বর্ণিল এক জীবন সাকিবের। ক্রিকেটার হিসেবে এমন উচ্চতর অবস্থানে পৌঁছে গেছেন, যে অবস্থান অন্য অনেকের জন্য কেবলই দূরাকাশের তারা। ক্রিকেটে যেখানে খেলতে নেমেছেন—ঘরোয়া ক্রিকেট হোক কিংবা আন্তর্জাতিক, ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট হোক বা প্রীতি ম্যাচ—সবখানে কেবলই সোনা ফলিয়ে গেছেন এই বাঁহাতি। প্রায় দেড় দশক আগে ক্রিকেটের অমিয় সাগরে যে তরী ভাসিয়েছিলেন সাকিব, এখন তা সোনালী ফসলে পরিপূর্ণ। বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে প্রশ্নাতীত সেরা তো বটেই, বিশ্ব ক্রিকেটে তিনি এখন সর্বকালের সেরাদের একজন।
এতো রেকর্ড, এতো সম্মান, এতো অর্জন—সাকিবের নিজেরই হয়তো কখনো কখনো স্রেফ অবিশ্বাস্যই মনে হয়। তারপরও কখনো অবসরে, ফুরসতে তার বুক চিরে কী কোনোও দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে? এমন কী মনে হয় যে, যদি ওই কাজটা না করতাম! ওই আচরণটা যদি আমার দ্বারা না হতো!
সাকিব একা একজন মানুষ; কিন্তু তাকে ঘিরে বিতর্ক অনিঃশেষ। শুধু এই একটি বাক্য যদি বলা হয়—অন্যতম আলোচিত ও বিতর্কিত ব্যক্তি’, তবে সম্ভবত স্বাভাবিকভাবেই বাংলার মানুষজনের মানসপটে সর্বাগ্রে ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানের নামই ভেসে ওঠবে। ভেসে না ওঠাই বরঞ্চ অস্বাভাবিকতা হিসেবে ধরে নিতে হবে! ঠিক এ কারণেই সাকিবের দীর্ঘশ্বাসের প্রসঙ্গ টানা। একান্ত সময়ে সাকিব হয়তো নিজের অতীতের দীর্ঘ পথের পানে ফিরে তাকান, হয়তো বিরাট অর্জনের পরও তার মনে খেদ থাকে কিছুটা। হয়তো এরকম হয়ই না। সাকিবকে আমরা যেরকম দেখে অভ্যস্ত, তাতে তার কাছে সম্ভবত সামনের পথ ধরে হেঁটে যাওয়াই মূল কথা।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সাকিবের অভিষেক ২০০৬ সালে। প্রতিভার স্বাক্ষর রেখে শুরু থেকেই তিনি মনোযোগ কাড়েন বিশ্ব ক্রিকেটের। বছর কয়েক যেতে না যেতেই তার পারফরম্যান্সের খাতায় সমানতালে যোগ হতে থাকে বিতর্কিত সব কাজকারবার। কখনো গালাগালি, স্টাম্প ছুড়ে ফেলা, কখনো অশ্লীল আচরণ, মারধর, কখনোবা জুয়াড়ির সঙ্গে যোগাযোগ রাখার তথ্য গোপন—কী করেননি সাকিব! ২০১০ সাল থেকে বিতর্কের সাথে যার ওঠাবসা শুরু, তখন থেকে এই ২০২৪ সাল অবধি মাত্র দুটি পৃথক বছর গেছে যখন তিনি কোনো নতুন বিতর্কের জন্ম দেননি। শাস্তি পেয়েছেন, নিষিদ্ধ হয়েছেন, দুয়োধ্বনি শুনেছেন—কিছুকেই পাত্তা দিতে তার মন সায় দেয়নি সম্ভবত।
যুক্তিতর্ক দিয়ে যে সুন্দর আলোচনা হয়, সেটাকে বিতর্ক বলা হয়। কিন্তু এই বিতর্কের সাথে সাকিবের কর্মকাণ্ডের যে একরত্তি মিল নেই, সেটা বলাই বাহুল্য। যদি মিল থাকতো, তবে তিনিই হতেন সর্বকালের অন্যতম সেরা ও অপ্রতিদ্বন্দ্বি ‘বিতার্কিক’!
