বাংলাদেশের বিপক্ষে সর্বোচ্চ রানের লক্ষ্য দিল আয়ারল্যান্ড। সেই লক্ষ্যের পানে ছুটতে শুরুটা যেরকম দৃঢ় হওয়ার দরকার, হলো ঠিক সেরকম। দিলারা আক্তার ও সোবহানা মোস্তারির শুরুর ঝড়ে জয়টা হাতের মুঠোয়ই মনে হচ্ছিল বাংলাদেশের। কিন্তু এরপরই এলোমেলো ব্যাটিংয়ে বিপর্যয়। যেখান থেকে উদ্ধার হওয়ার পথ আর খুঁজে পায়নি স্বাগতিকরা।
তিন ম্যাচ টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথমটিতে আয়ারল্যান্ড নারী ক্রিকেট দলের বিপক্ষে ১২ রানে হেরেছে বাংলাদেশ।
ক’দিন আগে শেষ হওয়া ওয়ানডে সিরিজে বাংলাদেশের কাছে পাত্তা পায়নি আয়ারল্যান্ড নারী ক্রিকেট দল। টি-টোয়েন্টির পরিসংখ্যানেও বাংলাদেশের বিপক্ষে পিছিয়ে আইরিশরা। আগের ১১ ম্যাচের ৮টিতেই জয়ী দলের নাম বাংলাদেশ। সবশেষ ৭ ম্যাচের ৬টিই জিতে নেন নিগার সুলতানারা।
স্বাভাবিকভাবেই আত্মবিশ্বাসে বলিয়ান হয়েই আজ সিলেটের মাঠে খেলতে নামে বাংলাদেশ। কিন্তু সেই আত্মবিশ্বাস আর কাজে দিল কই! বরঞ্চ দারুণ ব্যাটিংয়ে আইরিশরাই গড়লো বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রানের ইনিংসের রেকর্ড। ২০১৮ সালে ডাবলিনে বাংলাদেশের বিপক্ষে ৪ উইকেটে ১৫২ রান তুলেছিল আইরিশরা। এবার সেটা টপকে ৫ উইকেটে তারা করলো ১৬৯ রান।
এই বড় লক্ষ্যের পানে ছুটতে গিয়ে ঝড়ো শুরু করেন বাংলাদেশের দিলারা আক্তার ও সোবহানা মোস্তারি। দ্বাদশ ওভারের শেষ বলে এ দুজনের ওপেনিং জুটি যখন ভাঙে, তখন বাংলাদেশের স্কোরে বোর্ডে রান ১০৩! অবশ্য এ জুটিকে তাণ্ডব চালাতে বেশ ভালোই ‘সহায়তা’ করেছেন আইরিশ ফিল্ডাররা। অন্তত পাঁচটি সহজ ক্যাচ ছেড়েছেন তারা।
৩৫ বলে ৩টি চার ও ২টি ছয়ে ৪৬ রান করে প্রেন্ডারগাস্টের বলে বিদায় নেন সোবহানা মোস্তারি।
উদ্বোধনী জুটি ভাঙলেও বাংলাদেশের জয়টা তখনও সময়ের ব্যাপার বলেই মনে হচ্ছিল। কিন্তু পরের ৭ রানের মধ্যে দুই উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে যায় স্বাগতিকরা। অধিনায়ক নিগার সুলতানা বিদায় নেন দ্রুতই (৪)। অর্ধশতকের কাছে গিয়ে ফিরে যান দিলারা আক্তার। ৪১ বলে দুটি করে চার ও ছয়ে ৪৯ রান আসে এ ওপেনারের ব্যাট থেকে।
হঠাৎ করে পড়া এই চাপ থেকে আর বের হতে পারেনি স্বাগতিকরা। শারমিন আক্তার (১৩ বলে ২৩*) ও তাজ নেহার (১৪ বলে ১৯) চেষ্টা করেছেন। কিন্তু হতাশ করেন স্বর্ণা আক্তার (১), রিতু মনি (০), জান্নাতুল ফেরদৌসরা (০)। জয়ের হিসেবনিকেশ আর তাই মেলানো হয়নি। ৭ উইকেট হারিয়ে ১৫৭ রানে থেমে যায় বাংলাদেশের ইনিংস। ১২ রানে হার।
অরলা প্রেন্ডারগাস্ট ও আরলিন কেলি ৩টি করে উইকেট নিয়ে সফরকারীদের জয়ে রেখেছেন বড় ভূমিকা।
এর আগে টসে জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন আয়ারল্যান্ড অধিনায়ক গ্যাবি লুইস। ইনিংসের তৃতীয় ওভারে, দলীয় ১৬ রানে ভাঙে তাদের উদ্বোধনী জুটি। জাহানারা আলমের বলে বোল্ড হয়ে ফিরেন আইরিশ উইকেটরক্ষক অ্যামি হান্টার। পাওয়ার প্লেতে ওই ১ উইকেট হারালেও রানের চাকা খুব বেশি বেগবান করতে পারেনি সফরকারীরা। ছয়ের কম রান রেটে ৩৫ রান তুলে তারা।
১৫ বলে ১১ রান করার ওরলা প্রেন্ডারগাস্টকে সপ্তম ওভারের শেষ বলে বোল্ড করে ফেরান জান্নাতুল ফেরদৌস। আইরিশদের রান তখন ৭ ওভারে ২ উইকেটে ৪৬। এরপরই মূলত বড় রানের দিকে এগিয়ে যাওয়ার শুরু সফরকারীদের। তৃতীয় উইকেট জুটিতে ৬৪ বলে ১০৭ রান তুলেন অধিনায়ক গ্যাবি লুইস ও লিয়া পল।
ফারিহা তৃষ্ণার বলে বোল্ড হওয়ার আগে গ্যাবির ব্যাট থেকে আসে ৪২ বলে ৬০ রানের ঝড়ো ইনিংস। ৭টি চারের সঙ্গে ২টি ছয়ও মারেন তিনি।
পরের ১৪ বলে ‘শেষের ঝড়’ তুলতে ব্যর্থ হয় আয়ারল্যান্ড। এ সময়ে আরও ২ উইকেট হারিয়ে তুলে ১৬ রান। শেষাবধি ৫ উইকেটে ১৬৯ রানের লক্ষ্য দাঁড় করায় তারা।
ইনিংস সর্বোচ্চ ৭৯ রান করে অপরাজিত থাকেন পল। ম্যাচসেরার পুরস্কার পাওয়া পলের ৪৫ বলের ইনিংসে ছিল ১০টি চার ও ২টি ছয়। বাংলাদেশের জাহানারা, ফারিহা, জান্নাতুল, নাহিদা একটি করে উইকেট শিকার করেন।
সিলেটভিউ২৪ডটকম/আরআই-কে