শিক্ষক হওয়ার প্রবণতা যে কতটা হতে পারে, তার দৃষ্টান্ত তৈরি করেছেন নরসিংদীর শাহনাজ পারভীন জনি। একটি-দুটি নয়, গুনে গুনে তিনি আবেদন করেছেন ১ হাজার ২৭৭টি। তবু হতে পারলেন না শিক্ষক। এর মধ্যে নবম নিবন্ধন পরীক্ষায় স্কুল আর ১১তম নিবন্ধন পরীক্ষায় কলেজশিক্ষক নিবন্ধনে সফলভাবে যোগ্যতাও অর্জন করেছেন তিনি।

শাহনাজ পারভীন জনির বাড়ি নরসিংদীর মনোহরদী উপজেলার খিদিরপুরে। তিনি খিদিরপুর এলাকার প্রয়াত মাদরাসাশিক্ষক শিহাব উদ্দিনের মেয়ে। সর্বশেষ ২০১০ সালে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ শেষ করেছেন শাহনাজ।


তিনি ২০০০ সালে এসএসসিতে প্রথম বিভাগে পাস করেন। ২০০৩ সালে এইচএসসিতে দ্বিতীয় বিভাগে পাস করেন। এরপর একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২০০৮ সালে ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিষয়ে বিবিএ এবং ২০১০ সালে এমবিএ শেষ করেন।

জানা যায়, মা-বাবার শিক্ষকতার সংসার আর পাঁচ ভাই-বোনের পরিবারে বড় সন্তান তিনি। মা-বাবার দেখানো পথে নিজেকেও শিক্ষকতা পেশাতেই নিয়োজিত করার সংকল্প নিয়েছিলেন। সে জন্য শিক্ষকতার অংশ হিসেবে নিয়েছেন নিবন্ধন সনদও। নবম নিবন্ধন পরীক্ষায় স্কুল আর ১১তম নিবন্ধন পরীক্ষায় কলেজশিক্ষক নিবন্ধনে পাস করেছেন তিনি। কিন্তু শিক্ষক হওয়ার আকাঙ্ক্ষা পূরণ হয়নি সাত বছরেও।

ইতোমধ্যেই আবেদনের বয়সসীমা অতিক্রম করেছেন জনি। তিন দফায় দেওয়া নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে ৩৫টি কলেজ ও ১ হাজার ২৪২টি বিদ্যালয়সহ ১ হাজার ২৭৭টি প্রতিষ্ঠানে আবেদন করেও আকাঙ্ক্ষিত সরকারি স্কুল-কলেজে মেলেনি চাকরি।

শাহানাজ পারভিন জনি বলেন, ২০১১ সালে আমার বাবা মারা যান। শিক্ষকতাকে মনে লালন করে সরকারি চাকরির চেষ্টা করিনি। প্রায় ১ হাজার ৩০০ আবেদনে এ পর্যন্ত দুই লাখ টাকা খরচ হয়েছে আমার। নবম নিবন্ধনেই আবেদন করি ১ হাজার ২০০, সেখানে খরচ হয় দেড় লাখ টাকার মতো। অন্যগুলোয় খরচ হয় আরও ৫০ হাজারের অধিক। টাকাগুলো কে দেবে আমাকে? আমি ২০১৩ সালে নবম সহকারী শিক্ষক নিবন্ধনে স্কুল এবং ২০১৪ সালে ১১তম কলেজ নিবন্ধনে পাস করি। নিবন্ধন পাস করেও নিয়োগ না হওয়ার কারণ হিসেবে এনটিআরসিএর ১ থেকে ১২তম সনদধারীদের মূল্যয়িত না করার ভুল সিদ্ধান্ত দায়ী করছি। আমি দুটি নিবন্ধন পাস করেছি। তবু কেন শিক্ষক হতে পারব না? এনটিআরসির ভুল সিদ্ধান্ত বা জটিলতার দায় আমি নেব কেন?

শাহনাজের মা আনোয়ারা আক্তার বলেন, আমি ও আমার প্রয়াত স্বামী দুজনেই মাদরাসায় শিক্ষকতা করতাম। মেয়েটা পড়াশোনা করতে গিয়ে বিয়ে পর্যন্ত করল না। নিবন্ধন পাস করেছে। এখনো তার কোনো চাকরি হয়নি। চাকরি না হলে ভাবছি এলাকার মানুষ হাসাহাসি করবে। তাকে দেখে এখানকার মেয়েদের পড়াশোনা করাতে চাইবে না পরিবার। মানুষ এখনই বলে, এত পড়াশোনা করে লাভটা কী হলো? ভালো বিয়ে, ভালো চাকরি কিছুই তো হলো না।

নরসিংদী জেলা স্কুল অ্যান্ড কলেজ শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. মশিউর রহমান মৃধা বলেন, শিক্ষক হওয়ার জন্য সরকারি শিক্ষকই হতে হবে, ব্যাপারটা মোটেও এমন নয়। সরকারি-বেসরকারি যেখানেই হোক, একজন শিক্ষক সর্বদাই সম্মানিত। জনি যদি আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন, আমরা তার বেসরকারি শিক্ষকতার ব্যবস্থা করে দেব।

নরসিংদী জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা গৌতম চন্দ্র মিত্র বলেন, বিষয়টি এনটিআরসিএর নিয়ন্ত্রণাধীন। ২০০৫ সালে এনটিআরসিএ গঠিত হয়, তখন তারা শুধু পরীক্ষা নিত। সেটার ভিত্তিতে স্কুল বা কলেজের ম্যানেজিং কমিটি নিয়োগ দিত। ২০১৩ সাল থেকে সরাসরি এনটিআরসিএর মাধ্যমে শূন্যপদ দেখে নিয়োগ দেওয়া হয়।

তিনি আরও বলেন, মেধাতালিকা বা নম্বরের ওপর ভিত্তি করে নিয়োগপ্রক্রিয়া চলছে। এখানে যোগ্যতার ভিত্তিতে পর্যায়ক্রমে সুপারিশপ্রাপ্ত হবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করছি। তবে এ ক্ষেত্রে ধৈর্য ধরতে হবে।

সিলেটভিউ২৪ডটকম /ডেস্ক/জিএসি-০৪


সূত্র : ঢাকা পোস্ট