দুই.
ফুলে সুশোভিত সাকিবের ক্রিকেট ক্যারিয়ারে কাঁটা হয়ে আছে বিতর্কগুলো। ২০১০ সালে প্রথমবার বিতর্কে জড়ান তিনি। এরপর কেবল ২০১২ ও ২০২০ সাল দুটি গেছে, যখন সাকিবকে নিয়ে প্রকাশ্যে কোনো বিতর্কের তথ্য জানা যায়নি! বাদবাকি সব বছরেই এক বা একাধিক অপ্রত্যাশিত কাণ্ডের ‘ধারাবাহিকতা’ ধরে রাখেন তিনি।
২০১০ সালে ভারতের বিপক্ষে ঘরের মাঠে ওয়ানডে সিরিজ খেলছিল বাংলাদেশ। ওই সিরিজের চতুর্থ ম্যাচে সাইট স্ক্রিনের পাশে এক দর্শক নড়াচড়া করছিলেন। এতে বিরক্ত হয়ে ক্রিজ ছেড়ে বাউন্ডারি লাইনে ছুটে গিয়ে ওই দর্শককে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন সাকিব। সঙ্গে ব্যাট উঁচিয়ে দেন হুমকিও! সেই যে শুরু, চলছে নিরবধি। ২০১১ সালে বিশ্বকাপে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে মাত্র ৫৮ রানে অলআউট হয় বাংলাদেশ। এমন হতশ্রী পারফরম্যান্সে ক্ষোভ প্রকাশ করতে থাকেন স্টেডিয়ামের দর্শকরা। সেটা সহ্য হয়নি সাকিবের—মধ্যমা আঙ্গুল দেখিয়ে বাজে ইঙ্গিত দেন দর্শকদের। ২০১২ সাল সাকিবের কাছ থেকে নিরাপদেই ছিল বিতর্ক শব্দটি! পরের বছর ফের ‘ফর্মে’ ফিরেন তিনি। ২০১৩ সালে মিরপুরে বিজয় দিবস টি-টোয়েন্টি ম্যাচ চলছিল। তখন এক দর্শক অটোগ্রাফ চান সাকিবের কাছে। বারবার চাওয়ার পরও সাকিব অটোগ্রাফ দিতে রাজি হননি। এতে ওই দর্শক কটুক্তি করেন। এরপর রেগেমেগে গ্যালারিতে গিয়ে ওই দর্শকের কলার চেপে ধরেন সাকিব!
২০১৪ সালে অন্তত তিনবার বিতর্কে নাম জড়ায় বাঁহাতি অলরাউন্ডারের। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে এক ম্যাচে ছক্কা মারতে গিয়ে ক্যাচ তুলে ড্রেসিংরুমে ফিরেন তিনি। খানিক পর এই আউট নিয়ে ধারাভাষ্যকাররা যখন কথা বলছিলেন, তখন টিভি ক্যামেরায় বাংলাদেশ দলের ড্রেসিংরুম দেখানো হচ্ছিল। তখন ক্যামেরার পানে তাকিয়ে রীতিমতো অশালীন অঙ্গভঙ্গি করেন সাকিব! শুরু হয় সমালোচনার ঝড়। পরে তাকে তিন ম্যাচের জন্য নিষিদ্ধ ও তিন লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। ওই বছরই দর্শক পিটিয়ে ফের শিরোনাম হন তিনি। ভারতের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের প্রথম ম্যাচ চলছিল মিরপুরে। বৃষ্টির কারণে খেলা বন্ধ থাকার সময় ভিআইপি গ্যালারিতে কয়েকজন বন্ধুর সঙ্গে বসা সাকিবের স্ত্রী শিশিরকে এক যুবক উত্যক্ত করার অভিযোগে তাকে আটকে মারধর করে বিসিবির নিরাপত্তাকর্মীরা। খবর পেয়ে কারও অনুমতির তোয়াক্কা না করে ড্রেসিংরুম ছেড়ে সেখানে গিয়ে মারধরে যোগ দেন সাকিব! অথচ ম্যাচ চলাকালে কোনোভাবেই গ্যালারিতে যেতে পারেন না ক্রিকেটাররা। এ ঘটনায় সাকিবকে তলব করে ব্যাখ্যা চায় বিসিবি। তার ব্যাখ্যায় দেশের ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রক সংস্থা সন্তুষ্ট হয়নি।
