ব্লগার অনন্ত বিজয় দাশ হত্যা মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ আবারও পিছিয়েছে। মামলার আসামী শফিউর রহমান ফরাবি ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে থাকায় আলোচিত এই মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ হয়নি। তবে সাক্ষ্য দেয়ার জন্য আদালতে তদন্তকারী কর্মকর্তা সিআইডি পুলিশ ইন্সপেক্টর আরমান আলী ,পুলিশ পরিদর্শক আইটি ফরেনসিক মাসুদ সিদ্দিকী এবং উপপরিদর্শক সিআইডি সুহেল রানা উপস্থিত ছিলেন। মঙ্গলবার (৭ ডিসেম্বর) দুপুরে সাক্ষ্যগ্রহণ না হওয়ায় সিলেট সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. নুরুল আমিন বিপ্লব পরবর্তী তারিখ ঘোষণা করেন বলে নিশ্চিত করেন বাদী পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট এমাদ উল্লাহ শাহীন।

তিনি বলেন, আগামী ১৯ জানুয়ারি আদালত সাক্ষ্য গ্রহণের দিন ধার্য করেন। ফারাবিকে আদালতে হাজির না করায় অনন্ত হত্যা মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ হয়নি। যদি সাক্ষ্য গ্রহণ হয়ে যেত তাহলে এ মামলাটির বিচার প্রক্রিয়ায় আরও গতি আসতো। মামলার ২৯ জন সাক্ষীর মধ্যে ২০ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। মামলার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দুজন সাক্ষী গত ধার্য তারিখে হাজির না হলেও মঙ্গলবার পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) পরিদর্শক আরমান আলী এবং আইটি ফরেনসিক বিভাগের উপ-পরিদর্শক মাসুদ সিদ্দিকীসহ তিনজন আদালতে হাজির হয়েছিলেন।


আদালত সূত্র জানায়, ২০১৫ সালের ১২ মে সকালে কর্মক্ষেত্রে যাওয়ার জন্য বোন পঞ্চত্রপা দাশকে নিয়ে বের হন অনন্ত বিজয় দাশ। সিলেট নগরীর সুবিদবাজার নুরানি আবাসিক এলাকার বাসা থেকে গলি ধরে প্রধান সড়কের দিকে হেঁটে যাওয়ার সময় চাপাতিসহ ধারালো অস্ত্র নিয়ে তাদের ওপর অতর্কিতে হামলা চালায় অজ্ঞাতপরিচয় কয়েকজন। এলাকার দস্তিদার বাড়ি দিঘীর পাড়ে বোনের সামনেই কুপিয়ে অনন্তকে হত্যা করে পালিয়ে যায় হামলাকারীরা। পরে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিম এ হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করে বিবৃতি দেয়।

সে রাতেই সিলেটের বিমানবন্দর থানায় অজ্ঞাত হামলাকারীদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেন অনন্ত বিজয় দাশের ভাই রত্নেশ্বর দাশ। মামলার তদন্তের দায়িত্ব প্রাথমিকভাবে থানা পুলিশের কাছে থাকলেও পরে পুলিশ সদরদপ্তরের নির্দেশের পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) কাছে হস্তান্তর করা হয়। তদন্ত শেষে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সিআইডি'র পরিদর্শক আরমান আলী ২০১৬ সালের ১৮ অক্টোবর আদালতে একটি অভিযোগপত্র দাখিল করলে আদালত পুনরায় তদন্তের নির্দেশ দেন। এরপর পুনরায় তদন্ত শেষে ২০১৭ সালের ৯ মে সম্পূরক অভিযোগপত্র দিলে আদালত তা গ্রহণ করেন।

এ অভিযোগপত্রে অনন্ত বিজয় দাশ হত্যায় অভিযুক্ত করা হয় শফিউর রহমান ফারাবী, মান্নান ইয়াহইয়া ওরফে মান্নান রাহী, আবুল খায়ের রশীদ আহমেদ, আবুল হোসেন ওরফে আবুল হুসাইন, হারুনুর রশীদ এবং ফয়সল আহমেদকে। এদের মধ্যে ফারাবী এবং আবুল খায়ের জেলে। অভিযুক্ত মান্নান, যিনি এই মামলায় দণ্ডবিধি ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছিলেন, তিনি ২০১৭ সালের ২ নভেম্বর হঠাৎ অসুস্থ হয়ে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে মৃত্যুবরণ করেন। মামলার বাকি ৩ আসামি এখনও পলাতক। মামলার বিচার প্রাথমিক অবস্থায় কয়েক বছর সিলেটের অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতে পরিচালিত হয়। পরে সিলেটে সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠনের পর ২০২০ সালের শুরুর দিকে মামলাটি এই ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করা হয়।

সিলেটভিউ২৪ডটকম/পিটি-৩১