যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে বর্ণাঢ্য আয়োজন ও নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে উদযাপন করা হলো বৈশাখী আয়োজন। 

 


সোমবার (১৬ মে) ব্রংকসের ১৩১৫ সেন্ট হেলেন্স চার্চে মনোজ্ঞ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে সাজুফতা সাহিত্য ক্লাব।

 

গ্রামবাংলার প্রাচীন ঐতিহ্যে ভরপুর বায়োস্কোপ দিয়ে শুরু হয় জুলি রহমানের বৈশাখী আয়োজনের শোভাযাত্রা। এ যেন এক অন্যরকমের আবেদন, অন্যরকমের আবহ। কবি জুলি তাঁর বৈশাখের কাব্যকথায় বায়োস্কোপের ভেতর দিয়ে ছুটলেন গ্রাম থেকে শহর, ঢাকা থেকে সুদূর আমেরিকা। এই বায়োস্কোপ নির্মাণ কাজে সিদ্ধহস্ত গীতিকবি বদরুজ্জামান রুহেল।

 

শোভাযাত্রায় অংশ নেন নিউইয়র্কের কমিউনিটি অ্যাক্টিভিস্ট ও গুনিজন মাকসুদা আহমেদ, আভার প্রেসিডেনিট মেহের চৌধুরী, শিল্পী নাসরীন চৌধুরী ভারতি রায়, তিমির রায়, গুরু ফটিক শুধাংশু মন্ডল, বাচিক শিল্পী ফিরোজা পারভীন পলি, কবি ও শিল্পী কামরুন নাহার খানম রীতা, বাচিক শিল্পী মো. ইলিয়াস হোসেন, ব্রংকস সোসাইটির প্রেসিডেন্ট জাকির সামাদ, ইমরান আলী, নজরুল গবেষক ও কলামিস্ট আনোয়ার খোন্দকার, কবি ও লেখক আহমদ জামিল, কবি শরিফুজ্জামান পল, শিল্পী কিশলয় এবং আগত আরও অতিথিবৃন্দ।


বিরাট অডিটেরিয়াম জুড়ে দেড় শতাধিকা লোকের অংশগ্রহণে কবি জুলি রহমান রচিত বায়োস্কপে আনন্দের ঢলে পরিণত হয়। এতে তবলা সংগত করেন নিউইয়র্কের প্রথম নারী তবলা বাদক চামেলি গোমেজ। সামনের সারিতে গীতিকার রুহেলের মাথায় বায়োস্কোপ মিছিলটি মঞ্চ পর্যন্ত উঠে আসে। সাথে ছিল সারি সারি দর্শরকের মুর্হুমুহু করতালি। পাশে থাকেন মিলেনিয়াম টিভির প্রেসিডেন্ট তফাদার নূর ও ইউএসএর সাখাওয়াত সেলিম। রেজা আব্দুল্লাহর সাবলীল সঞ্চালনা ও বাক্য চয়নে অনুষ্ঠানটি আরও প্রাণচাঞ্চল্য হয়ে উঠে।

 

বৈশাখের আয়োজন শুরুর পূর্বে বক্তব্য রাখেন কমিউনিটি অ্যাক্টিভিটস আইনজ্ঞ এন মজুমদারের বক্তব্য ও মিলেনিয়াম টিভির স্বত্বাধিকারী তফাদার নূর ও প্রখ্যাত মিডিয়া ব্যাক্তিত্ব বেলাল বেগ।

জাতীয় সংগীতের পর একে একে বৈশাখের গান, কবিতা, নাচ, গীতিআলেখ্য, আলোচনা ও স্বরচিত কবিতা পাঠ করা হয়।

 

কবি জুলি রহমান রচিত ও পরিচালিত বায়োস্কোপ ও গীতি আলেখ্যে নৃত্যে অংশগ্রহণ করেন নিউইয়র্কের সুনামধন্য নৃত্যশিল্পী ও এনডিএ নাচের স্কুলের শিক্ষক ডা. নীলা জেরিন, মায়া এঞ্জেলিকা, সাদিয়া আফরীন তন্বী ও লাকী ইসলাম। সংগীত পরিবেশন করেন ননী মল্লিক, কবিকন্যা সাদিয়া আফরিন তন্বী, সাবিহা তারিন এবং কবিতা পাঠ করেন এম এ সাদেক ও কবি জুলি রহমান। এর সংগীতায়োজনে ছিলেন কলকাতার বিখ্যাত শিল্পী শান্তনু ভৌমিক।