এদিকে, ওই তলবে ক্ষুব্ধ হয়ে জাতীয় দলের তৎকালীন প্রধান কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহেকে টেস্ট ও ওয়ানডে থেকে অবসর নিয়ে নেওয়ার হুমকি দেন সাকিব! ক্যারিবিয়ান প্রিমিয়ার লিগের (সিপিএল) ২০১৪ সালের আসরে সাকিব বিসিবির কাছ থেকে কোনো লিখিত অনুমতি না নিয়েই খেলতে চলে যান। তাকে দেশে ডেকে পাঠায় বিসিবি। এরপর তারা বসে বৈঠকে। ওই বছরের ৭ জুলাই বিসিবির তৎকালীন সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন জানান, দর্শক পেটানো ও সিপিএলে খেলতে যাওয়ার ঘটনায় সাকিবকে সব ধরনের ক্রিকেটে ছয় মাসের জন্য নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এ সময়ে তিনি এমনকি জাতীয় দলের সঙ্গে অনুশীলনও করতে পারবেন না। একইসঙ্গে দেড় বছর তিনি দেশের বাইরে কোনো টুর্নামেন্ট খেলতে পারবেন না। ওই সময় পাপন বলেছিলেন, ‘এর আগে বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে এমন কেউ আসেনি, যার এতো আচরণগত সমস্যা ছিল। ওর আচরণ এমন, যা আমাদের দলকে সরাসরি প্রভাবিত করছে।’ সাকিবের ওই শাস্তি অবশ্য টেকেনি। তার আপিলের প্রেক্ষিতে শাস্তি প্রায় চার মাসই কমিয়ে দেয় বিসিবি।
বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) ২০১৫ সালের আসরে একটি ম্যাচ চলাকালে আম্পায়ার তানভীর আহমেদের সঙ্গে অসদাচরণ করেন রংপুর রাইডার্সে খেলা সাকিব। সিলেট সুপার স্টার্সের বিপক্ষে কট বিহাইন্ডের আবেদনে সাড়া না দেওয়ায় রেগে বাজে আচরণ করেন তিনি। এ ঘটনায় তাকে নিষিদ্ধ করা হয় এক ম্যাচে, জরিমানা করা হয় ২০ হাজার টাকা। ২০১৬’তে ফের বিপিএলে আম্পায়ারের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার দেখান তিনি। আসরের প্রথম কোয়ালিফায়ারে ঢাকা ডায়নামাইটসে খেলা সাকিবের এই অসদাচরণের জন্য কোনোও শাস্তি দেয়নি বিসিবি।
এক সময়কার বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার ২০১৭ সালে টেস্টে দারুণ খেলছিলেন। ৭ টেস্টে ৬৬৫ রান আর ২৯ উইকেট। দুর্দান্ত ফর্মে থাকার ওই সময়ে, দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের ঠিক আগে সবাইকে চমকে দিয়ে টেস্ট ক্রিকেট থেকে ছয় মাসের বিরতি চেয়ে বসেন সাকিব! নাখোশ হন কোচ, চলে বিতর্ক। শেষাবধি তিন মাসের ছুটি পান তিনি। পরের বছর যুক্তরাষ্ট্রে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজ চলাকালে এক দর্শকের সঙ্গে উত্তপ্ত তর্কে লিপ্ত হন মাগুরার ছেলে। এ ঘটনার ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে, হয় বিতর্ক।
