বন্যার পানি যতোই কমছে, সিলেটে পানিবাহিত রোগব্যাধির সংক্রমণ ততোই বাড়ছে। বিশেষ করে ডায়রিয়ার প্রকোপ ক্রমেই বাড়ছে। এখন অবধি সাড়ে চারশ’ মানুষ ডায়রিয়ার আক্রান্ত হয়েছেন। বন্যা কবলিত এলাকাগুলোয় পানিবাহিত রোগ ছড়িয়ে পড়া নিয়ে শঙ্কা বাড়ছে সংশ্লিষ্টদের মধ্যে। তবে তারা বলছেন, রোগের প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।

সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ড ও সিলেট আবহাওয়া অফিস জানায়, গত ১০ মে থেকে সিলেটে ভারী বর্ষণ শুরু হয়। এর সাথে ভারত থেকে নেমে আসা ঢল যুক্ত হয়ে দেখা দেয় বন্যা। বৃষ্টি ও ঢল না থামায় সেই বন্যা ভয়াল রূপ ধারণ করে। সিলেট জেলা ও মহানগরীর সিংহভাগ এলাকা তলিয়ে যায় পানির নিচে।


পরিস্থিতির উন্নতি হতে থাকে গত ২০ মে রাত থেকে। ঢল ও বৃষ্টির বেগ কমে আসায় ধীরে ধীরে কমতে শুরু করে পানি। ২৩ মে সিলেট নগরী বানের জলমুক্ত হয়। তবে সিলেট জেলার নিম্নাঞ্চলগুলো থেকে পানি নামার গতি কম। এখনও কিছু কিছু এলাকা পানিবন্দি রয়েছে।

বন্যার পানি কমতে শুরু করার পর থেকে সিলেট জেলা ও মহানগরে পানিবাহিত রোগের প্রাদুর্ভাব শুরু হয়। সিলেট সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্র জানিয়েছে, এখন অবধি ৪৫০ জন ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন। এ ছাড়া চর্মরোগেও ভুগছেন কয়েকজন।

সিলেটের সিভিল সার্জন ডা. এস এম শাহরিয়ার বলেন, ‘বন্যার কারণে বেড়েছে পানিবাহিত রোগ। আমাদের হিসাব অনুসারে ৪৫০ জন ডায়ারিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন। এর পাশাপাশি চর্ম ও শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ রোগে কয়েকজন ভুগছেন। রোগীর সংখ্যা গোয়াইনঘাট উপজেলায় বেশি।’

সংশ্লিষ্টদের মতে, ডায়রিয়ার প্রকোপ দ্রুত বাড়ছে। গত রোববার অবধি ১১৪ জন ডায়রিয়ার রোগী ছিলেন। কিন্তু পরের তিনদিনে তা ৪৫০ জনে পৌঁছেছে।

এদিকে, বন্যা-পরবর্তী সময়ে রোগের প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে ১৪০টি এবং সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে ৩টি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে।

বিয়ানীবাজার ও গোলাপগঞ্জে সর্বোচ্চ ১৬টি করে মেডিকেল টিম রয়েছে। এ ছাড়া কানাইঘাটে ১২টি, জৈন্তাপুরে ১১টি, বিশ্বনাথে ১১টি, গোয়াইনঘাটে ১০টি, জকিগঞ্জে ১০টি, সদর উপজেলায় ১০টি, ফেঞ্চুগঞ্জে ১০টি, ওসমানীনগরে ৯টি, দক্ষিণ সুরমায় ৮টি, বালাগঞ্জে ৭টি ও কোম্পানীগঞ্জে ৭টি টিম কাজ করছে। এর বাইরে জেলা শহরের জন্য ৩টি টিম রাখা হয়েছে।

ডা. শাহরিয়ার বলছিলেন, ‘আমাদের ১৪০টি মেডিকেল টিম ইউনিয়ন থেকে শুরু করে নগরীতেও কাজ করছে। এসব টিমে চিকিৎসক, নার্সসহ স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্টরা রয়েছেন। প্লাবিত এলাকাগুলোর সবখানে যাতে স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে, সেজন্য প্রত্যেক টিমকে নির্দেশনা দেওয়া আছে।’

সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. জাহিদুল ইসলাম সুমন বলেন, ‘সিসিকের ৩টি টিম কাজ করছে। প্রয়োজন হলে আরও টিম গঠন করা হবে। মানুষ যাতে বিশুদ্ধ পানি খেতে পারে, সেজন্য পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে বিতরণ করা হয়েছে।’

এদিকে, পরিস্থিতি যদি আরও খারাপের দিকে যায়, সেই চিন্তা থেকে ডায়রিয়ায় আক্রান্তদের জন্য নগরীর শাহী ঈদগাহস্থ সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতাল প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘আমাদের পর্যাপ্ত প্রস্তুতি রয়েছে। ডায়রিয়ায় আক্রান্তদের জন্য সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতাল প্রস্তুত রাখা হয়েছে।’

সিলেটভিউ২৪ডটকম/আরআই-কে