 

সাজুফতা সাহিত্য ক্লাবে রবীন্দ্র জন্মজয়ন্তী অতিক্রম হলো কিছুদিন আগে। এ অনুষ্ঠানেও ছিল রবীন্দ্র আয়োজন। রবীন্দ্রনাথ মাথার মুকুট, নজরুল গলার হার। তাই পরিধান করেই সংস্কৃত অঙ্গনে বিচরণ করা- বলেন কবি জুলি রহমান।

 

‘যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চলো রে’ গানটি দুটো ভার্সনে পরিবেশন করা হয়। ইংরেজিতে কন্ঠ দেন কবিকন্যা সাবিহা তারিন ও বাংলায় শিল্পী নাসরীন চৌধুরী, সাদিয়া আফরীন তন্বী, ননী মল্লিক, ভারতী রায়। গানটির সঙ্গে নৃত্য পরিবেশন করেন কবি জুলি রহমান ও নতুন প্রজন্মের নৃত্যশিল্পী মায়া এঞ্জেলিকা।

 

এরপর কবি জুলি রহমানের গান গেরুয়া মাটির পথে। এতে গেরুয়া মাটির পথে বাউলের আগমন। যিনি এক সময়কার নাম করা বিটিভির পেশাদার আর্টিস্ট বেলাল বেগ। ৮৪ বছর বয়সী একজন বেলালা বেগই পারেন এমনভাবে হৃদয়ের সমস্ত রস উগড়ে সুর ঢেলে বাউলের চিত্র ফুটিয়ে তুলতে। জুলি রহমান রচিত গানে সুর দিয়েছেন কলকাতার বিখ্যাত শিল্পী শান্তনু ভৌমিক। বৈশাখের গানে নৃত্য করেন কবি কন্যা সাদিযা আফরীন তন্বী ও লাকী ইসলাম। 

 


অনুষ্ঠানে কাব্য আলোচনায় থাকেন বাচিক শিল্পী ও সাহিত্য সমালোচক মোঃ ইলিয়াস হোসেন, কবি ও প্রাবন্ধিক এবি এম সালেহ উদ্দীন, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও টিভি ব্যক্তিত্ব ফেরদৌস নাজমী, বীর মুক্তিযোদ্ধা কাউসার, কলামিস্ট রাজিয়া নাজমী, আভার প্রেসিডেন্ট ও বিজনেস ওম্যান তিতাস মাল্টি সার্ভিসের মেহের চৌধুরী, নাট্যজন ইয়াকুব আলী মিঠু, কবি ও লেখক আহমদ জামিল, নজরুল গবেষক ও কলামিস্ট  খোন্দকার আনোয়ার, ডা. হাসান প্রমুখ।

 

স্বরচিত কবিতা পাঠ করেন কবি শরীফুজ্জামান পল, বদরুজ্জামান রুহেল, কামরুন নাহার খানম, শুধাংশু মন্ডল, মাধুরী রায়, রওশন হাসান।

 

প্রায় দুইশত লোকের আয়োজনের চা পর্বে চা সিঙ্গাড়ার পাশাপাশি ছিল লীনা এরশাদের হাতে বানানো মজাদার ড্রাই কেক।হ্যান্ড মেক। লিনা ইংরেজীতে ডিগ্রিধারী ও একজন আর্টিস্ট। এ পর্বে স্বাদে হাতের ছোঁয়া দেন মাকসুদা, বিপা, লিডিয়া রহমান। ছোলা, মুড়ি ও চটপটি জুড়ে দেন বিয়াইন।

 

রাতের ডিনারে ছিল ভাত, ভর্তা, ইলিশ ভাজা, করলা ভাজি, সব্জি, মোরগ, গরুর মাংস ও পায়েস। হাতের যাদু দিয়ে এসব নানাপদ সাজিয়ে তোলেন নাসরীন, রেক্সোনা, ফিরোজা, কামরুন নাহার রীতা, মাকসুদ ইতি, ফিরোজা পলি, ফিরোজা রিংকু , বিপা, কামরুন, রোয়েনা, ইভা ও শিরিন ইসলাম জোছনা ।

 

 

সিলেটভিউ২৪ডটকম/বিআর/এসডি-২২