২০১৯ ওয়ানডে বিশ্বকাপের আগে নিয়ম অনুসারে জাতীয় দলের আনুষ্ঠানিক ফটোসেশন হয়। মিপুর শেরে বাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে হওয়া সেই ফটোসেশনে উপস্থিত থাকেননি সাকিব! বিশ্বকাপের পর বিভিন্ন ইস্যুতে দেশে ক্রিকেটারদের আন্দোলন শুরু হয়, যেখানে নেতৃত্ব দেন সাকিব। তবে এসবকে ছাপিয়ে ২০১৯ সাকিবের জন্য অন্য কারণে বিভীষিকা। তিন তিনবার জুয়াড়িদের কাছ থেকে ফিক্সিংয়ের প্রস্তাব পেয়েও আইসিসিকে না জানানোয় এক বছরের স্থগিত নিষেধাজ্ঞাসহ দুই বছরের জন্য সাকিবকে সব ধরনের ক্রিকেটে নিষিদ্ধ করে নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি। ওই বছরের ২৯ অক্টোবর এই শাস্তির বিষয়টি জানায় আইসিসি। ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা ও জিম্বাবুয়ের মধ্যকার ত্রিদেশীয় সিরিজ চলাকালে দুবার ফিক্সিংয়ের প্রস্তাব পান সাকিব। একই বছরের এপ্রিলে আইপিএলে সানরাইজার্স হায়দরাবাদ ও কিংস ইলেভেন পাঞ্জাবের মধ্যকার ম্যাচে আরেকবার জুয়াড়িদের প্রস্তাব আসে তার কাছে। নিয়ম অনুসারে এসব প্রস্তাব আইসিসির দুর্নীতি বিরোধী ইউনিটকে জানাতে বাধ্য ছিলেন সাকিব। কিন্তু তিনি সেগুলো গোপন করে যান। পরে আইসিসি নিজস্ব সূত্রে তথ্য পেয়ে অনুসন্ধান চালায়, সাকিবও দায় স্বীকার করে নেন।
আইসিসির ওই নিষেধাজ্ঞায় থাকার কারণেই সম্ভবত ২০২০ সালে কোনোও বিতর্কে নিজেকে জড়াননি সাকিব। তবে ২০২১ সালে ফের শুরু। ওই বছর সন্তানসম্ভবা স্ত্রীর পাশে থাকতে নিউজিল্যান্ড সফর থেকে ছুটি নেন সাকিব। এতে কেউ আপত্তি তুলেননি। তবে আইপিএল খেলতে শ্রীলঙ্কা সফর থেকে ছুটি নেওয়ায় চরম সমালোচনায় পড়েন তিনি। মহামারিকাল হওয়ায় ওই বছর প্রিমিয়ার লিগ হয় জৈব সুরক্ষাবলয়ের মধ্যে। কিন্তু মোহামেডানে খেলা সাকিব নিয়মের তোয়াক্কা না করে সুরক্ষাবলয় ভেঙে অনুশীলন করেন। পরে এজন্য ক্ষমা চান তিনি। তবে এ দুই ঘটনা নয়, ওই বছরটি সাকিব আরেকবার নিষিদ্ধ হওয়ার কারণেই সম্ভবত মনে রাখবেন বেশি। ওই প্রিমিয়ার লিগেরই ঘটনা। মোহামেডান ও আবাহনীর ম্যাচ। আম্পায়ার তানভীর আহমেদের একটি সিদ্ধান্ত মনোঃপুত না হওয়ায় স্ট্যাম্পে লাথি মেরে বসেন সাকিব! এখানে থামলে তো! বৃষ্টির কারণে ম্যাচটি সাময়িক বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেন আম্পায়াররা। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে স্ট্যাম্প তুলে নিয়ে আছাড় মারেন সাকিব! এ ঘটনায় তাকে তিন ম্যাচে নিষিদ্ধ আর পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।
