বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘সরকারের প্রছন্ন মদদে ও তাদের পূর্ণ সহযোগিতায় দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। তাদের নিজেদের সিন্ডিকেটরাই দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির জন্য দায়ী।’

এ জন্য বাণিজ্যমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করেছেন ফখরুল। তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকার দেশকে একটি সম্পূর্ণ ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করছে। তাদের সর্বক্ষেত্রে ব্যর্থতা, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, টাকা-পয়সা লুট, অর্থনীতিকে ধ্বংস করে দেওয়ার কারণে কালবিলম্ব না করে অচিরেই পতদ্যাগ করা উচিত। এতে দেশের মঙ্গল হবে, জনগণও স্বস্তি পাবে।’


শুক্রবার বিকালে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার জগ্ননাথপুর ইউনিয়নের খাগড়াবাড়ি এলাকায় ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় সহিংসতায় নিহত ও আহতদের পরিবারের মাঝে আর্থিক সহায়তা প্রদান শেষে বিএনপি মহাসচিব সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন। 

মির্জা ফখরুল জোর দিয়ে বলেন, ‘শুধু আভাস নয়, বাংলাদেশ শ্রীলংকার মতো পরিস্থিতি হতে বাধ্য। কারণ হচ্ছে, একইভাবে এখানকার অর্থনীতি ধ্বংস করা হয়েছে, এখানে ঋণ এত বেশি গ্রহণ করা হয়েছে যে, ইতোমধ্যে ঋণের বোঝা জনপ্রতি ৪৭২ ডলার করে পড়েছে। ওখানকার মতো পরিস্থিতি এখানেও দেখা দেবে। মুদ্রাস্ফীতি এত বাড়বে যে, অর্থনীতি ধ্বংস হয়ে যাবে।’

তিনি বলেন, ‘এটা আমার নির্বাচনী এলাকা। এখানে গত ১৪ সালের ৫ জানুয়ারি যে একদলীয় নির্বাচন হয়েছিল, সেখানে সাধারণ মানুষ প্রতিরোধ গড়ে তোলে। এ সময় পুলিশের গুলিতে ২ জন নিহত হয়। আমরা প্রতি বছরই চেষ্টা করি এসব পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর জন্য। এ হত্যাযজ্ঞ প্রমাণ করে যে, সরকার সম্পূর্ণ বলপ্রয়োগ করে এদেশের নির্বাচন ব্যবস্থাকে নিজের মতো করে নিতে চায়।’

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘২০১৪ সালের নির্বাচনে কী হয়েছে আপনারা তা জানেন। ১৫৪ জনকে তারা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত করেছে। একইসঙ্গে সাধারণ ভোটাররা ভোটকেন্দ্রে যায়নি, তারা নিজেরাই ভোট দিয়ে নির্বাচিত হয়। আজকে এ পরিবারগুলোকে আর্থিকভাবে সহযোগিতা করে শহিদদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি এবং তাদের প্রতি আমরা শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করছি। ওই সময় যারা এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছিল না, তাদের বিরুদ্ধেও একাধিক মামলা দেওয়া হয়েছে। আমরা সব সময় একটি কথা গুরুত্বের সঙ্গে বলে আসছি, নির্বাচন হতে হবে জনগণের ভোট প্রদানের মধ্য দিয়ে। তারা যাতে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে সে সুযোগ করে দিতে হবে। এ কারণে অতীতের ঘটনা থেকে আমরা দেখেছি যে, নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া নির্বাচন কখনো সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।’

তিনি বলেন, ‘সে কারণে এবারো দৃঢ়তার সঙ্গে বলতে চাই- এই সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে। নিরপেক্ষ সরকার গঠন ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠনের মাধ্যমে নির্বাচন করতে হবে। যাতে করে প্রকৃতপক্ষে জনগণের প্র্রতিনিধিরাই নির্বাচিত হন, এটাই হচ্ছে জনগণের দাবি। এটাই হচ্ছে, এদেশের গণতন্ত্র উত্তরণের একমাত্র পথ।’ 

মির্জা ফখরুল আরও বলেন, ‘সরকারের বিরুদ্ধে দেশে আন্দোলন শুরু হয়েছে। সব রাজনৈতিক দলগুলো তাদের কর্মসূচি দিচ্ছে। আজকে যুগপৎ আন্দোলন তৈরির সময় এসেছে। ১৯৯৬ সালে সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কথা উল্লেখ ছিল না। কিন্তু জনগণের চাহিদা অনুযায়ী সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া সংবিধানে তা সন্নিবেশিত করেছিলেন। তিনি জনগণের পক্ষের মানুষ। ফখরুল বলেন, জনগণ চায় নিরপেক্ষ নির্বাচন। তাই জনগণের দাবি অনুযায়ী তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে। না হলে দেশে বিপরীত পরিস্থিতি দেখা দিতে পারে।’

এ সময় উপস্থিত ছিলেন- জেলা বিএনপির সভাপতি তৈমুর রহমান, সহসভাপতি আল আমিন আলম, সাধারণ সম্পাদক ও মির্জা ফখরুলের ছোটভাই মির্জা ফয়সল আমিন, অর্থ বিষয়ক সম্পাদক শরিফুল ইসলাম, উপজেলা বিএনপির নেতা আব্দুল হামিদ, জগন্নাথপুর ইউপি চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান লিটনসহ বিএনপি ও দলটির সহযোগী সংগঠনের বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মী। 

সিলেটভিউ২৪ডটকম/ডেস্ক/জিএসি-০৩


সূত্র : যুগান্তর