচনকে ঘিরে শেষ সময় পর্যন্ত প্রতিদ্বন্দি প্রার্থীদের ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা ছিল লক্ষণীয়। প্রতীকে বরাদ্ধের পর সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চায়ের আন্ডার সাথে সাথে চলে নির্বাচন নিয়ে ব্যাপক আলোচনা। ভোট যুদ্ধের ওই প্রতিদ্বন্দিতায় বিজয়ী হতে প্রার্থীরা নিজের প্রচার-প্রচারণার সাথে সাথে বিভিন্ন এলাকার মানুষের কাছে দিয়েছেন উন্নয়নের নানান প্রতিশ্রæতি। ভোটারও নিজেদের পছন্দের প্রার্থী পক্ষে ছিলেন সরব। প্রতিদ্বন্দি প্রার্থীদের ব্যস্থতার ওই আনুষ্ঠানিক প্রচার-প্রচারণা সোমবার মধ্য রাতে শেষ হয়েছে। এখন উপজেলা জুড়ে চলছে শেষ আলোচনা-সমালোচনা ও চুলচেরা বিশে¬ষণ।

 

সরেজমিনে বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে স্থানীয়দের সাথে আলাপ করে জানা গেছে, নির্বাচনী মাঠে হেভিয়েট পাঁচ চেয়ারম্যান প্রার্থীসহ প্রায় প্রত্যেকেরই রয়েছে একটি নিজস্ব ভোট ব্যাংক। তাছাড়া ‘ব্যক্তি ইমেজ, আঞ্চলিকতা, সামাজিক প্রভাব’র বিষয়গুলোও নির্বাচনী মাঠে ভোট যুদ্ধের ফ্যাক্টর হবে বলে জানান অনেকেই। তবে সকল প্রার্থীই নিজের জয়ের ব্যাপারে রয়েছেন শতভাগ আশাবাদী।

 

এদিকে, উপজেলা পরিষদের ‘চেয়ারম্যান’ পদের মতো ‘মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান’ পদের ৩ জন প্রার্থীর মধ্যে রয়েছেন আওয়ামী লীগের ২ জন ও বিএনপির ১ জন প্রার্থী এবং ‘ভাইস চেয়ারম্যান’ পদের ৬ জন প্রার্থীর মধ্যে রয়েছে আওয়ামী লীগের ৩ জন, বিএনপির ২ জন ও আঞ্জুমানে আল-ইসলাহ’র ১ জন প্রার্থী। ওই দুটির মধ্যের ভাইস চেয়ারম্যান পদের লড়াই জমঝমাট হলেও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ‘ফুটবল’ প্রতীক নিয়ে বেশ সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছেন উপজেলা পরিষদের বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান ও উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জুলিয়া বেগম।