সাকিব ২০২২ সালে একটি বেটিং (জুয়া) প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বাণিজ্যিক চুক্তি করেন। বিসিবি তখন কঠোর হুঁশিয়ারি দেয় তাকে। বাধ্য হয়ে চুক্তি বাতিল করেন তিনি। পরের বছর ওয়ানডে বিশ্বকাপের আগে এক সাক্ষাৎকারে দীর্ঘদিনের সতীর্থ তামিম ইকবালকে নিয়ে অপ্রত্যাশিত মন্তব্য করেন সাকিব। ক্রিকেটপ্রেমীদের তীব্র বাক্যবাণ তাকে হজম করতে হয় তখন। এছাড়া নিজের চোখের সমস্যা লুকিয়ে বিশ্বকাপে খেলেন সাকিব। একই বছরে একটি হত্যা মামলার পলাতক এক আসামির আমন্ত্রণে দুবাইতে শোরুম উদ্বোধনে গিয়ে সমালোচনায় পড়েন তিনি।
চলতি বছরটা সাকিবের জন্য একেবারেই অন্যরকম। সুখের পাল তুলে চলা নৌকা এভাবে ঝড়ের কবলে পড়ে যাবে, স্বপ্নেও হয়তো ভাবেননি। ছাত্র-জনতার ঐতিহাসিক আন্দোলন চলাকালে সাকিব কানাডায় গ্লোবাল টি-টোয়েন্টি লিগে খেলছিলেন। আন্দোলনে একাত্মতা পোষণ না করায় সেখানে এক দর্শক তাকে প্রশ্ন ছুড়ে দেন। পাল্টা তির্যক প্রশ্ন ছুড়ে সাকিব বলেন, ‘দেশের জন্য আপনি কী করেছেন?’ দেশের উত্তাল সময়ে তিনি ফেসবুকে পারিবারিক ছবি শেয়ার দিয়ে ‘কোয়ালিটি টাইম’ কাটানোর কথাও লিখেন। এসবের প্রেক্ষিতে সাকিব পরিণত হন ‘গণশত্রু’তে। আন্দোলন পরবর্তী সময়ে তার বিরুদ্ধে হত্যা মামলাও হয়েছে। সম্প্রতি ভারত সফরে থাকাকালীন তিনি ক্যারিয়ারের শেষ টেস্ট দেশের মাটিতে খেলতে চাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। পরে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে সামিল না হওয়ায় দুঃখ প্রকাশ করে বিবৃতি দেন। কিন্তু গ্রেফতারের ঝুঁকি নিয়ে সাকিব আদৌ দেশে আসবেন কিনা, সেটা সময়েই জানা যাবে।
ক্রিকেটাঙ্গনের বিতর্কের বাইরে ‘ব্যবসায়ী’ সাকিব আল হাসানের বিতর্কের তালিকাও বেশ লম্বা। শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারি, ৫০ লাখ টাকা জরিমানা, শেয়ারবাজারের ব্যবসার ডকুমেন্টে নিজের বাবার নাম বদলে দেওয়া, বিভিন্ন জায়গায় শোরুম উদ্বোধন করতে গিয়ে ভক্তদের সঙ্গে বাজে আচরণ, নিজের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকদের বেতন ঠিকঠাক না দেওয়াসহ নানা অভিযোগ তার বিরুদ্ধে। এছাড়া রাজনীতিতে জড়ানো, কিংস পার্টি গড়তে চাওয়া এসব নিয়েও তর্ক-বিতর্কের শেষ নেই।
প্রতিভাবানরা নাকি একটু-আধটু ‘পাগলাটে’ হয়ে থাকেন। সাকিব প্রতিভাবান নিঃসন্দেহে। তার মতো ক্রিকেট প্রতিভা বাংলাদেশ আর কবে পাবে, এ এক বিরাট প্রশ্ন। তার একটু-আধটু নয়, বরঞ্চ সীমাহীন ‘পাগলামি’ মেনে নিয়ে বারবার ভালোবাসার ঢালি উপহার দিয়েছে বাংলাদেশ। তবুও বদলাননি সাকিব, বদলাতে চাননি। ক্যারিয়ারের পড়ন্ত বেলায় এসে তাই বাংলার মানুষের মানসপটে সাকিব অনেকটাই ‘অপাঙক্তেয়’!
সিলেটভিউ২৪ডটকম/আরআই-কে